COPD আক্রান্তদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে মাছ

উত্তরাপথঃ ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD) একটি  ফুসফুসের রোগ যা বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে চলেছে। এতে শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা সহ এবং প্রায়শই কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং অত্যধিক শ্লেষ্মা উৎপাদনের মতো উপসর্গগুলি দেখা যায়।নতুন বিশ্লেষণ অনুসারে গবেষকরা বিভিন্ন গবেষণা বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার, যেমন চর্বিযুক্ত মাছ COPD আক্রান্তদের ফুসফুসের সমস্যার বিভিন্ন উপসর্গ কমাতে সেই সাথে শ্বাস নেওয়ার সমস্যায় সাহায্য করতে পারে। হাঙ্গেরির সেমেলওয়েস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দীর্ঘস্থায়ী অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) তে আক্রান্ত কয়েক হাজার রোগীর উপর গবেষণা করেছেন। তারা ২০১৮ এবং ২০২৩ সালের মধ্যে করা তাদের গবেষণার ফলাফলগুলি নিউট্রিয়েন্ট জার্নালে প্রকাশ করেছেন। গবেষকদের পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে, বিশেষ করে, প্রোটিন, ওমেগা-3 পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, এবং শাকসবজি সিওপিডি রোগীদের উপকার করে।

সেমেলওয়েইস বিশ্ববিদ্যালয়ের পালমোনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডঃ জ্যানোস ভার্গের মতে “পশ্চিমী প্রকার থেকে ভূমধ্যসাগরীয় প্রকারে খাদ্য পরিবর্তন করা প্রয়োজন,”। জীববৈচিত্র্য ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য এই খাবারটিই সেরা বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। সেমেলওয়েস (Semmelweis) এর গবেষকরা সুপারিশ করেছেন যে লোকেদের লাল এবং প্রক্রিয়াজাত মাংসের ব্যবহার কমাতে হবে, যাতে উচ্চ মাত্রার স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। ভার্গ তার পরিবর্তে সপ্তাহে দুবার স্যামন, হেরিং এবং ম্যাকেরেলের মতো ফ্যাটি মাছ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

আমেরিকান ফুসফুস অ্যাসোসিয়েশন অনুসারে সিওপিডি-তে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শ্বাস নিতে বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়, তাই তাদের অন্যদের চেয়ে বেশি ক্যালোরির প্রয়োজন হতে পারে।এক্ষেত্রে কম কার্বোহাইড্রেট এবং বেশি চর্বি খাওয়া মানুষকে সহজে শ্বাস নিতে সাহায্য করতে পারে, কারণ শরীর কার্বোহাইড্রেট বিপাক করার সময় বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি করে।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিগহাম অ্যান্ড উইমেনস হাসপাতালের সিওপিডি ক্লিনিকের পরিচালক ডঃ ক্রেইগ হার্শ বলেছেন যে বিশেষজ্ঞরা “কিছুদিন ধরেই জানেন যে একটি স্বাস্থ্যকর, সুষম খাদ্য সিওপিডি হওয়ার ঝুঁকি কমাতে এবং চিকিৎসা উভয়ের জন্যই উপকারী।

যদিও বর্তমানে সিওপিডির(COPD) কোনো নিরাময় নেই, মাছ COPD আক্রান্তদের উপসর্গগুলি কম করতে এবং রোগীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহায়তা করার জন্য চিকিৎসার কিছু বিকল্প রয়েছে। সিওপিডি রোগীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার একটি সম্ভাব্য উপায় হল খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন। গবেষণায় দেখা গেছে যে মাছ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার সিওপিডি রোগীদের লক্ষণ এবং সামগ্রিক সুস্থতার উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

মাছ হল ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস, এতে রয়েছে প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য যা ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে। প্রদাহ সিওপিডির অগ্রগতিতে একটি মূল ভূমিকা পালন করে যা শ্বাসকষ্ট এবং কাশির মতো লক্ষণগুলিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। মাছকে তাদের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে, COPD রোগীরা তাদের ফুসফুসে প্রদাহ কমাতে এবং তাদের শ্বাসযন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করতে সক্ষম হতে পারে।

মাছ ছাড়াও, অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলিও সিওপিডি রোগীদের সহায়ক হতে পারে। ইউরোপীয় রেসপিরেটরি জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে সিওপিডি রোগীরা যারা মাছ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করেছেন তাদের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি হয়েছে, যার মধ্যে শ্বাসকষ্ট এবং ক্লান্তি অন্যতম। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি আমাদের দেহে ফ্রি র‌্যাডিক্যাল নামক ক্ষতিকারক অণুগুলিকে কম করতে সাহায্য করে, যা ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে এবং COPD উপসর্গগুলিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার, যেমন ফল, শাকসবজি এবং বাদাম, ফুসফুসকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।

বিঃ দ্রঃ-এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে খাদ্যতালিকাগত হস্তক্ষেপগুলি সিওপিডি রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে, তবে এটিকে চিকিৎসার বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা উচিত নয়।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন

উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি  তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন

সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top