

প্রীতি গুপ্তাঃ রাম নবমী হল ভগবান রামের জন্ম উদযাপন । এটি হিন্দু ক্যালেন্ডারে চৈত্র মাসের নবম দিনে পড়ে, যা সাধারণত মার্চ বা এপ্রিল মাসে হয়। এই উৎসবটি ভগবান রামের ভক্তদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্য বহন করে । ভারত এবং বিশ্বের বিভিন্ন অংশে অত্যন্ত উৎসাহ এবং শ্রদ্ধার সাথে রাম নবমী পালন করা হয়। হিন্দু ধর্মে রাম নবমীর গুরুত্ব অপরিসীম। হিন্দু ধর্মীয় শাস্ত্র অনুসারে, যে ভক্ত এই দিনে পূর্ণ ভক্তি ও আচার-অনুষ্ঠানের সাথে মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রী রামের পূজা করেন, তার জীবনে সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তি আসে। এই দিনটিতে অনেক জায়গায় জমকালো অনুষ্ঠান এবং মেলার আয়োজন করা হয়।
রাম নবমী উদযাপনের মূলে রয়েছে রামায়ণের মহাকাব্যিক কাহিনী, যা ভগবান রামের জীবনের গল্প এবং রাখ রাজা রাবণের বিরুদ্ধে তাঁর যুদ্ধের গল্প বলে। ভগবান রাম, ভগবান বিষ্ণুর অবতার হিসাবে বিবেচিত, ধার্মিকতা, সত্য এবং গুণের মূর্ত প্রতীক বলে মনে করা হয়। তার জীবন এবং শিক্ষা লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য একটি পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে, যা নৈতিকতা, কর্তব্য এবং ভক্তি সম্পর্কে আমাদের মূল্যবান জ্ঞান দান করে।
চৈত্র শুক্ল নবমীর দিনে কৌশল্যা মাতা ভগবান রামের জন্ম দেন, কৈকেয়ী ভরত এবং সুমিত্রা লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্নেরও জন্ম দেন। শাস্ত্রে বলা আছে যে, ভগবান রামের জন্মের সময় সূর্য ও পাঁচটি গ্রহের শুভ দৃষ্টি ছিল এবং এই বিশেষ সময়ের মধ্যে রাজা দশরথ ও মাতা কৌশল্যার পুত্রের জন্ম হয়েছিল।বিশ্বাস অনুসারে, যে ভক্তরা রাম নবমীর দিন পূর্ণ আচার-অনুষ্ঠানের সাথে দেবী দুর্গা এবং শ্রী রামের পূজা করেন তারা কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ করেন এবং তারা তাদের জীবনে সমস্ত ঝামেলা থেকে মুক্তি পান। নবরাত্রিও শেষ হয় রাম নবমীর মাধ্যমে। এই কারণে এই দিনটিতে অনেকেই মেয়েদের পূজা করার মাধ্যমে নারীশক্তি বা শ্রীরামের আরাধ্য মা দুর্গার পূজা করে থাকেন।
এ ছাড়াও বহু ভক্ত রাম নবমীর দিনে, উপবাস করেন, প্রার্থনা করেন এবং রামায়ণের স্তোত্র ও শ্লোক পাঠ করেন। ভগবান রামকে উৎসর্গীকৃত মন্দিরগুলি ফুল এবং বিভিন্ন সাজ সজ্জায় সজ্জিত করা হয়। দেবতাকে সম্মান জানাতে অনেক ভক্ত মিছিল করে ভজন ও কীর্তন পরিবেশন করে ভগবান রামের জন্মদিনটিকে স্মরণীয় করে তোলার চেষ্টা করেন।
রাম নবমী কৃষি সম্প্রদায়ের জন্যও একটি বিশেষ তাৎপর্য রাখে, কারণ এটি বসন্ত ঋতুর শেষ এবং ফসল কাটার ঋতুর সূচনা করে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে এই শুভ দিনে ভগবান রামের উপাসনা করলে সমৃদ্ধি, প্রাচুর্য এবং সমস্ত প্রচেষ্টায় সাফল্য আসে।
বর্তমানে রাম নবমী উদযাপন শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় পালন নয়, এটির ব্যাপকভাবে রাজনৈতিক করণ হয়ে গেছে।বিভিন্ন সামাজিক বা ধর্মীয় সংগঠনের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলিও নিজেদের মত করে রামনবমী পালন করে। আজ রাম যতটা ধার্মিক ঠিক ততটাই রাজনৈতিক।
আরও পড়ুন
দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?
উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে। বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী? আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত? পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না? এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন
সম্পাদকীয়- রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র
সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন
Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে
বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন
PAN-Aadhar link: কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে নিষ্ক্রিয় করেছে
উত্তরাপথ : আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link)করার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ড নিষ্ক্রিয় করেছে৷ আপনি যদি এখনও প্যান কার্ডের সাথে আধার কার্ড লিঙ্ক না করে থাকেন, তাহলে আপনি সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপের আওতায় এসেছেন। আপনি যদি আপনার আধার কার্ডকে প্যানের সাথে লিঙ্ক করতে চান তবে আপনি জরিমানা দিয়ে এটি সক্রিয় করতে পারেন। কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে আধারের সাথে লিঙ্ক না করার কারণে নিষ্ক্রিয় করেছে। একটি আরটিআই-এর জবাবে, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস জানিয়েছে যে আধার কার্ডের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link) করার সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হয়েছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড লিঙ্ক করেননি তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশে ৭০ কোটি প্যান কার্ড বর্তমানে ভারতে প্যান কার্ডের সংখ্যা ৭০.২ কোটিতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৭.২৫ কোটি মানুষ আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক করেছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন