লেটুস পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং সর্বাধিক উপকারের জন্য কীভাবে এটিকে সেবন করবেন

উত্তরাপথঃ লেটুস(Lettuce) বিশ্বব্যাপী খাওয়া একটি জনপ্রিয় শাক, যা সালাদকে বেস দেওয়ার জন্য বিখ্যাত।এটি মূলত চার ধরনের হয় এবং তাদের প্রতিটি ধরনের বৈজ্ঞানিক নাম Lactuca sativa । একজন ব্যক্তি যে ধরনের লেটুস খান তার উপর নির্ভর করে স্বাস্থ্যের সুবিধা পরিবর্তিত হয়।লেটুসের এই চারটি ধরন হল হেড লেটুস (ক্যাপিটাটা),পাতা লেটুস (ক্রিসপা),রোমাইন লেটুস (লঙ্গিফোলিয়া),সেলটুস লেটুস (আগস্টানা)। সাধারণত আমাদের দেশের সবজির দোকানে হেড লেটুস ও রোমাইন লেটুস সিজার সালাদের প্রধান উপাদান হিসেবে বিক্রি হয়।

এখন প্রশ্ন হতে পারে কেন আমরা লেটুস পাতা খাই?

এটি বিটা ক্যারোটিন (ভিটামিন এ) এর একটি চমৎকার উৎস যা সুস্থ ত্বক, হাড় এবং চোখের জন্য প্রয়োজনীয়।এছাড়াও এটি হল ফোলেটের একটি ন্যায্য উৎস, যা সুস্থ কোষের জন্য এবং গর্ভাবস্থায় শিশুদের সুস্থ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন যাতে নিউরাল টিউব ত্রুটি প্রতিরোধ করা যায়।এর কম-ক্যালোরি সামগ্রী থেকে এর উচ্চ ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্তর পর্যন্ত, লেটুস পাতা একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যের একটি মূল্যবান সংযোজন।

লেটুস পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা

পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ: এই পাতা ভিটামিন কে, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ফোলেট এবং ম্যাঙ্গানিজের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টির একটি চমৎকার উৎস। এই পুষ্টিগুলি সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কম ক্যালোরি: লেটুস পাতা একটি কম ক্যালোরিযুক্ত সবজি, যারা তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চায় তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ পছন্দ। এর উচ্চ জলের উপাদান আপনাকে হাইড্রেটেড রাখতে এবং পূর্ণ বোধ করতে সহায়তা করে।

প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: এই পাতায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন বিটা-ক্যারোটিন এবং ভিটামিন সি, যা শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি হ্রাসের সাথে যুক্ত করা হয়েছে।

ফাইবারের ভালো উৎস: ফাইবার পাচক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, এবং এই পাতা দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় উভয় ফাইবারের একটি ভাল উৎস।এই পাতা খাওয়া নিয়মিত অন্ত্রের গতি বাড়াতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে।

চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে: লেটুস পাতায় থাকা ভিটামিন এ চোখকে সুস্থ রাখতে এবং বয়সজনিত ম্যাকুলার অবক্ষয় রোধ করতে উপকারী।

সর্বাধিক উপকারের জন্য কীভাবে লেটুস পাতা গ্রহণ করবেন

তাজা, জৈব লেটুস চয়ন করুন: এই পাতা থেকে আপনি সর্বাধিক পুষ্টি পাচ্ছেন তা নিশ্চিত করতে, তাজা, জৈব জাতগুলি বেছে নিন। শুকনো বা হলুদ পাতাগুলি এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলি তাদের কিছু পুষ্টির মান হারিয়েছে।

সালাদ এবং মোড়কে ব্যবহার করুন: পাতাটিকে সাধারণত সালাদ এবং মোড়কে ব্যবহার করা হয়, এটি এই সবজিটিকে আপনার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার একটি সহজ এবং সুস্বাদু উপায় করে তোলে। খাওয়ার আগে পাতা ভালো করে ধুয়ে নিতে ভুলবেন না।

স্মুদিতে যোগ করুন: অতিরিক্ত পুষ্টির জন্য এরর সবুজ পাতাকে স্মুদিতে ব্লেন্ড করুন। এর হালকা গন্ধ এটিকে একটি বহুমুখী উপাদান করে তোলে যা সহজেই অন্যান্য ফল এবং সবজির সাথে মিলিত হতে পারে।

ভাপ বা ভাজুন: এই পাতা প্রায়শই কাঁচা খাওয়া হয়, এটি একটি সাইড ডিশ হিসাবে বাষ্প বা ভাজতে পারে। এই রান্নার পদ্ধতি পাতাকে নরম করতে এবং তাদের স্বাদ বাড়াতে সাহায্য করে।

সঠিকভাবে সংরক্ষণ করুন: এই পাতার শেলফ লাইফ দীর্ঘায়িত করতে, পাতাগুলিকে খাস্তা এবং তাজা রাখতে একটি ভেজা কাগজের তোয়ালে দিয়ে একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন।

লেটুস পাতা একটি পুষ্টি যুক্ত সবজি যা অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে। এই বহুমুখী সবজিটিকে বিভিন্ন উপায়ে আপনার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে, আপনি এর পুষ্টিগুণকে সর্বোচ্চ করতে পারেন এবং এর সুস্বাদু স্বাদ উপভোগ করতে পারেন। সালাদে কাঁচা খাওয়া হোক বা হাল্কা নাড়াচাড়া করে রান্না করা , লেটুস পাতা স্বাস্থ্যকর খাওয়ার পরিকল্পনার একটি মূল্যবান সংযোজন।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?

উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন  দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI  এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে।   বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।  নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা  ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী?  আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত?  পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না?  এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন

Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে  বিতর্কে এ আর রহমান

উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top