

উত্তরাপথ;- আয়ুর্বেদিক ঔষধ,আমাদের দেশের নিরাময়ের একটি প্রাচীন পদ্ধতি।আয়ুর্বেদিক ঔষধ প্রাকৃতিক উপায়ে রোগ নিরাময়ের জন্য বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।আয়ুর্বেদিক ভেষজ গুলি বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।কিন্তু সম্প্রতি এক কানাডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন জার্নাল (CMAJ ) এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে আয়ুর্বেদিক ওষুধে-র মধ্যে সীসার বিষক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে ।
রিপোর্টে বলা হয়েছে একজন ৩৯ বছর বয়সী এক মহিলা, পেটে ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি বমি ভাব প্রভৃতি উপসর্গ নিয়ে ৬ সপ্তাহে ৩ বার জরুরি বিভাগে যান।শেষবার তাকে রক্তাল্পতা এবং সম্ভাব্য গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রক্তপাতের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অসংখ্য,চিকিৎসার পর ডাক্তাররা যখন এই সমস্যার কারণ খুঁজতে ব্যর্থ হন ,সেই সময় একটি ফলো-আপ ভিজিটে জানা যায়, সেই মহিলা তার,বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার জন্য এক বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতিদিন আয়ুর্বেদিক ওষুধ সেবন করেছেন । তার রক্তের সীসার মাত্রা ছিল ৫৫ µg/dL, স্বাভাবিক মাত্রা ২ µg/dL-এর চেয়ে কম।এরপর রোগী আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা গ্রহণ বন্ধ করে চিলেশন থেরাপি শুরু করেন ।ধীরে ধীরে সেই মহিলার রক্তের সীসার মাত্রা হ্রাস পায় এবং তার লক্ষণগুলিরও সমাধান হয়ে যায়।
এরপর মেডিকেল টিম পাবলিক হেলথ অন্টারিও (PHO) এর সাথে যোগাযোগ করে, যারা রোগীর দেওয়া ১৭টি ভিন্ন পিলের নমুনা পরীক্ষা করে এবং পরীক্ষায় বেশিরভাগ বড়িতে উচ্চ মাত্রার সীসার সন্ধান পান গবেষকরা।এরপর PHO স্থানীয় জনস্বাস্থ্য ইউনিট, টরন্টো পাবলিক হেলথ এবং হেলথ কানাডাকে অভিযুক্ত করা হয়,এবং আয়ুর্বেদিক ক্লিনিকের বিরুদ্ধে একটি যৌথ তদন্ত করা হয় ।তদন্তে,প্রাকৃতিক স্বাস্থ্য পণ্য বিধিমালা না মেনে চলার কারণে শত শত বড়ি আটক করা হয়।হেলথ কানাডা এবং টরন্টো পাবলিক হেলথ উভয়ই জনগণকে সতর্ক করেন যে এই নির্দিষ্ট আয়ুর্বেদিক ক্লিনিকের পণ্যগুলিকে ব্যবহার না করার জন্য।
সীসা একটি ভারী ধাতু ।এটি উচ্চ মাত্রায় শরীরে প্রবেশ করলে বিষক্রিয়া ঘটে যা আমাদের গুরুতর স্বাস্থ্যের সমস্যার তৈরি করে বিশেষ করে শিশু এবং গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে। আয়ুর্বেদিক ঔষধে সীসার উপস্থিতির একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে সাধারণত সীসা-ভিত্তিক পেইন্ট এবং দূষিত জলের মতো পরিবেশগত কারণগুলি জড়িত,বলে মনে করা হচ্ছে।এছাড়া কিছু কিছু ঐতিহ্যগত ফর্মুলেশনে সীসা-ধারণকারী উপাদানগুলির ব্যবহারকে দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। এই সীসা-বোঝাই ওষুধগুলি ভোক্তাদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি তৈরি করে, বিশেষ করে যারা তাদের স্বাস্থ্যের অবস্থার জন্য আয়ুর্বেদিক প্রতিকারের উপর নির্ভর করে।
সীসা বিষক্রিয়ায় বিভিন্ন গুরুতর স্বাস্থ্যগত সমস্যা হতে পারে, যার মধ্যে প্রজনন সমস্যা এবং স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি অন্যতম।দীর্ঘদিন সীসা এক টানা শরীরে প্রবেশ করার ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি, কিডনির ক্ষতি এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। অতএব, আয়ুর্বেদিক ওষুধে সীসা দূষণের সাথে সম্পর্কিত সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্য সংস্থাগুলি এই সমস্যাটি সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারতে, আয়ুষ মন্ত্রক (আয়ুর্বেদ, যোগ ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা, ইউনানি, সিদ্ধা এবং হোমিওপ্যাথি) আয়ুর্বেদিক ওষুধের নিরাপত্তা এবং গুণমান নিশ্চিত করার জন্য কঠোর নির্দেশিকা প্রয়োগ করেছে। এই পণ্যগুলিতে সীসা সহ ভারী ধাতুগুলির উপস্থিতি নিরীক্ষণের জন্য পরীক্ষাগার স্থাপন করা হয়েছে।
ভোক্তাদেরও সম্ভাব্য সীসার বিষক্রিয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। আয়ুর্বেদিক ওষুধ কেনার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা এবং মানসম্মত ব্র্যান্ডগুলি বেছে নেওয়া এক্ষেত্রে অপরিহার্য। লেবেল পড়া এবং সার্টিফিকেশন পরীক্ষা করা পণ্যের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারে।এক্ষেত্রে একজন উপযুক্ত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে প্রতিকার নির্বাচন করা উচিত।
আয়ুর্বেদিক ওষুধে-র একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে এবং এটি অনেক ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর।তবে আয়ুর্বেদিক ওষুধে সীসা দূষণের সমস্যাটি সমাধানের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং নির্মাতাদের অবশ্যই মান নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বর্ধিত সচেতনতা এবং কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ,আয়ুর্বেদিক ওষুধের উপর মানুষের আস্থা পুনরায় ফিরিয়ে আনতে পারে ।সেইসাথে আজও যারা রোগ নিরাময়ের জন্য আয়ুর্বেদিক ওষুধের উপর নির্ভর করেন তাদের জন্য এই উদ্যোগ নিরাপদ এবং কার্যকর নিরাময়ের বিকল্পগুলি প্রদান করতে পারে।
আরও পড়ুন
দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?
উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে। বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী? আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত? পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না? এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন
Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে
বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন
NASA Carbon Emission: পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে
উত্তরাপথঃ কার্বন নির্গমন (NASA Carbon Emission) সম্পর্কে নাসার সর্বশেষ আবিষ্কার পৃথিবীর জন্য এক সতর্কতা সংকেত। মহাকাশ সংস্থার মতে, পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে, যার ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। NASA এর এই আবিষ্কারটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে দেখা যেতে পারে, সেইসাথে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেছে।নাসার সর্বশেষ গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে পৃথিবীর মহাসাগর এবং ভূমি-ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্র আগের চেয়ে কম কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে গত এক দশকে ভূমি এবং মহাসাগর দ্বারা শোষিত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৫% হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন