মহিলাদের ঘুমের সমস্যা তাদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে

উত্তরাপথঃ বর্তমানে ঘুমের সমস্যা বিশ্বব্যাপী মানুষের এক সাধারণ সমস্যা। সম্প্রতি হাইপারটেনশন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে যে মহিলাদের রাতে পর্যাপ্ত ঘুম হয় না অর্থাৎ তারা সাত থেকে আট ঘণ্টার কম ঘুমান তাদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। গবেষকরা প্রায় ১৬ বছর ধরে ৬৬,০০০ মহিলাদের উপর অনিদ্রার লক্ষণ এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকির মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক প্রকাশ করেছে।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিগহাম অ্যান্ড উইমেন’স হসপিটালের দলটি আরও দেখেছে যে সব মহিলাদের ঘুমানোর সমস্যা রয়েছে তাদের বিএমআই বেশি, কম শারীরিক পরিশ্রম এবং খারাপ খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান এবং অ্যালকোহল পান  খারাপ ঘুমের জন্য দায়ী । গবেষকদের দ্বারা করা সমীক্ষার এই ফলাফলগুলি উচ্চ রক্তচাপ বাড়ানোর জন্য একটি সম্ভাব্য  কারণ হিসাবে মহিলাদের ঘুমের সমস্যাগুলিকে সনাক্তকরণ এবং সমাধান করার গুরুত্বের উপর জোর দেয়।

গবেষকদের দল গবেষণার জন্য, হসপিটাল নেটওয়ার্ক মেডিসিনের চ্যানিং বিভাগের ২৫  থেকে ৪২ বছর বয়সী ৬৬,১১২ জন মহিলাকে, পর্যবেক্ষণ করেন ,যাদের সবার উচ্চ রক্তচাপ ছিল না।গবেষক দলটি এই সমস্ত মহিলাদের বয়স, জাতি, বডি মাস ইনডেক্স (BMI), ডায়েট, লাইফস্টাইল, শারীরিক কার্যকলাপ, স্লিপ অ্যাপনিয়ার ইতিহাস এবং উচ্চ রক্তচাপের পারিবারিক ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহ করেন।এরপর দলটি ঘুমের অসুবিধার কারণগুলি সনাক্ত করেন।

 গবেষণায় অনিদ্রার লক্ষণ এবং মহিলাদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে একটি স্পষ্ট যোগসূত্র পাওয়া গেছে। যে সমস্ত অংশগ্রহণকারীরা ঘুমের সমস্যা অনুভব করেছেন, যেমন ঘুম দেরিতে আসা,টানা ঘুম না হওয়া, বা ভোরবেলা ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া, তাদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি যাদের অনিদ্রার লক্ষণ নেই তাদের তুলনায়।

 ষোল বছরের অধ্যয়নের সময়কাল অনিদ্রার লক্ষণগুলির দীর্ঘস্থায়ী প্রকৃতি এবং উচ্চ রক্তচাপের দীর্ঘমেয়াদী বিকাশে অবদান রাখার সম্ভাবনাকে তুলেধরে। একটি বর্ধিত সময়ের মধ্যে অংশগ্রহণকারীদের পরীক্ষা করে, গবেষকরা ক্রমাগত ঘুমের অসুবিধা এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকির মধ্যে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম হন।

 এই সমস্যার সমাধানে চিকিৎসা পেশাদারদের ঘুমের গুণমান এবং অনিদ্রার কারণগুলির মূল্যায়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত । প্রাথমিকভাবে ঘুমের সমস্যাগুলি সনাক্ত করা এবং সমাধান করা উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য কার্ডিওভাসকুলার জটিলতার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

 স্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যাসকে উৎসাহিত করা এবং লাইফস্টাইল পরিবর্তন হাইপারটেনশনের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে। নিয়মিত ঘুমের রুটিন, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট কৌশল এবং শারীরিক ক্রিয়াকলাপের অনুশীলন করা ঘুমের গুণমান এবং সামগ্রিক কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

 ঘুমের ওষুধ, কার্ডিওলজি এবং প্রাথমিক যত্নে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের  মধ্যে সহযোগিতা অপরিহার্য। একটি সমন্বিত পদ্ধতি যা ঘুমের ব্যাধি সহ মহিলাদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ  নিয়ন্ত্রনে রাখতে কার্যকর বিকল্প হতে পারে ।সেই সাথে অনিদ্রার লক্ষণ, ঘুমের স্বাস্থ্য এবং উচ্চ রক্তচাপের মধ্যে সম্পর্ক সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রচারাভিযান মহিলাদের ঘুমের সমস্যাগুলির সাথে সম্পর্কিত সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে শিক্ষিত করতে পারে এবং তাদের উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণের জন্য উৎসাহিত করতে পারে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন

উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি  তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top