এই প্রথম চাঁদের মাটিতে জলের প্রমাণ দিলেন বিজ্ঞানীরা

উত্তরাপথঃচাঁদের মাটিতে জল আছে বলে জানা গেছে। চীনের বিজ্ঞানীরা ChangE5 মিশনের অধীনে চাঁদ থেকে কিছু মাটি এনেছিলেন।সেই মাটির মধ্যে জলের কণা পাওয়া গেছে। এই প্রথম কোনো দেশ চাঁদের মাটিতে জলের প্রমাণ এমন দৃঢ় প্রমাণ দিয়েছে। এতে চাঁদ সম্পর্কে আমাদের অনেক না জানা তথ্যের বোধগম্যতা বাড়তে পারে, সেইসাথে চাঁদে প্রাণের সম্ভাবনা আছে কি না তাও জানা যাবে।

চীন ২০২০ সালে ChangE5 মিশন শুরু করে। সে সময় উদ্দেশ্য ছিল চাঁদ থেকে মাটি আনা, যাতে এর কণা পরীক্ষা করা যায়। এখন পর্যন্ত বলা হচ্ছিল চাঁদের পৃষ্ঠ সম্পূর্ণ শুষ্ক ও শক্ত। কিন্তু এই প্রমাণটি স্পষ্ট করেছে যে যদি সেই পৃষ্ঠে জলের অণু উপস্থিত থাকে তবে এটি আর্দ্র হবে। এটাও স্পষ্ট যে সেখানে জলের অস্তিত্ব শুধু বরফের আকারেই নেই।

কয়েক দশক আগে, আমেরিকান অ্যাপোলো নভোচারীরা চন্দ্রের মাটির নমুনা নিয়ে এনেছিলেন।সেই সময় তাদের আনা মাটির মধ্যে জলের কোনো চিহ্ন ছিল না। এই নমুনাগুলি দেখার পরে, বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন যে চন্দ্রের মাটি সম্পূর্ণ শুষ্ক। বিজ্ঞানীদের এই ধারনা সেই সময় NASA দ্বারাও সমর্থিত ছিল। সেইসময় নাসা বলেছিল, চাঁদের পৃষ্ঠে জলের অস্তিত্ব নেই।এরপর ধীরে ধীরে প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে এই ধারণাটিকে চ্যালেঞ্জ করা শুরু হয় এবং বর্তমানে প্রায় ৪০ বছর পরে পূর্বের এই ধারণায় সম্পূর্ণরূপে বদল এসেছে।আধুনিক বিজ্ঞানীদের বিশ্লেষণ চাঁদের মাটিতে জলের অস্তিত্ব রয়েছে।

এর আগে ২০০৯ সালে আমাদের চন্দ্রযান-১ একই ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছিল। ভারতের মহাকাশযান চাঁদে হাইড্রেটেড খনিজ সনাক্ত করেছিল, যা সূর্যালোক অঞ্চলে জলের অণুর উপস্থিতি নির্দেশ করে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল, এরপর ২০২০ সাল পর্যন্ত আর কিছুই জানা যায়নি। নাসা পরে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক অবজারভেটরি ফর ইনফ্রারেড অ্যাস্ট্রোনমি (সোফিয়া) থেকে তথ্য ব্যবহার করে চাঁদের সূর্যালোক পৃষ্ঠে জল আবিষ্কারের ঘোষণা করে। কিন্তু এই ফলাফলগুলি মূলত রিমোট সেন্সিং এবং মাইক্রোঅ্যানালাইসিস কৌশলগুলির উপর ভিত্তি করে ছিল। কিন্তু এখন সম্পূর্ণ প্রমাণ পাওয়া গেছে।

ChangE5 মিশনের মাধ্যমে, চীন ২০২০ সালে চাঁদের পৃষ্ট থেকে মাটির নমুনা নিয়েছিল। এই নমুনাগুলি অ্যাপোলো এবং সোভিয়েত লুনা মিশন দ্বারা সংগৃহীত নমুনাগুলির চেয়ে বেশী উচ্চতা থেকে নেওয়া হয়েছিল। বেইজিং ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি ফর কনডেন্সড ম্যাটার ফিজিক্স এবং চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্সেসের (সিএএস) ইনস্টিটিউট অফ ফিজিক্সের বিজ্ঞানীরা এটি নিয়ে গবেষণা করছেন এবং স্পষ্ট করেছেন যে চন্দ্রের মাটিতে জল রয়েছে।

বিঃদ্রঃ- এই গবেষণাটি ১৬ জুলাই নেচার অ্যাস্ট্রোনমি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি

আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে  বিতর্কে এ আর রহমান

উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন

উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি  তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top