ছোট গল্প -অন্যমন……..

মৈত্রেয়ী চৌধুরীঃ সঞ্চিতা বাড়ির অমতেই বিয়ে করছে সঞ্জীবকে। পরিবারের মূল আপত্তি বাঙাল পরিবারে বিয়ে দেওয়া নিয়ে, কারণ উনারা ঘটি। সঞ্চিতা কারো কথার কর্ণপাত না করেই বলা ভালো বাড়ির অমতেই রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করলো সঞ্জীবকে। সাবলম্বী মেয়ে সঞ্চিতা, সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষিকা সে। পরিবারের সন্মানের কথা চিন্তা করেই তার বাবা চরম অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সামাজিক রীতি মেনে বিয়ে দিলেন। শুধু হলো সঞ্চিতা সঞ্জীবের দাম্পত্য জীবন।
বিয়ের আগেও সঞ্চিতা দেখেছে যে কিছু একটা সাজগোজের সামগ্রী বা ড্রেস বা উপহারের কিছু কিনলেই সঞ্জীব একটু বিরক্তি প্রকাশ করতো তবে খুব একটা অমল দিতো না সঞ্চিতা, তবে এই নিয়ে দুটোর মধ্যে একটু টক মিষ্টি মনমালিন্য ও হতো, তবে ঐ পর্যন্তই। বিবাহের পর আজ তাদের জীবনের প্রথম দিন। দুজনের মনে অনেক আশা, আনন্দ। অতিথিদের সাথে সঞ্জীব যখন সঞ্চিতার পরিচয় করাচ্ছিল তখন দুজনের এক অপরের দিকে তাকানো সেই লাজুক হাসি বলে দিচ্ছিল তারা নিজেদের সবচেয়ে ভাগ্যবান ভাগ্যবতী ভাবা শুরু করে দিয়েছে। এইভাবে দিনের শেষে প্রতিক্ষিত রাত। দুজনে আজ একসাথে সারা জীবন চলার অঙ্গীকার বন্ধ হতে চলেছে। সঞ্জীব… সঞ্চিতা আজ থেকে তোমার সব সব দায়িত্ব আমার। তুমি শুধু আমাকে সাহায্য করো, সাথে থেকো। কি থাকবে তো?
সঞ্চিতা…. আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে আজ থেকে তোমার আর আমার মধ্যে পার্থক্য কি বলো। আমরা তো এক মন এক প্রাণ হয়ে গেছি, তাই না?
সঞ্জীব… নিজের হাতটা সঞ্চিতার কাঁধে রেখে বলল, আচ্ছা সঞ্চিতা আমি যদি সব খরচ মানে দুজনের যা যা লাগবে সবটাই আমি ই করি? তোমার আপত্তি আছে?
সঞ্চিতা…. না গো না, তুমি যা ভালো ভাববে, তাই ই করবে, আমি সব সময় তোমাকে ই মেনে চলবো।
সঞ্জীব…. সঞ্চিতা তোমার সেলারী চেকবুক, চেক, এটিএম সব যদি আমি অপারেট করি, তুমি কি আপত্তি করবে?
সঞ্চিতা…. একদম না। আমি কালকেই তোমার হাতে সব দায়িত্ব দিয়ে ঝাড়া হাত পা থাকতে চাই সঞ্জীব।
সঞ্জীব… সঞ্চিতা তুমি খুব সুখী হবে দেখো

( দ্বিতীয় পর্ব)……..
পরের দিনের সকালটা একটু অন্যরকম ছিল সঞ্চিতার জন্য। সকাল ছটা বাজতেই বড় ননদের হাকডাক শুরু, এতো সকাল হয়ে গেলো কারো ঘুম ভাঙে না? এ কেমন বাড়ি ইত্যাদি ইত্যাদি। কড়া কন্ঠে কড়া ভাষা ভেসে এলে কে আর ঘুমোতে পারে বলুন? স্বাভাবিক ভাবেই সঞ্চিতা উঠে পড়ে, নিজের বিছানা ছেড়ে আস্তে আস্তে নীচে নেমে আসে।
বাকী ঘটনা বলার আগেই সেরে নি পাত্র সঞ্জীব ও পাত্রী সঞ্চিতার বাড়ির পরিচয় পর্বটি।
সঞ্চিতা চক্রবর্তী বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে তার এক ভাই আছে। ভাই বোম্বেতে একটি কোম্পানি তে বড় পোস্টে রয়েছে। মা হাউস ওয়াইভ। আর বাবা রেলে স্টেশন মাস্টারের জব করতেন। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত।
অপরপক্ষে সঞ্জীব চৌধুরী। বাবা নির্মল চৌধুরী, পেশায় আইনজীবী, মা হাউস ওয়াইভ। দুই বোন মানে একটি দিদি আর একটি বোন। দুজনের ই বিয়ে হয়ে গেছে। তারাও হাউস ওয়াইভ, তবে দুজনের স্বামী ভালো জব করেন। দিদির স্বামী কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। বোনের বর হাই স্কুল টিচার। সঞ্জীবের একটি ভাই ও আছে। ওরা দুই ভাই ইন্ডিয়ান অয়েলে ইঞ্জিনিয়ার পোস্টে রয়েছে।
সঞ্জীবের বাড়িটা বেশ বড়। ত্রিতল বাড়ি, দোতলায় সঞ্জীব ও তার ভায়ের ঘর রয়েছে। বাবা মা এক তলায় থাকেন, সেখানেই রান্না ঘর থেকে সব কিছু, তিন তলায় গেস্টদের জন্য তিনটে ঘর রয়েছে আর ঠাকুর ঘর, বলা যেতে পারে মন্দির রয়েছে সেখানে। বাড়িটি অত্যাধুনিক ডিজাইনে গড়া। এছাড়াও গ্যারেজ ও একটি চার চাকার গাড়িও রয়েছে তাদের।
এরপর সঞ্চিতা নীচে নেমে এলেই বড় ননদ বলে তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নাও। বাড়িতে অনেক কাজ, কাজ না করো দেখো কি কি হচ্ছে একটু মৃদু হেসে। তারপর সঞ্জীব নেমে আসে,এরপর সাতটার মধ্যে ই চা চক্র সমাপ্ত।
এরপর কাজের বহরে সঞ্চিতা হতবাক। বাড়িটা যেভাবে পরিস্কার করা হলো তাতে কেউ বলবে না গতকাল এই বাড়িতে বিয়ে হয়েছে। গিফট প্যাকেট থেকে ফুলের সাজ সব যেন উপরে ফেলা হলো।তারপরে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল
বিকেলে পাড়ার কয়েকজন মহিলা এলে শুরু হয় শাশুড়ির ভাষণ। সঞ্চিতা আমার বউমা নয় ও আমার মেয়ে। আমার নিজের মেয়েদুটো তো পরের ঘরে গেছে ,তাতে কি? ঈশ্বর আমাকে আবার মেয়ে দিয়ে দিয়েছেন। এরপর পালা করে মধুচন্দ্রিমা, আত্মীয়দের বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা, বেড়াতে যাওয়া এইসব পালার শেষে সঞ্চিতা আর সঞ্জীব নিজেদের কর্মক্ষেত্রে যোগ দেয়। রূপালী স্বপ্নের আলোতে স্নাতো সঞ্চিতা। এইভাবে চারমাস কেটে যায়, এরই মধ্যে সঞ্চিতা দেখে শাশুড়ি মা তাকে কিছু করতে দেন না তবে সঞ্জীব বলে তুমি মাকে একটু সাহায্য করো না কেন? মায়ের তো বয়স হচ্ছে, তাই না?
সঞ্চিতা জিজ্ঞেস করলে শাশুড়ি মা বলেন তুমি আর কি করবে? আমি তো সব করছি, তুমি কি করবে? সারা দিন তোমার স্কুল, পরিশ্রম তো হয়, তুমি রেস্ট নাও।আবার ও দিন কয়েক পরেই সঞ্জীবের কন্ঠে সেই একই সুর, সর্বক্ষণ তো দোতলার এই ঘরে বসে কখনো মোবাইল তো কখনো বা বই পড়ছো দেখছি। তোমার তো বিয়ে হয়েছে, তাই না? যাও না গো , প্লিজ। মাকে কাজে সাহায্য করো।
সঞ্চিতা…. মা তো কাজ করতে গেলে কিছু ই করতে দেন না, আর তুমি বলছো সাহায্য করো, কি করে?
সঞ্জীব…তুমি নীচেই থাকবে, দেখবে মা কি করে, পরের দিন থেকে তুমি সেইসব কাজ করবে, মা তোমাকে কিছু করতে বলবে না। তোমাকে নিজের বাড়ির মতোই কাজ করতে হবে।
সঞ্চিতা…. মা কি তোমাকে কিছু বলেছেন?
সঞ্জীব…..না না মানে সেই রকম কিছু না।
সঞ্চিতা পরের দিন নীচে সকাল সকাল নেমে সবজি কাটতে গেলে শাশুড়ি অগ্নিশর্মা রূপ ধারণ করেন।
শাশুড়ি… কি ব্যাপার বলো তো? কে বলেছে সবজি কাটতে? এটা কি কাটছো?
এই সব হবে না আজ, শোনো আমাকে অভারটেক করতে যেও না।এরপর চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তুললে সঞ্জীব নেমে এসে বলে কি হলো? ঘুমতে দেবে না? বাড়িতে তো কাক চিল বসার যোগাড়।
সঞ্জীব… মা কি হয়েছে? আর
সঞ্চিতা সকালে মাকে কাঁদালে? কিছু করতে হবে না তোমাকে তুমি যাও। এইজন্য আমি বিয়ে করতে চাইছিলাম না। মা তোমরা তো পাগল করে দিচ্ছিলে আমাকে।
সঞ্চিতা ঘরে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পরে। সে এই চার মাসে বুঝতে ই পারছে না তার অন্যায়টা কোথায়?….
তৃতীয় পর্ব,
এইভাবে এক মিশ্র পরিবেশে এগিয়ে চলছিল সঞ্জীব সঞ্চিতার জীবন। কিন্তু কথায় বলে বিপদ বলে আসে না,কথাটা সত্যি ই ,হঠাৎ ঘটে গেলো চক্রবর্তী পরিবারে অশনিপাত। সঞ্চিতার বাবা দশটার দিকে বাজারে বেরিয়েছেন মাসের গ্রসারীর কেনাকাটা করতে, হঠাৎ চোখমুখ উনার অন্ধকার হয়ে আসে মাঝপথে, রাস্তায় পড়ে যান এবং জ্ঞান হারান। রাস্তায় পরিচিত একজন দেখতে পেয়ে কয়েকজনের সহযোগিতায় হাসপাতালে ভর্তি করে দেন।
বেলা সাড়ে এগারোটায় সঞ্চিতার মা শেফালী দেবী কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে ফোন করেন সঞ্চিতা কে। তখন সে স্কুলে ছিলো, বাবার খবরে কান্নায় ভেঙে পড়ে , আর মা কে বলে শীঘ্রই যাচ্ছে সে। সঞ্চিতা মায়ের ফোন রেখেই সঞ্জীব কে ফোন করে জানায়। সঞ্জীব বলে আমি কি করবো? আমি একটা জায়গায় চাকরি করি, দায়িত্ব আছে আমার আর তাছাড়া আমি তো আর ডাক্তার নই যে কিছু মিরাকেল ঘটাবো, তুমি যাও , গিয়ে দেখো। আর আমাকে কারণ অকারণে ফোন করে বিব্রত করবে না। তোমার বাবার বয়স হয়েছে, এই রকম ঘটনা ঘটতেই পারে, এইভাবেই তো বয়স্ক মানুষেরা জগতের মায়া ত্যাগ করেন। সঞ্চিতা.. কাঁদতে কাঁদতে বলে চুপ করো তুমি, যার সম্বন্ধে বলছো তিনি আমার বাবা হন। সাহায্য করতে পারবে না যখন ফোন রাখো। এরপর সঞ্চিতা স্কুলে হেডের অনুমতি নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যায়। সেখানে দেখে অসহায় অবস্থায় বাবা একটি বেডে পড়ে আছেন, মা শিহড়ে বসে আছেন। দুজনের করুণ চাহনিতে সঞ্চিতার বুকটা যেন মোচর দিচ্ছে। ছুটে যায় সে, মা বলেন তোর বাবার স্ট্রোক হয়েছে, ডাক্তার দেখে গেছেন তবে শীঘ্রই নিউরোলজিস্টের
সাথে যোগাযোগ করতে বলেছে। দেখ না মানুষ টা কেমন অসাড় হয়ে পড়ে রয়েছে, কথা বলতে পারছে না, কি করবো বলতো?
সঞ্চিতা কি করবে বুঝতে পারছে না, সে রাউন্ডে থাকা ডাক্তারকে বাবার প্রেজেন্ট স্ট্যাটাস বলে আর কোন নিউরোলজিস্ট কে দেখাবে জিজ্ঞেস করে। তিনি প্রাইভেট নার্সিংহোমে বিশিষ্ট নিউরোলজিস্ট ডঃ সেন কে দেখানোর পরামর্শ দেন। সঞ্চিতা স্কুলের কলিগকে ফোন করতে রুমের বাইরে আসতেই দেখে পাড়ার এক দাদা অম্লানের সাথে সেই ডাক্তার কথা বলছেন। সঞ্চিতা অম্লানের কাছে ছুটে যায়, আর সব ঘটনা বলে। অম্লান বলে চিন্তা করিস না , এখনই ডঃ সেনের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিচ্ছি তুই শুধু কাকুর কাছে থাকা। পারলে হাজার দশেক টাকার ব্যবস্থা কর। আমি দুই তিন ঘন্টার মধ্যে ই কাকুকে নার্সিংহোমে ভর্তি র ব্যবস্থা করছি।বলেই অম্লান চলে গেলো।
সঞ্চিতা আবার ও ফোন করলো সঞ্জীব কে, সঞ্জীব… কি হলো? বলো তো? (অত্যন্ত বিরক্তির সুরে)
সঞ্চিতা…উপায় নেই ,তাই বাধ্য হলাম বলতে পারো ফোন করতে, আমার এখনই দশ হাজার টাকা লাগবে।
সঞ্জীব….. কি? দশ হাজার, টাকা,কেন?
সঞ্চিতা….
বাবাকে নার্সিংহোমে অ্যাডমিট করতে হবে।
সঞ্জীব….. উনি তো পেনশন পান তবে একটু কাত হতে না হতেই মেয়ের কাছে ভিক্ষের ঝুলি ফেলে দিলেন কেন বাবা?
সঞ্চিতা…. ভদ্রভাবে কথা বলো।
সঞ্জীব… পারলাম না, ভিখেরী গোষ্ঠী দের সাথে আমি ভদ্রতা দেখায় না।,
অন্যমন…..(চতুর্থ পর্ব)
সঞ্জীবের কথাগুলো শুনে ক্ষোভে, ঘৃণায় ফোন কেটে দেয় সঞ্চিতা। আড়াই ঘণ্টা পর যথারীতি সব রকম ব্যবস্থা করে অম্লান হাজির হয়। সঞ্চিতা বাবা মাকে নিয়ে নার্সিংহোমে যায়, সেখানে ডাক্তারকে দেখায়, ডঃ সেন সঙ্গে সঙ্গে অ্যাডমিট করে নেন। সঞ্চিতা ভাই সাগরকে বোম্বেতে ফোন করে। সাগর বলে তুই চিন্তা করিস না দি, আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যাচ্ছি। বাবার অবস্থা কেমন? সঞ্চিতা সব বলে আর বলে ভাই আমার কাছে তো টাকা নেই রে, অম্লান দা সব খরচ আপাতত দিয়েছে, কি যে খারাপ লাগছে, বলেই কেঁদে উঠে সঞ্চিতা। সাগর…. দি তুই একদম টাকা পয়সা নিয়ে চিন্তা করিস না, কাছাকাছি অম্লান দা থাকলে একটু ফোনটা দে, আমি অম্লান দার অ্যাকাউন্টে যথেষ্ট পরিমাণের টাকা সেন্ট করে দিচ্ছি। তুই একটু সামাল দে, আমি যাচ্ছি।
সন্ধ্যা সাতটায় সঞ্জীবের ফোন সঞ্চিতা কে। কেমন আছেন উনি?
সঞ্চিতা… অ্যাডমিট করা হয়েছে।
সঞ্জীব….. আমি যাচ্ছি নার্সিংহোমে। অপেক্ষা করো। সঞ্চিতা কিছু না বলেই ফোন কেটে দেয়।
ডাক্তার বলেন উনি দুই দিন আমার তত্ত্বাবধানে থাক। আপনারা এখন বাড়ি যেতে পারেন।
সঞ্চিতা অম্লান দা তোমার এই ঋণ শোধ করতে পারবো না কখনো, তবে একটু বাবাকে এখানে দেখাশোনা করার জন্য…….
অম্লান….. ধুর পাগলি, আমরা একই পাড়ার লোক, কাকুর প্রতি দায়িত্ব নেই, আর দেখাশোনা র চিন্তা করিস না, সব করে দিয়েছি, রাতে একজন কে থাকতে হবে সেই ব্যবস্থা ও হয়ে গেছে।
সঞ্জীব এরই মধ্যে নার্সিংহোমে আসে আর শেফালী দেবীকে বলে মা আমি অফিস থেকে তো সব সময় ইচ্ছে থাকলেও বেড়োতে পারি না, তাই দেরী হয়ে গেলো। বাবা ভালো আছেন?
শেফালী দেবী বলেন আপাতত তো ঠিক আছে, ডাক্তার বললেন।
সঞ্জীব সঞ্চিতা তবে বাড়ি চলো। মা এখান থেকে টোটো রিক্সোতে চলে যাবেন তাহলে।
সঞ্চিতা আমি মায়ের সাথে বাড়ি যাবো, যে কয়েক দিন ভাই না আসে আমি মায়ের কাছে ই থাকবো।
সঞ্জীব…. আমার মায়ের অসুবিধা হবে না?
তুমি বাড়ি চলো
সঞ্চিতা কথা না বাড়িয়ে মাকে সঙ্গে নিয়ে টোটো রিক্সোতে উঠে পড়ে।
সঞ্জীব এটা ভালো করলে না সঞ্চিতা।
মা মেয়ে চলে যায়।
এরপর বাবা বাড়িতে এলে সঞ্চিতা শ্বশুর বাড়িতে গেলে শাশুড়ি মা আর স্বামী র আগ্নি বর্ষনের মুখোমুখি হয়।দিন পাঁচেক এর মধ্যে সঞ্চিতা র অনেক অভিজ্ঞতা হলো, ভালোবাসার রূপালী পর্দা খসে পড়েছে তার চোখের সামনে থেকে তাই সে আজ আর প্রতিবাদ করতে ভয় পায় না।
সঞ্চিতা দুদিন পর সঞ্জীব কে তার চেক ও এ টি এম ফিরিয়ে দিতে বলে।
সঞ্জীব অবস্থা বেগতিক দেখে আবার আবেগঘন কথায় ভুলাতে চাইছে সঞ্চিতা কে।এই কয়েকটা দিন সঞ্চিতা কে অনেক বাস্তববাদী করে দিয়েছে তাই এইসব সঞ্জীবের গল্প তার কাছে ফানুসের মতো।
সঞ্জীব বুঝতে পারে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে, শুরু করে আলাদা থেরাপি…
র, অন্যমন (পঞ্চম পর্ব)
পরদিন ই ঘটে সেই ঘটনা। সঞ্চিতার শাশুড়ি মা সকাল ছয়টায় ঘুম থেকে প্রতিদিনের মতোই উঠেন, উঠে ঘরের কাজ করতে গিয়ে দেখে সদর দরজা হাট করে খোলা, এটা দেখে তো উনি চিৎকার চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় তুললেন। দেওয়র তীর্থ থেকে শ্বশুর মশাই, সঞ্চিতা সকলেই তাড়াতাড়ি নীচে নেমে আসে।
শাশুড়ি… সোনা (সঞ্জীব) কোথায়?
সঞ্চিতা… আমি জানি না, আপনার চিৎকারে ঘুম থেকে উঠে দেখি উনি বিছানায় নেই। ঘরে কোথায় দেখতে পেলাম না।
শাশুড়ি…. সোনা কি বাইরে বেড়িয়েছে? ও তো এতটা কান্ডজ্ঞান হীন ছেলে নয়? বাড়িতে তো সোনা সবার চেয়ে সজাগ, ও করবে না এই কাজ। এই মেয়ে গতকাল রাতে তো তুমি ই সদর দরজা আটকে ছিলে তবে খোলা কেন? তুমি কি দরজা না লাগিয়ে ই চলে গেছলে?
সঞ্চিতা … আমি এই রকম দায়িত্ব জ্ঞানহীন আপনি কি করে ভাবলেন?
শ্বশুর দেওয়র দুজনে ছুটোছুটি করে খুঁজতে লাগলো সঞ্জীব কে।
এরপর……
সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো কিন্তু সঞ্জীবের দেখা নেই, পুলিশ কে জানাবে এই রকম কথাবার্তা চলছে বাড়িতে, তিনটের দিকে সঞ্জীবের ফোন সঞ্চিতা কে।
সঞ্জীব… আমি তোমাকে মুক্তি দিয়ে চির বিদায় নিলাম সঞ্চি, তোমার চোখে খারাপ মানুষ হয়ে আমি থাকতে পারবো না, তুমি ভালো থেকো, সাবধানে থেকো।
সঞ্চিতা… কান্নায় ভেঙে পড়ে, বলে তুমি কোথায় জানাও প্লিজ, তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না।
সঞ্জীব… সঞ্চিতা আমি না ফেরার দেশে যাচ্ছি, কোথায় আমি বলবো না, এক ঘন্টা পর পুলিশ তোমাদের জানাবে।
সঞ্চিতা ট্রেনের আওয়াজ শুনে বুঝতে পারলো যে সে স্টেশনে। শীঘ্রই ছুটে গেলো সে, দেখে সঞ্জীব একটি বেঞ্চে বসে আছে।
সঞ্চিতা কাছে গিয়ে করুণ আর্তি করতে শুরু করে, সঞ্জীব বলে তুমি খুব ভালো মেয়ে, আমি তোমার যোগ্য নয়, বোঝার চেষ্টা করো। তুমি যাও এখান থেকে।
সঞ্চিতা অনেক অনেক কাকুতি মিনতি করে ফিরিয়ে আনে সঞ্জীব কে।
ইতি মধ্যেই সঞ্চিতার ভাই সিদ্ধান্ত নেয় বাবা মাকে নিয়ে চলে যাবে বোম্বেতে। সঞ্চিতা র বাবা এখন অনেকটাই সুস্থ, তিনি সঞ্চিতা কে ডাকে পাঠানো। সঞ্চিতা বাড়ি এলে ভাই সাগর বলে দি আমি দিন কয়েকের মধ্যেই বাবা মাকে নিয়ে বোম্বেতে যাচ্ছি।
বাবা বলেন দেখলি তো মা, আমার সিদ্ধান্ত ভুল ছিলো না, তোর মায়ের কাছ থেকে সব শুনেছি।
সঞ্চিতা না বাবা ও হইতো কাজের চাপে সময় পায় নি…..
বাবা আবার ও ভুল করবি মা?
তুই সঞ্জীব কে আবার ভুল চিনতে শুরু করলি, তবে শোন যদি আবার ও অসন্মানীত বোধ করিস তবে এই বাড়ির চাবি তোকে দিয়ে যাবো, এখানে ই থাকিস।
আমরা কোথাও শান্তি পাবো না মা , তোকে ছেড়ে। কিছু দিন পরে ফিরে আসবো।…. (চলবে আগামী পর্বে)

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Diabetes Treatment: রক্তে শর্করা স্থিতিশীল করতে ডালিয়া ফুলের নির্যাস কার্যকর

উত্তরাপথঃ ডায়াবেটিস নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।সম্প্রতি গবেষণায় ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Otago)নেতৃত্বে বিজ্ঞানীরা ক্লিনিকাল ট্রায়ালের মাধ্যমে আবিষ্কার করেছে যে ডালিয়া ফুলের পাপড়ির নির্যাস ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তে শর্করা স্থিতিশীল করতে সাহায্য করতে পারে। সেন্টার ফর নিউরোএন্ডোক্রিনোলজির একজন সহযোগী অধ্যাপক আলেকজান্ডার টুপসের( Alexander Tups) নির্দেশনায়, দলটি খুঁজে পেয়েছে যে, উদ্ভিদের একটি অণু, যা মস্তিষ্কে কাজ করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রন করার জন্য শরীরের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে।প্রসঙ্গত ডায়াবেটিস হল একটি দীর্ঘস্থায়ী বিপাকীয় ব্যাধি যা অপর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদনের কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা অত্যাধিক বেড়ে যায়। .....বিস্তারিত পড়ুন

এবার চাঁদের পথে জাপান, অবতরণে সময় লাগতে পারে ছয় মাস

উত্তরাপথঃ এ যেন হঠাৎ করে শুরু হওয়া বিভিন্ন দেশগুলির মধ্যে চাঁদে যাওয়ার প্রতিযোগিতা।ভারতের পর এবার চাঁদের পথে পারি দিল জাপান । চাঁদের জন্য SLIM নামে  তাদের নিজস্ব মুন ল্যান্ডার উৎক্ষেপণ করেছে জাপান।  মহাকাশযানটি ৭ সেপ্টেম্বর জাপানের স্থানীয় সময় সকাল ৮.৪২মিনিটে উৎক্ষেপণ করা হয়।  এটিতে জাপানের নিজস্ব  H2A রকেট ব্যবহার করা হয়েছে। এই মহাকাশ যানটি  তানেগাশিমা স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।প্রসঙ্গত দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে জাপান এটিকে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে ১০ দিন দেরিতে উৎক্ষেপণ করল।মহাকাশযান SLIM ছাড়াও একটি মহাকাশ টেলিস্কোপও পাঠিয়েছে জাপান।উভয় মহাকাশযান এক ঘন্টার মধ্যে তাদের নির্দিষ্ট পথে পৌঁছেছে।  সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে 'স্মার্ট ল্যান্ডার ফর ইনভেস্টিগেটিং মুন' (SLIM) প্রায় চার মাস পর চাঁদে অবতরণ করবে। .....বিস্তারিত পড়ুন

মহারানী পদ্মাবতী এবং জোহরের ঐতিহ্য: সাহস ও আত্মত্যাগের এক গল্প

উত্তরাপথঃ ভারতের ইতিহাসে, এমন অনেক গল্প রয়েছে যা সময়কে অতিক্রম করে আমাদের সম্মিলিত চেতনায় এক অমোঘ চিহ্ন রেখে যায়। তেমনই একটি গল্প মহারানী পদ্মাবতী ও জোহরের ঐতিহ্য। সাহস, সম্মান এবং ত্যাগের এই গল্প প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে এবং আমাদের কল্পনাকে মুগ্ধ করে চলেছে।ভারতীয় ইতিহাসের পাতায় অত্যন্ত সুন্দরী ও সাহসী মহারানী পদ্মাবতী'র উল্লেখ আছে।  রানী পদ্মাবতী রানী পদ্মিনী নামেও পরিচিত।  রানী পদ্মাবতীর পিতা ছিলেন সিংহল প্রদেশের (শ্রীলঙ্কা) রাজা গন্ধর্বসেন।ইতিহাসে রানী পদ্মিনী তার ব্যতিক্রমী সৌন্দর্য, বুদ্ধিমত্তা এবং বীরত্বের জন্য পরিচিত হলেও, তিনি করুণা এবং শক্তির প্রতীক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। দিল্লির শক্তিশালী শাসক আলাউদ্দিন খিলজি তার অতুলনীয় সৌন্দর্যের কথা শুনে তাকে অধিকার করার সংকল্প করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

টাইপ 2 ডায়াবেটিসে সময়ে খাবার খাওয়া, ক্যালোরি গণনার চেয়ে বেশি কার্যকর

উত্তরাপথঃ টাইপ 2 ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে একটি সাধারণ লক্ষ্য হল ওজন কমানো , অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতার সাথে টাইপ 2 ডায়াবেটিসের অবস্থার দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে।এই বিপাকীয় ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য কোন ডায়েটিং কৌশলটি সবচেয়ে ভাল কাজ করে তা স্পষ্ট নয়।েতবে টাইপ 2 ডায়াবেটিস রোগীদের একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে অধ্যয়নের অংশগ্রহণকারীরা যারা দুপুর থেকে রাত ৮ টার মধ্যে খাবার খাওয়া শেষ করেছে তারা, যারা ক্যালোরি গণনা করে তাদের সামগ্রিক ক্যালোরি গ্রহণ কমিয়েছেন তাদের .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top