

প্রীতি গুপ্তাঃ রীতা এক মাঝবয়সী মহিলা, চল্লিশের কোঠায় পা দিয়েছে। তার জীবনটা একটা নিয়মের মধ্যে বাঁধা—সকালে উঠে সংসারের কাজ, স্বামীর জন্য জলখাবার তৈরি, ছেলের স্কুলের টিফিন বানানো, আর তারপর নিজের অফিস। ব্যাঙ্কে কেরানির কাজটা তার কাছে যেন একঘেয়ে হয়ে গেছে। তার মনের মধ্যে একটা ছোট্ট স্বপ্ন লুকিয়ে আছে, যেটা সে কাউকে বলে না। সে স্বপ্ন দেখে একদিন নিজের একটা ছোট্ট ফুলের দোকান খুলবে। ফুলের গন্ধে ভরা একটা জায়গা, যেখানে সে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারবে।
একদিন সন্ধ্যায়, বাড়ি ফিরে রীতা তার ছোট্ট ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে গোলাপের গাছটার দিকে তাকিয়ে ছিল। গাছটা তার মায়ের দেওয়া, তার শেষ স্মৃতি। প্রতিদিন সে গাছটার যত্ন নেয়, যেন মায়ের সঙ্গে তার একটা অদৃশ্য সংযোগ রয়েছে এই গাছটার মাধ্যমে। হঠাৎ তার মনে পড়ল, মা কীভাবে বলতেন, “রীতা, জীবনটা ফুলের মতো। একটু যত্ন নিলেই ফুটে ওঠে। তুই তোর স্বপ্নের যত্ন নে।”
কিন্তু স্বপ্ন দেখা আর স্বপ্ন পূরণ করা এক নয়। রীতার স্বামী অমিত, একজন ব্যস্ত ব্যবসায়ী। তার কাছে রীতার স্বপ্নটা যেন ছেলেমানুষি। “ফুলের দোকান? ওতে কত টাকা আসবে? তুই তোর চাকরিটা ছাড়তে পারবি না, রীতা। আমাদের ছেলের পড়াশোনা, বাড়ির খরচ—এসব কি ফুল বিক্রি করে চলবে?” অমিতের কথাগুলো রীতার বুকে ছুরির মতো বিঁধত। তবু সে চুপ করে থাকত, কারণ সে জানত, অমিতের কথায় যুক্তি আছে।
একদিন, অফিস থেকে ফেরার পথে, রীতা একটা ফুলের দোকানের সামনে থামল। দোকানের বুড়ো মালিক, হরিদাস, তার দিকে তাকিয়ে হাসলেন। “দিদি, একটা গোলাপ নিয়ে যাও। তোমার মুখের হাসিটা ফুটিয়ে তুলবে।” রীতা হেসে ফেলল। সে একটা গোলাপ কিনল আর হরিদাসের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করল। হরিদাস বললেন, “ফুল বিক্রি করা শুধু টাকার ব্যাপার নয়। এটা মনের আনন্দ। তুমি যদি মন দিয়ে এ কাজ করো, মানুষ তোমার ফুলের গন্ধে হারিয়ে যাবে।”
হরিদাসের কথাগুলো রীতার মনে দাগ কাটল। সেদিন রাতে, সে সাহস করে অমিতের সঙ্গে কথা বলল। “আমি জানি, আমার স্বপ্নটা ছোট। কিন্তু এটা আমার। আমি চাই তুমি আমাকে একটা সুযোগ দাও। আমি চাকরি ছাড়ব না, কিন্তু আমি একটা ছোট্ট দোকান শুরু করতে চাই।” অমিত প্রথমে চুপ করে রইল। তারপর বলল, “ঠিক আছে, রীতা। তুমি চেষ্টা করে দেখো। কিন্তু আমার উপর সংসারের দায়িত্ব যেন না বাড়ে।”
রীতা তার সঞ্চয় থেকে একটু টাকা বের করে একটা ছোট্ট দোকান ভাড়া নিল। প্রথম দিন, যখন সে তার দোকানে দাঁড়িয়ে প্রথম গোলাপটা বিক্রি করল, তার চোখে জল চলে এল। সেই গোলাপটা কিনেছিল একজন মাঝবয়সী মহিলা, যিনি বললেন, “তোমার ফুলে যেন জাদু আছে। আমার মনটা ভালো হয়ে গেল।”
দিন গেল, মাস গেল। রীতার দোকানটা ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠল। তার ফুলের গন্ধে, তার হাসিতে, মানুষের মনে একটা আলাদা জায়গা তৈরি হল। অমিতও ধীরে ধীরে বুঝতে পারল, রীতার স্বপ্নটা শুধু তার নিজের নয়, সেটা তাদের সংসারকেও আলো দিচ্ছে।
একদিন সন্ধ্যায়, রীতা তার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে মায়ের গোলাপ গাছটার দিকে তাকাল। তার মনে হল, মা যেন কোথাও থেকে তাকে দেখে হাসছেন। “মা, আমি তোমার কথাটা শুনেছি। আমি আমার স্বপ্নের যত্ন নিয়েছি,” সে মনে মনে বলল।
রীতার জীবনটা এখন ফুলের মতোই ফুটে উঠেছে। তার ছোট্ট দোকানটা শুধু ফুল বিক্রি করে না, মানুষের মনে আনন্দ ছড়ায়। আর রীতা? সে এখন জানে, স্বপ্ন যত ছোটই হোক, তার পিছনে ছুটলে জীবনটা সত্যিই রঙিন হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন
NASA Carbon Emission: পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে
উত্তরাপথঃ কার্বন নির্গমন (NASA Carbon Emission) সম্পর্কে নাসার সর্বশেষ আবিষ্কার পৃথিবীর জন্য এক সতর্কতা সংকেত। মহাকাশ সংস্থার মতে, পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে, যার ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। NASA এর এই আবিষ্কারটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে দেখা যেতে পারে, সেইসাথে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেছে।নাসার সর্বশেষ গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে পৃথিবীর মহাসাগর এবং ভূমি-ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্র আগের চেয়ে কম কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে গত এক দশকে ভূমি এবং মহাসাগর দ্বারা শোষিত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৫% হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে বিতর্কে এ আর রহমান
উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?
উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে। বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী? আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত? পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না? এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন
Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন
উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন