উচ্চ কোলেস্টেরল হলে ডিম খাওয়া কি উচিত ?

উত্তরাপথঃ কোলেস্টেরল এখন বেশীরভাগ লোকেদের ক্ষেত্রে এক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভুল খাদ্যাভ্যাস এবং খারাপ জীবনযাত্রার কারণে মানুষের মধ্যে কোলেস্টেরলের সমস্যা দ্রুত বাড়ছে।আমাদের শরীরে দুই ধরনের কোলেস্টেরল রয়েছে, প্রথমটি হল ভাল কোলেস্টেরল এবং দ্বিতীয়টি খারাপ কোলেস্টেরল। শরীরে সুস্থ কোষ গঠনের জন্য ভালো কোলেস্টেরল প্রয়োজন। সেই সঙ্গে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে তা শিরায় জমতে শুরু করে এবং ব্লকেজ হতে পারে। শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি হয়ে পড়ে। উচ্চ কোলেস্টেরল কমাতে আপনার খাবারের দিকে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। মানুষের প্রায়ই এই প্রশ্ন থাকে যে উচ্চ কোলেস্টেরলের ক্ষেত্রে ডিম খাওয়া কি উচিত ?

ডিম আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এতে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি6, ভিটামিন-বি12, আয়রন, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফোলেট এবং অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। প্রতিদিন ডিম খেলে অনেক স্বাস্থ্য উপকার পাওয়া যায়। তবে কিছু স্বাস্থ্য সমস্যায় ডিম না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। যাদের উচ্চ কোলেস্টেরল রয়েছে তাদের জন্য ডিম দীর্ঘদিন ধরে একটি বিতর্কিত খাবার। কিছু গবেষণা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে ডিমের কোলেস্টেরল রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রাকে প্রভাবিত করে, বিশেষ করে যারা ইতিমধ্যেই হৃদরোগের ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের জন্য।আবার কিছু গবেষকদের  মতে, উচ্চ কোলেস্টেরলের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণে ডিম খাওয়া একেবারে নিরাপদ। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে ডিম খাওয়ার কোলেস্টেরলের মাত্রার উপর কোন প্রভাব নেই। একই সঙ্গে কিছু গবেষণায় এটাও দেখা গেছে যে ডিমে ভালো কোলেস্টেরল থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তবে এটি শুধুমাত্র সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত অন্যথায় সমস্যা বাড়তে পারে।

উচ্চ কোলেস্টেরলে ডিম কীভাবে খাবেন

গবেষকদের মতে, উচ্চ কোলেস্টেরলের ক্ষেত্রে ডিমের সাদা অংশ খাওয়া যেতে পারে। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি এবং প্রোটিন পাওয়া যায়। তবে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি হলে ডিম খাওয়ার সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। প্রতিদিন ১ থেকে ২টি ডিম খাওয়া উচিত। এছাড়াও, তেল বা মাখনে ডিম ভাজার পরিবর্তে সেদ্ধ করে বা ভাপিয়ে খান। আপনার যদি হৃদরোগ বা অন্য কোনো গুরুতর সমস্যা থাকে, তাহলে ডিম খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

তবে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে খাবারের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে কিছু ঘরোয়া উপায়ের সাহায্যেও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আজ আমরা আপনাকে এমন একটি পানীয়ের রেসিপি জানাচ্ছি, যা খাওয়া খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করতে পারে (Tea To Reduce Bad Cholesterol)। এই পানীয় তৈরি করতে আপনার রসুন এবং কালো মরিচ লাগবে। তাহলে আসুন, জেনেনি রসুন ও কালো মরিচ পানীয়ের উপকারিতা এবং কোলেস্টেরল কমানোর রেসিপি।

কোলেস্টেরল কমাতে রসুন এবং কালো মরিচ পানীয় কীভাবে তৈরি করবেন? – খারাপ কোলেস্টেরলের জন্য রসুন এবং কালো মরিচ পানীয়ের রেসিপি

প্রয়োজনীয় উপাদান

রসুন – 2 কোয়া

কালো মরিচ – ১/৪ চা চামচ

লেবুর রস – ১/২ চা চামচ

পদ্ধতি

প্রথমে প্যানে এক গ্লাস জল গরম করুন। এবার এতে রসুনের কুঁচি মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন। এরপর এতে কালো গোলমরিচের গুঁড়া দিন এবং জল অর্ধেক না হওয়া পর্যন্ত ফুটান । এরপর এই পানীয়টি একটি কাপে ছেঁকে নিন। তারপর এতে আধা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খান। সকালে খালি পেটে এই চা খেলে কোলেস্টেরল কম হবে, এছাড়া স্বাস্থ্যের আরও অনেক সুবিধা পাবেন।

রসুনে অ্যালিসিন নামক একটি যৌগ থাকে, যা খারাপ কোলেস্টেরল কমানোর পাশাপাশি ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে কালো মরিচে আছে পিপারিন নামক উপাদান, যা শরীর থেকে শিরায় জমে থাকা নোংরা কোলেস্টেরল দূর করতে পারে। লেবুর কথা যদি বলি, এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরে ক্রমবর্ধমান কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এই চা নিয়মিত সেবন খারাপ কোলেস্টেরল  সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

বিঃদ্রঃ-এই নিবন্ধে শেয়ার করা তথ্য শুধুমাত্র তথ্যগত উদ্দেশ্যে শেয়ার করা হচ্ছে, এটিকে চিকিৎসা পরামর্শ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়। কোন রোগের জন্য একজন বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে

উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি।  ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে।  আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি।  এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন।  সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে।  এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

Fructose: নতুন গবেষণায় ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার কারণ বলা হয়েছে

উত্তরাপথঃ একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জোরালো প্রমাণ দেওয়া হয়েছে যে ফ্রুক্টোজ (Fructose), সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয়গুলিতে থাকা এক ধরনের চিনি, যা স্থূলতার প্রাথমিক চালক। বছরের পর বছর ধরে, পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা , পাশ্চাত্য খাদ্যে, স্থূলতার মূল কারণ নিয়ে বিতর্ক করেছেন, কেউ কেউ অত্যধিক ক্যালোরি গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, অন্যরা কার্বোহাইড্রেট বা চর্বি জাতীয় খাবারকে দায়ী করেছেন। Obesity জার্নালে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার প্রকৃত চালক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।The University of Colorado Anschutz Medical Campus এর Dr. Richard Johnson এবং তার দলের মতে, ফ্রুক্টোজ হল একটি সাধারণ চিনি যা ফল এবং মধুর প্রাথমিক পুষ্টি। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top