

বলরাম মাহাতো : পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলাফলের আর দুই দিন বাকি। হিন্দি বলয়ের দুই প্রধান রাজ্য মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড় বিধানসভার ভোট গ্রহণ সমাপ্ত। মধ্যপ্রদেশের ভোট হয়েছে এক দফায়। মাওবাদীদের দুর্গ বলে পরিচিত ছত্তিশগড়ে ভোট হয়েছে দুই দফায়। মিজোরাম রাজ্যে বিধানসভার ভোটও ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজস্থানের ভোট হয়েছে ২৩ নভেম্বর। তেলেঙ্গানার ভোট হল ৩০ নভেম্বর। এই পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো দেশ। কারণ, আগামী বছর এপ্রিল-মে মাসে লোকসভার ভোটের আগে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে এটাই হতে চলেছে শেষ শক্তি পরীক্ষা। সেই অর্থে লোকসভা নির্বাচনের আগে এই পাঁচ রাজ্যের ভোট যেন মহারণের আগে সেমিফাইনাল।
৩ ডিসেম্বর জানা যাবে, গো–বলয়ে ক্ষমতাসীন বিজেপির দাপট কমে বিরোধীদের শক্তিবৃদ্ধি হচ্ছে কি না ? মধ্যপ্রদেশের নির্বাচন বিজেপির কাছে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এ রাজ্যে ১৮ বছর ধরে তারা ক্ষমতায়। এ সময়ের মধ্যে মাত্র দেড় বছর তাদের ধারাবাহিকতায় থাবা মেরেছিল কংগ্রেস। ২০১৮ সালের ভোটে কংগ্রেস ক্ষমতা দখল করলেও দল ভাঙিয়ে বিজেপি সেখানে আবার শাসক হয়ে যায়। ধারাবাহিকতা ধরে রাখা বিজেপির পক্ষে জরুরি বলেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এ রাজ্যে ৪০টির মতো জনসভা ও রোড শো করেছেন। শুধু তা–ই নয়, ক্ষমতা ধরে রাখার বাসনা ও ঐক্যবদ্ধ কংগ্রেসের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় বিজেপি ওই রাজ্য থেকে নির্বাচিত ৭ সংসদ সদস্যকে ভোটে লড়তে বাধ্য করেছে। তাঁদের মধ্যে তিনজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁরা নিশ্চিন্তে নেই। গত চারবারের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান জনপ্রিয় হলেও তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বিজেপি এবার আগাম চিহ্নিত করেনি। শুধু এই রাজ্য নয়, পাঁচ রাজ্যেই তাঁরা ভোটে লড়ছেন প্রধানমন্ত্রী মোদির নামে। সে তুলনায় এই প্রথম কংগ্রেসকে জোটবদ্ধ লাগছে। দিগ্বিজয় সিং ও কমলনাথ কাজ করছেন হাতে হাত মিলিয়ে। খাড়গে-রাহুল-প্রিয়াঙ্কা একের পর এক জনসভা করেছেন। প্রতিটি জনমত সমীক্ষায়ও রয়েছে পালাবদলের ইঙ্গিত। মধ্যপ্রদেশ ভেঙে গড়ে উঠেছিল ছত্তিশগড়। সেখানে শাসন ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস। এবারও তা বজায় রাখতে মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল সক্রিয়। বিজেপি এ রাজ্য দখলে উঠেপড়ে লাগলেও জনমত সমীক্ষা এখনো কংগ্রেসের পক্ষে। তাদের একটাই ভয়, দুই পক্ষের আসনপ্রাপ্তির ব্যবধান কম হলে বিজেপি ওই রাজ্যে দল ভাঙানোর খেলা খেলে মধ্যপ্রদেশের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে ফেলবে না তো ?
মধ্যপ্রদেশ বিধানসভার মোট আসন ২৩০, ছত্তিশগড়ের ৯০। কর্ণাটকের মতো মধ্যপ্রদেশেও কংগ্রেসের হাতিয়ার বিজেপি শাসনকালের ‘লাগামছাড়া দুর্নীতি’। সেই সঙ্গে সাধারণের মন জয়ে কংগ্রেস নানা ধরনের জনমুখী প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। রাহুল গান্ধীসহ কংগ্রেসের সবাই বারবার বলছেন, তাঁরা চান সাধারণ মানুষের হাতে টাকা দিতে, যাতে তাঁদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ে। সেটা বাড়লেই অর্থনীতি ভালো হবে। দ্বিতীয়ত, কংগ্রেস তার প্রচারে বলছে, প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য একটাই—আদানি-আম্বানিদের মতো হাতে গোনা কয়েক শিল্পপতির সুরাহা করা। কংগ্রেস চায় কৃষক-শ্রমিক-মজুরের মঙ্গল। সেই লক্ষ্যে কংগ্রেস নারীদের হাতে মাসে দেড় হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ভর্তুকি দিয়ে ৪০০ টাকায় রান্নার গ্যাস বিক্রির কথা জানিয়েছে। কৃষিঋণ মওকুফের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং বলেছে, ক্ষমতায় এলে রাজ্যে জাতি গণনা করা হবে।বিজেপির হাতিয়ার ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকার, মোদি-মাহাত্ম্য ও উন্নয়ন। কিন্তু শেষবেলায় তারাও দিয়েছে নানাবিধ জনমুখী প্রতিশ্রুতি, যার একটা ‘লাডলি বেহনা’ প্রকল্প। এর মারফত কংগ্রেসের মতো শিবরাজ সিং চৌহানও নারীদের হাতে টাকা দিতে চেয়েছেন।
কৃষিপ্রধান ছত্তিশগড়ে বিজেপির অবস্থান তুলনামূলক দুর্বল। এ ছাড়া ওই রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংয়ের ওপরেও বিজেপির বর্তমান নেতৃত্বের বিশেষ ভরসা নেই। কৃষকের সমস্যা সেখানে প্রধান ইস্যু। সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই শিবিরই কৃষিপণ্যের বাড়তি সহায়ক মূল্য নির্ধারণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কংগ্রেসের বাড়তি প্রতিশ্রুতি, আদিবাসী–অধ্যুষিত এ রাজ্যের গরিবদের জন্য রাজ্য সরকার ১০ লাখ বাড়ি নির্মাণ করবে। আর বিজেপি বলছে, তারা ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’র আওতায় ১৮ লাখ ঘর তৈরি করবে।মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ের ছয় দিন পর ভোট হয় রাজস্থানে। সেখানে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর ক্ষমতার বদল হয়। সেই নিরিখে এবার কংগ্রেসকে হটিয়ে বিজেপির ক্ষমতা দখল করার কথা। জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী সেই লক্ষ্যে তারা কিছুটা এগিয়েও। কিন্তু রাজস্থানেও বিজেপি ভোটের আগে জানায়নি মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন। মরুরাজ্যে বিজেপির সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বসুন্ধরা রাজে। বিজেপি প্রাথমিকভাবে তাঁকে কোণঠাসা করেও পরে তাঁকে ও তাঁর সব অনুগামীকে টিকিট দিয়েছে। কিন্তু প্রচারে তিনি ব্রাত্য। জনপ্রিয় ধারণা, হিন্দি বলয়ের এই তিন রাজ্যে বিজেপি জিতলেও মুখ্যমন্ত্রী করা হবে নতুন কাউকে। মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও রাজস্থানে বিজেপি শাসকের মুখ বদলে দেবে।
লক্ষণীয়, এই তিন রাজ্যের জনপ্রিয় ও প্রতিষ্ঠিত তিন নেতা নেত্রী শিবরাজ সিং চৌহান, বসুন্ধরা রাজে ও রমন সিং বিজেপির পুরোনো ঘরানার। প্রত্যেকেই বাজপেয়ী-আদভানিকে তাঁদের নেতা বলে মেনে এসেছেন। অন্য অর্থে এই তিনজনের কেউই নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহর অন্ধ অনুগামী নন। এই তিন রাজ্যে শাসকের মুখ বদলাতে পারলে দেশের সব রাজ্যেই মোদি-শাহর একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম হবে।
আরও পড়ুন
প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক
উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন
Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন
উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন
রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন
উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন