

অসীম পাঠকঃ প্রশংসা ও সমালোচনা দুটো এক জিনিস নয় , কিন্তু একটা যোগ আছে শব্দ দুটোর মধ্যে। যেমন প্রশংসা একটা মানুষ কে উজ্জীবিত করে, প্রেরনা দেয়। আবার সমালোচনা আহত করে কিন্তু সুস্থ সমালোচনা যেটা নিজের খুব কাছের লোক বলে সেটা ভুল শোধরাতে আমাদের সাহায্য করে। আবার অনেকেই আছেন যাঁরা প্রশংসায় কার্পন্য বোধ করেন। আবার কিছু মানুষ অহেতুক ভুল টাকেই মাইক্রোস্কোপে খুঁজে সেটাই তুলে ধরে আত্মপ্রসাদ অনুভব করেন। নিজেকে জাহির করার জন্য প্রশংসার বদলে সমালোচনা করতেই আবার কিছু মানুষ পছন্দ করেন।
আবার আপনি হয়তো খুব ভালো লিখেছেন বা আবৃত্তি করেছেন অথবা সুন্দর গান করেছেন , একদম ব্যাকরন মেনে নির্ভুল, কিন্তু এমন কিছু মানুষ আছেন যাঁরা দেখেও দেখবেন না , শুনেও শুনবেন না , হাবে ভাবে বোঝাতে চাইবেন , এ আবার এমন কি। অথচ তিনি সমালোচনা করার ন্যূনতম যোগ্যতা টুকু ও রাখেননা।ভালো সমালোচক হতে গেলে যোগ্যতা লাগে। ভুল গুলো চোখে আঙুল দিয়ে ধরাতে গেলে নিজের সেই বিষয়ে গভীর চর্চা থাকা আবশ্যিক। আবার প্রশংসা কিন্তু সবাই করতে পারেন, এখানে বিষয়টা তাঁর হৃদয়ঙ্গম হোক বা না হোক উৎসাহ দানে তিনি অকৃপন হতে পারেন।
দেখা গেছে যাঁরা বুদ্ধিমান জনসংযোগে উদার এবং মানুষের সাথে মিশতে পছন্দ করেন তাঁরা উদার হাতে এক্সেলেন্ট ওয়ান্ডারফুল বিউটিফুল এই শব্দ গুলো বিলি করেন। এক্ষেত্রে একটু ত্রুটি থাকে যেটা হলো যাঁরা আসলেই এটার যোগ্য নন তাঁরাও প্রভাবিত হন। তবে কিছু ক্ষেত্রে বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা হয়ে যায় ব্যাপারটা।
সংস্কৃতির অন্তর্জলি যাত্রায় দাঁড়িয়ে এই সোশ্যাল মিডিয়ায় গান কবিতা লাইভের মধ্যে শিল্পীদের যে প্রয়াস তাকে কোনোভাবেই ছোটো করে দেখা উচিত নয়। হয়তো অনেক সময় অনেককেই আমাদের ব্যাক্তিগত পছন্দ হয় না সেসব আলোচনা নিজের বন্ধু ও পরিবারের মধ্যে করা যেতেই পারে , সবার যে সবাইকে ভালো লাগবে এমন কোন কথা নয় , কিন্তু একটা মুখোশ আমাদের সবার মধ্যে রয়েছে।
অনেক সময় ভালো বলা মানে প্রশংসা নাও হতে পারে , অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে। একটু কাছে আসা ডিজিটাল প্রেমে প্রভাবিত করা আবার অ্যাডভান্টেজ নেওয়া, নানাবিধ বিষয় থাকতে পারে।আবার দেখা যায় একজন লেখক বা একজন শিল্পী তিনি সরস্বতীর সাধনার ধার ধারেন নি , অথচ তাঁর জন সম্মোহিনী দক্ষতায় তিনি প্রশংসিত, এতো মানুষের সাথে সংযোগ রাখেন যে সবাই তাঁকে খুশী করতে দারুন খুব সুন্দর এসব লিখছেন, আদৌ তিনি যোগ্য নন, অথচ দিন শেষে পাবলিকলি তিনি হিরো। এটা যোগ্যতমের উদবর্তন নয় বা অস্তিত্বের সংগ্রামে বিজয়ী নয় , এটা করুনা ও নয় , এটা একটা টীম গেম। এখানে মূল্যবোধের মূল্যায়ন সঠিক হয় না।
আবার অনেকেই অনুভব করেন যে মেয়েটি খুব ভালো গাইছেন বা ছেলেটি দারুন আবৃত্তি করছেন, কিন্তু সেটা জনসমক্ষে স্বীকার করবেন না। একটা সূক্ষ্ম প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখানে অন্তরায় , তাঁর ভয় প্রশংসা করলে তিনি কোন কারন বশত নিজেই যদি ছোট হয়ে যান , তার চেয়ে চুপ থাকাই শ্রেয়।মোদ্দা কথা হলো পাখী যখন আকাশে উড়ে তখন সে ভরসা রাখে ডানার উপর নয় , নিজের উপর।যিনি মাটি থেকে উঠে এসেছেন তিনি প্রশংসা বা সমালোচনায় বিচলিত হন না , তাঁর ভরসা থাকে নিজের উপর ।
প্রশংসা সমালোচনা এসব চলতেই থাক , আর আমরা হাজারো লাইক কমেন্ট শেয়ারের ভিড় সরিয়ে পরিচিত সেই কাছের মানুষ গুলোকেই খুঁজি, সে প্রশংসা করুক বা না করুক আমরা জানবো সেই একান্ত আপন।
ছোটবেলায় যেমন ভালো আবৃত্তি করলে , জটিল অংকের উত্তর মেলাতে পারলে প্রিয় মাষ্টারমশাইরা গাম্ভীর্য রেখে বলতেন ভালো ….. তাঁদের সেই প্রচ্ছন্ন ভালোবাসার মধ্যে ই প্রস্ফুটিত হতো আরো ভালো করার উজ্জ্বল তর চেতনা। সেই ভালোর মধ্যেই লুকিয়ে আছে জগতের আলো।সে আলোই সম্ভাবনার , সে আলোই প্রতিশ্রুতির সেই আলো আমাদের পথ দেখাক , আলোকিত রাখুক ছোট্ট হৃদয়।
আরও পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন
সম্পাদকীয়- রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র
সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন
Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি
উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন
সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?
উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন