সম্পাদকীয়- বাংলাদেশের নতুন সংসদে বিতর্ক থেকে নীতিগত আলোচনা সবই হবে কিন্তু বিরোধী কণ্ঠ কতটুকু স্থান পাবে?

সদ্য সমাপ্ত সর্বশেষ নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  দল পার্লামেন্টে তিন-চতুর্থাংশ আসন নিয়ে চতুর্থবার ক্ষমতায় ফিরেছেন। ৩০০ আসনের সংসদে হাসিনার দল ২২৩ টি আসন পেয়েছে। প্রাথমিক রিপোর্টে প্রকাশ প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি এবং বিরোধী দলগুলির প্রায় অনুপস্থিতির কারণে নির্বাচনের এই ফলাফল প্রত্যাশা অনুযায়ী ছিল।এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে  নতুন সরকার গঠন নিশ্চিত।অর্থাৎ এটা বলা যায় যে, নির্বাচনের আগে যে ভিন্ন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল, তার মধ্যেও পরিস্থিতি শেখ হাসিনা ও তার দলের জন্য অনুকূল ছিল এবং তাদের সামনে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছিল নগণ্য। তবে এখন দেখার বিষয় শূন্য মাঠে নির্বাচনী বিজয়ের পর যে সরকার ও শাসনব্যবস্থা গঠিত হতে চলেছে তাতে গণতন্ত্র কতটা নিরাপদ থাকবে।

নির্বাচনী মাঠে প্রায় একতরফা লড়াই ও জয়ের পর সেখানে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ আরও ১৫টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছিল। নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকে  অনেক বিরোধী নেতা ও তাদের সমর্থকদের গ্রেফতার করা হয় এবং বিরোধী দলগুলির দ্বারা, এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়। নির্বাচনে ফলাফলের পর সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি একটি আসনে জয়ী হয়, এগারোটি আসন পায় বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি এছাড়াও ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হন।

নির্বাচনের পর সদ্য গঠিত হওয়া নতুন সংসদে বিতর্ক থেকে শুরু করে নীতিগত আলোচনা সবই থাকবে।কিন্তু সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বিরোধীদের কণ্ঠ কতটুকু স্থান পাবে?এটা বোঝা কঠিন নয় যে এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এক তরফা বিজয়ের পর সেখানে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম হতে পারে এমন শঙ্কা থাকলে তা অকারণ নয়। এভাবে যে কোনো দেশে বিরোধী দল ও তার নেতাদের প্রশ্ন করার জায়গা সীমিত হলে সেখানে গণতন্ত্র লঙ্ঘিত হয়।

তবে শেখ হাসিনা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতিতে যে সাফল্য পেয়েছেন তার কৃতিত্ব অবশ্যই তিনি দাবী করতে পারেন । গত এক দশকে অর্থনৈতিক সংস্কারের ফলে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় প্রায় তিন গুণ বেড়েছে এবং বিপুল সংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমা  থেকে বেরিয়ে এসেছে।এছাড়াও অবকাঠামো উন্নয়ন সহ দৃঢ় হাতে জঙ্গিবাদের মোকাবিলা করেছেন।কিন্তু বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতি থেকে ঋণ দেশের  অর্থনৈতিক চিত্রের যথেষ্ট অবনতি করেছে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার ৪০ শতাংশের বেশি অবমূল্যায়ন হয়েছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশের দুই শক্তিশালী প্রতিবেশী ভারত ও চীনের সাথে শেখ হাসিনা দক্ষতার সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে।একদিকে যেমন অবকাঠামো প্রকল্পে চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে বাংলাদেশ একই সময়ে, ভারত-বিরোধী উপাদানের বিরুদ্ধে হাসিনার দমন-পীড়ন পূর্বাঞ্চলে দিল্লির নিরাপত্তা উদ্বেগকে লাঘব করেছে।তবে হাসিনা সরকারকেও বুঝতে হবে যে অর্থবহ গণতন্ত্র ছাড়া রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে।এক্ষেত্রে ক্ষমতাশীল দলকে নিশ্চিত করতে হবে যাতে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় থাকে এবং পরবর্তী সময়ে বিরোধীরা রাজপথে না নেমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে  আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে আগ্রহী থাকে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


PAN-Aadhar link: কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে নিষ্ক্রিয় করেছে

উত্তরাপথ : আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link)করার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ড নিষ্ক্রিয় করেছে৷ আপনি যদি এখনও প্যান কার্ডের সাথে আধার কার্ড লিঙ্ক না করে থাকেন, তাহলে আপনি সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপের আওতায় এসেছেন। আপনি যদি আপনার আধার কার্ডকে প্যানের সাথে লিঙ্ক করতে চান তবে আপনি জরিমানা দিয়ে এটি সক্রিয় করতে পারেন। কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে আধারের সাথে লিঙ্ক না করার কারণে নিষ্ক্রিয় করেছে। একটি আরটিআই-এর জবাবে, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস জানিয়েছে যে আধার কার্ডের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link) করার সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হয়েছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড লিঙ্ক করেননি তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশে ৭০ কোটি প্যান কার্ড বর্তমানে ভারতে প্যান কার্ডের সংখ্যা ৭০.২ কোটিতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৭.২৫ কোটি মানুষ আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক করেছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি

আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?

উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন  দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI  এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে।   বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।  নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা  ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী?  আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত?  পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না?  এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top