বিজ্ঞানের যুগান্তকারী ওষুধ আবিষ্কার এখন যে কোনও বয়সে নতুন দাঁত গজাবে

উত্তরাপথঃ যদিও আমরা দাঁত দুবার গজানোর ধারণায় অভ্যস্ত, কিন্তু জাপানের বিজ্ঞানীরা একটি যুগান্তকারী ওষুধের আবিষ্কার করেছে যা দাঁতের তৃতীয় বার গজানো কে সম্ভব করে তুলতে পারে।আগামী বছরের জুলাই মাসে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।বিজ্ঞানীদের আশা এই ওষুধটি ২০৩০ সালের মধ্যে ডেন্টিস্টদের ব্যবহার করার জন্য উপলব্ধ হবে। বিজ্ঞানীদের দাবী যদি যথায়ত হয় তাহলে এটি বিশ্বের প্রথম ওষুধ হবে যা দাঁত পুনরায় গজাতে সাহায্য করবে।

জাপানের ওসাকার মেডিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট কিটানো হাসপাতালের (Medical Research Institute Kitano Hospital in Osaka, Japan, ) নেতৃত্বাধীন এই গবেষণার লক্ষ্য দাঁতের পুনঃবৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করা যা এতদিন অসম্ভব বলে মনে করা হত।”রিজেনটুথ” নামে পরিচিত ওষুধটি দাঁতে থাকা স্টেম সেলগুলিকে লক্ষ্য করে কাজ করে, যেগুলি নতুন ডেন্টিন তৈরির জন্য দায়ী – শক্ত টিস্যু যা দাঁতের বেশিরভাগ অংশ তৈরি করে৷ এই স্টেম সেলগুলিকে সক্রিয় করার মাধ্যমে, ওষুধটি ক্ষতিগ্রস্ত বা হারিয়ে যাওয়া দাঁতগুলির পুনরায় গজাতে  সক্ষম করে তোলে, যা এতদিন ধরে চলে আসা  ব্যয়বহুল ইমপ্লান্ট পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা দূর করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

দাঁতের পুনরায় বৃদ্ধির এই পদ্ধতি শুধুমাত্র দন্তচিকিৎসার ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাবে তাই নয়, এটি দাঁতের ক্ষতির শিকার লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার ক্ষমতাও রাখে। দাঁত পুনরায় গজানোর ক্ষমতার সাথে, ব্যক্তিদের আর তাদের অনুপস্থিত দাঁত নিয়ে  চিন্তা করতে হবে না, যার ফলে তাদের আত্মবিশ্বাস এবং সামগ্রিক সুস্থতা বৃদ্ধি পাবে।অতিরিক্তভাবে, দাঁতের পুনরায় বৃদ্ধির এই পদ্ধতির বিকাশ সামগ্রিকভাবে ডেন্টাল শিল্পের জন্য সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে। প্রথাগত ডেন্টাল পদ্ধতির একটি আরও প্রাকৃতিক এবং সহজ বিকল্প এটি তুলে ধরে।

জাপানি সংবাদপত্র দ্য মাইনিচির মতে, কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ তাকাহাশি বলেছেন যে দাঁতের পুনর্গঠন প্রত্যেক ডেন্টিস্টের স্বপ্ন। এমতাবস্থায় চিকিৎসা ক্ষেত্রে এই ওষুধটি গেম চেঞ্জার হিসেবে প্রমাণিত হবে। Toregem Biopharma ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট অনুযায়ী, এই চিকিৎসাটি আসলে USAG-1 জিনকে লক্ষ্য করে যা দাঁতের বৃদ্ধি বন্ধ করতে এবং নতুন দাঁতের বৃদ্ধি বাড়াতে ব্যবহৃত হয়।এখন পর্যন্ত এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পশুদের উপর করা হয়েছে এবং সব পরীক্ষাই সফল হয়েছে।ডাঃ কাতসু তাকাহাশির নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায় ইঁদুর সহ প্রাণীদের উপর পরীক্ষা করা হয়েছিল যাদের দাঁতের ধরণ মানুষের মতো।

এই সাফল্যের পরিপ্রেক্ষিতে, ২০২৪ সালে অর্থাৎ এই বছরের সেপ্টেম্বরে মানব ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করা হবে এবং এর জন্য প্রথমে সেই সমস্ত লোককে বেছে নেওয়া হবে যাদের জন্ম থেকেই দাঁত নেই। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তা হবে ডেন্টাল মেডিসিনে বিপ্লবের মতো। শুধু তাই নয়, এতে দাঁতের সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিরা প্রাকৃতিক উপায়ে দাঁত গজাতে পারবেন। ২০৩০ সালের মধ্যে এই ওষুধটি মানুষের জন্য বাজারে পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।দ্য জাপান টাইমসের মতে, দলটি ২০২৫ সালে ২ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ওষুধের ক্লিনিকাল ট্রায়াল পরিচালনা করার পরিকল্পনা করেছে। এরা হবে সেইসব শিশু যাদের জন্মের পর থেকে এখনো দাঁত নেই। শিশুদের ওষুধ দিতে ইনজেকশন ব্যবহার করা হবে বলে জানা গেছে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি

আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে

উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি।  ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে।  আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি।  এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন।  সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে।  এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top