বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ

অসীম পাঠকঃ ভারতের প্রান্ত ভূখন্ডে দন্ডায়মান গৈরিকধারী এক দীপ্ত তরুণ, প্রাণ প্রাচুর্যে তিনি স্পন্দমান দিব্য বিভায় বিভাসিত। যাঁর বজ্র কন্ঠে ধ্বনিত হলো যুব সমাজ কে জাগ্রত করার অগ্নিগর্ভ আহ্বান, ভারত আত্মার জ্যোতির্ময় পুরুষ, খরশান তরবারি র মতো শানিত ব্যাক্তিত্ব আমাদের সর্বজনপ্রিয় স্বামীজী, তিনি ই সেই যৌবনের ঋত্বিক যিনি সোনার ভারত গড়ার দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন কোন পক্বকেশ পরিকল্পনা কারীর কাছে নয়, প্রবল দুর্দম তরুণদের হাতে আধমরা দের ঘা মেরে বাঁচানো সবুজদের কাছে। যাঁর কর্মময় জীবন এবং অমিয় বানী যুগে যুগে লাঞ্ছিত অত্যাচারিত নিপীড়িত মানুষের মুক্তির পথ, স্বামী বিবেকানন্দ র পথ ই হলো সূর্যের পথ বিবর্তনের পথ, তীর্থের পথ।
১৮৬৩ সালে ৯ জানুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দ জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবা বিশ্বনাথ দত্ত ছিলেন নামকরা উকিল। তার মা ভুবনেশ্বরী দেবী তার নামকরণ করেছিলেন, নামকরণের দিনে তিনি বলেন শিব ঠাকুরের দয়ায় ছেলেকে পেয়েছেন তাই তার নাম রাখা হবে বীরেশ্বর, বীরেশ্ব্রর থেকে সংক্ষেপে তাকে ডাকা হল বিলে। ছোটবেলায় নরেণ এতো দুরন্ত ছিলো যে তাঁর মা সর্বদা বলতেন, শিবের কাছে ছেলে চাইলুম, তা তিনি নিজে না এসে পাঠালেন তার চেলা এক ভূতকে। স্কুলে ভর্তির সময় তার নাম দেওয়া হয় নরেন্দ্র,যা পরবর্তীকালে বিবেকানন্দ নামে সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করে। কৈশোর জীবনে নরেন্দ্রনাথ যেমন মেধাবী ছিলেন, তেমনি খুব ভালো গান গাইতে পারতেন। কলেজে পড়ার সময় এক ইংরেজ শিক্ষক তাকে বলেছিলেন জার্মানি ও ইংল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজলে নরেনের মতো মেধাবী ছাত্র একটিও পাওয়া যাবে না। নরেন্দ্রনাথ এর গান শুনে মুগ্ধ হয়ে রামকৃষ্ণ একদিন তাকে দক্ষিণেশ্বরে যেতে বলেন, এফ এ পরীক্ষা দেওয়ার পর একদিন নরেন্দ্রনাথ শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে দক্ষিণেশ্বরে গেলে রামকৃষ্ণ নরেন্দ্রনাথ কে দেখে চমকে ওঠেন, কাঁদতে কাঁদতে বলেন ওরে আমি যে কতদিন ধরে তোর জন্য পথ চেয়ে বসে আছি। এরপর ই নরেন্দ্রনাথ শ্রী রামকৃষ্ণের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
ছোটবেলা থেকে নরেন্দ্রনাথের ধর্মের দিকে প্রবল টান ছিল। তিনি একবার মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে জিজ্ঞেস করেন আপনি কি ঈশ্বর দেখেছেন? কিন্তু দেবেন্দ্রনাথ এর উত্তরে আশ্বস্ত না হয়ে নরেন্দ্রনাথ শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে জিজ্ঞেস করে ঠাকুর আপনি কি ঈশ্বরকে দেখেছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে রামকৃষ্ণ জবাব দেন – ‘হ্যাঁ দেখেছি, তোকে যেমন দেখছি তার চেয়েও স্পষ্ট আমি ঈশ্বরকে দেখতে পাই’। এ কথা শোনার পর তিনি রামকৃষ্ণের ভক্ত হয়ে উঠলেন এবং প্রায়ই যাতায়াত করতে লাগলেন দক্ষিণেশ্বরে।

কিছুদিন পর তাঁর সংসারে অভাব-অনটনের মুহূর্তে একের পর এক চাকরির জন্য ঘোরাঘুরি করতে অ্যাটর্নির অফিসে একটা চাকরি পেলেন এরপর তিনি কয়েকটি বই অনুবাদ করলেন এবং শেষে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের স্কুলে শিক্ষকতা করতে লাগলেন তার সাথেই শ্রীরামকৃষ্ণের উপদেশ মত সাধন-ভজনের নিযুক্ত থাকলেন তিনি এবং শেষ পর্যন্ত তাঁর সন্ন্যাস গ্রহণ করলেন, তখনই তার নতুন নাম হয় বিবেকানন্দ।

শ্রী রামকৃষ্ণের একটি কথায় বিবেকানন্দ তার মনের মূল প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছিলেন, খুঁজে পেয়েছিলেন জীবনের সত্য, শ্রীরামকৃষ্ণ একদিন তাকে বলেছিলেন – ওরে নিজের মুক্তির জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিস, তুই তো ভারী স্বার্থপর, দেশের কোটি কোটি মানুষের মুক্তির আগে ব্যবস্থা কর। দেখবি তখন নিজের মুক্তি আপনিই এসে যাবে।

স্বামীজীর অভিযান
১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে ঠাকুর রামকৃষ্ণের তিরোধানের পর বিবেকানন্দ তিব্বতে গেলেন বৌদ্ধ শাস্ত্র অনুশীলনের জন্য।সেখানে ছয় বছর কাটিয়ে দেশে ফিরে আসলেন, পদব্রজে ভারতবর্ষ পর্যটনে গেলে তিনি ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের অভাব-অনটন দুঃখ-দুর্দশার সম্মুখীন হলে বুঝতে পারেন এই দুর্দশা মোচন করতে না পারলে তাদের কাছে ধর্মের কথা বলা বৃথা।
স্বামীজীর অভিযান
পরাধীন ভারতবর্ষের গ্লানি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিলেন স্বামীজি। তিনি মনে করতেন জাতির ভেতর চেতনা জাগাতে হবে, তাই জাতিকে স্বদেশ মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করে তুলবার জন্য স্বামীজি বলেছিলেন – ‘হে ভারত! ভুলিও না, তোমার নারী জাতির আদর্শ সীতা, সাবিত্রী দময়ন্তী। ভুলিও না,নীচ জাতি, মূর্খ, দরিদ্র আর মুচি মেথর তোমার রক্ত, তোমার ভাই।’
শিকাগোতে স্বামীজী
১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার শিকাগো শহরে অনুষ্ঠিত বিশ্বধর্ম সম্মেলনে স্বামী বিবেকানন্দ মঞ্চে দাঁড়িয়ে যখন বললেন ‘আমার আমেরিকার ভাইবোনেরা’ তখন সবাই স্তম্ভিত হয়ে যায় এমন সম্ভাষন শুনে, শ্রোতাদের করতালিতে মুখর হয়ে উঠে সভাস্থল। তার বলা ভারতের ধর্মের কথা, বেদ, উপনিষদ, গীতার কথা শুনে বিদেশীরাও খুঁজে পেয়েছিল নতুন পথ, অনেকে তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করলেন সেই সময়ে। ধনী ইংরেজ কন্যা মিস মার্গারেট নোবেল তাঁর শিষ্য হলেন। তিনি ভারতে এসে ভগিনী নিবেদিতা নামে পরিচিত হলেন। স্বামীজীর অনুপ্রেরণায় ম্যাক্সমুলার শ্রীরামকৃষ্ণের বাণী ও জীবনী নিয়ে পরবর্তীতে গ্রন্থ রচনা করেন।হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে বেদান্ত দর্শন সম্বন্ধে তার বক্তৃতা শুনে অধ্যাপকরা তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘চেয়ার অব ইস্টার্ন ফিলোসফি’ নামে একটি আসন দান করতে চেয়ে ছিলেন কিন্তু স্বামীজি বলেন তিনি সন্ন্যাসী, কর্ম করতে এসেছেন,সম্মানের জন্য নয় এবং সেই সম্মান তিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

পাশ্চাত্যের মানুষের মনে ভারত সম্বন্ধে তিনি প্রথম মহান ধারণা সৃষ্টি করেছিলেন, স্বদেশে তাঁর পরিচয় স্বদেশপ্রেমিক ও সংগঠক রূপে। তিনি বলেছিলেন ‘স্বদেশবাসীই আমার প্রথম উপাস্য’।
স্বামীজীর সবচেয়ে বড়ো কাজ রামকৃষ্ণ মিশন তৈরী করা । সবাই কে এক করে এগিয়ে চলার বার্তা । এখানে বিঘোষিত হয়েছে জীবনের জয়মন্ত্র। শ্রীরামকৃষ্ণের ভক্তদের নিয়ে বিবেকানন্দ এক সংঘ করে তুলেছিলেন যার নাম রামকৃষ্ণ মিশন, কিছুদিন পর রামকৃষ্ণ মিশনের শাখা স্থাপিত হতে লাগল নানা জায়গায়, প্রধান কার্যালয় ছিল বেলুড়ে।
যে সময় তিনি নির্জনে বাস করার জন্য হিমালয় পর্বতে গিয়েছিলেন সেই সময় কলকাতায় প্লেগ আরম্ভ হলে শত শত মানুষের মৃত্যুর অসহায় পরিস্থিতিতে অবিলম্বে কলকাতায় চলে এসে রোগীদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করলেন মানবপ্রেমিক সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ। তিনি বলেছিলেন – ‘জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।’
১৮৯৫ সালের মাঝামাঝি স্বামী বিবেকানন্দের লেখা বিখ্যাত বই ‘রাজযোগ’ প্রকাশিত হয়। আমেরিকার তৎকালীন বিখ্যাত দার্শনিক উইলিয়াম জেমস এবং রাশিয়ার মনীষী টলস্টয় সেই বইটি পড়ে মুগ্ধ হন।

১৯০০ খ্রীস্টাব্দে ফ্রান্সের প্যারিস নগরীতে বিশ্বধর্ম সম্মেলনে হিন্দুধর্মের প্রতিনিধিত্বের জন্য বিবেকানন্দকে আমন্ত্রণ জানানো হয়, সেবারও তার বক্তৃতায় অগণিত বিদেশি মানুষ মুগ্ধ হয়েছিলেন।

১৯০২ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুলাই সমাধিস্থ হলেন মানব প্রেমিক বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ।

বিশ্বপথিক বিবেকানন্দের তিরোধানেরপর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন – “বিবেকানন্দ পূর্ব ও পশ্চিমকে দক্ষিণে ও বামে রাখিয়া মাঝখানে দাঁড়াইতে পারিয়াছিলে।…. ভারতবর্ষের সাধনাকে পশ্চিমে ও পশ্চিমের সাধনাকে ভারতবর্ষে দিবার ও লইবার পথ রচনার জন্য নিজেই জীবন উৎসর্গ করিয়াছিলেন।”

রামকৃষ্ণের পরম শিক্ষা ‘যত মত তত পথে’ বিশ্বাসী ছিলেন তাঁর শিষ্য বিবেকানন্দ। সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করতেন তিনি, তিনি যেমন বুদ্ধদেবের ভক্ত ছিলেন, তেমনি ইসলাম ধর্মের প্রশংসা করতেন আবার যিশুখ্রিস্টের সম্বন্ধে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন – ‘যিশুখ্রিস্টের সময় আমি বেঁচে থাকলে আমার চোখের জলে নয়, বুকের রক্ত দিয়ে তাঁর পা ধুয়ে দিতাম।‘

ভারতের ধর্ম ও মানুষের সম্বন্ধে বিশ্ববাসীর মনে শ্রদ্ধার ভাব জাগিয়ে তুলেছিলেন বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ।

স্বামী বিবেকানন্দের বানী প্রতিটি মানুষ কে আলোর পথ দেখিয়ে চলেছে ।
“যখন আপনি ব্যস্ত থাকেন তখন সব কিছুই সহজ বলে মনে হয় কিন্তু অলস হলে কোনো কিছুই সহজ বলে মনে হয়না”
“নিজের জীবনে ঝুঁকি নিন, যদি আপনি জেতেন তাহলে নেতৃত্ব করবেন আর যদি হারেন তাহলে আপনি অন্যদের সঠিক পথ দেখাতে পারবেন”
“কখনো না বলোনা, কখনো বলোনা আমি করতে পারবোনা । তুমি অনন্ত এবং সব শক্তি তোমার ভিতরে আছে, তুমি সব কিছুই করতে পারো”

“যা কিছু আপনাকে শারীরিক, বৌদ্ধিক এবং আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল করে তোলে সেটাকে বিষ ভেবে প্রত্যাখ্যান করুন”
“দুনিয়া আপনার সম্বন্ধে কি ভাবছে সেটা তাদের ভাবতে দিন। আপনি আপনার লক্ষ্যগুলিতে দৃঢ় থাকুন, দুনিয়া আপনার একদিন পায়ের সম্মুখে হবে”
“কখনও বড় পরিকল্পনার হিসাব করবেন না, ধীরে ধীরে আগে শুরু করুন, আপনার ভূমি নির্মাণ করুন তারপর ধীরে ধীরে এটিকে প্রসার করুন”
“ইচ্ছা, অজ্ঞতা এবং বৈষম্য – এই তিনটিই হলো বন্ধনের ত্রিমূর্তি”

“মানুষের সেবাই হলো ভগবানের সেবা”
“মহাবিশ্বের সীমাহীন পুস্তকালয় আপনার মনের ভীতর অবস্থিত”
“ওঠো এবং ততক্ষণ অবধি থেমো না, যতক্ষণ না তুমি সফল হচ্ছ”
“যতক্ষণ না আপনি নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখবেন, ততক্ষন আপনি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করবেন না”

“মনের শক্তি সূর্যের কিরণের মত, যখন এটি এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হয় তখনই এটি চকচক করে ওঠে”
“যেই রকম আপনি ভাববেন ঠিক সেইরকমই আপনি হয়ে যাবেন | যদি আপনি নিজেকে দুর্বল হিসাবে বিবেচনা করেন তাহলে আপনি দুর্বল হয়ে যাবেন আর আপনি যদি নিজেকে শক্তিশালী মনে করেন, তাহলে আপনি শক্তিশালী হয়ে উঠবেন।”
“শক্তিই জীবন, দুর্বলতাই মৃত্যু, বিস্তার জীবন, সংকোচন মৃত্যু, প্রেম জীবন, ঘৃণা মৃত্যু”
“প্রত্যেকটি ধারণা যা আপনাকে দৃঢ় করে সেটাকে আপন করে নেওয়া উচিত এবং প্রত্যেকটি ধারণা যা আপনাকে দুর্বল করে দেয়, তা প্রত্যাখ্যান করা উচিত”…. নরেণের ছোটবেলা র একটি গল্প যা প্রতিটি মানুষের কাছে শিক্ষনীয়, তার ধৈর্য সাহস এবং বিশ্বাস অনুকরণযোগ্য।

বীর সন্ন্যাসী বিবেকের বানী আমাদের প্রেরণা। যখন স্বাধীনতার নামে দিকে দিকে চলছে ঊগ্র স্বেচ্ছাচারিতা , যখন গোটা বিশ্বের জাগ্রত যৌবন আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে , সেই উত্তাল সময়ের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আজকের অসহায় যৌবন কে বাঁচানোর জন্য বিবেকানন্দ র প্রাসঙ্গিকতা , তাঁর জীবন দর্শন অনুধাবন এবং অনুসরণ করার মাহেন্দ্রক্ষণ এই সময়। এর ফলে হতাশা গ্রস্ত ছাত্র যুব সমাজ বাঁচার আশা এবং মুক্তি র আলো খুঁজে পাবে।
ছোটবেলা থেকে নরেন ছিল শিবের ভক্ত, তিনি শিব ঠাকুরের পুজো করতেন এবং অহরহ শিবের সামনে বসে ধ্যান করতে ভালোবাসতেন। শুধু তাই নয় মাঝে মধ্যে সে তার বন্ধুদের সাথে‌ও ধ্যান ধ্যান খেলতেন। সেইমতো‌ই একদিন বিলে ও তার বন্ধুরা বসে ধ্যান ধ্যান খেলছিল। হঠাৎ ‌ই খেলার সময় একটি সাপ এসে হাজির হয় তাদের সামনে। সাপের ফোঁস শুনে তার বন্ধুরা চোখ খোলে এবং প্রকাশ্য দিবালোকে সাপ দেখে যারপরনাই ভয় পেয়ে যায়। একমুহুর্ত অপেক্ষা না করে তারা আসন ছেড়ে উঠে পালিয়ে যায়। দরজার বাইরে থেকে তারা নরেনকেও ডাকাডাকি করতে থাকে। কিন্তু ধ্যানমগ্ন নরেনের মধ্যে উঠে আসার কোনোও প্রবণতা না দেখতে পেয়ে তারা সেখান থেকে চলে যায়। কিছুক্ষন পর সাপটি‌ও নরেনকে কিছু না করে তার পাশ কাটিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। পরে নরেন ধ্যানভঙ্গ হলে নরেন বলেছিল যে সে তার বন্ধুদের ডাক শুনতে‌ই পায়নি। ধ্যানমগ্ন অবস্থায় তার মনে হচ্ছিল যে সে যেন এক অন্য জগতের বাসিন্দা হয়ে গিয়েছে, যেখানে পরিপূর্ণ আনন্দের পরিপ্লাবন।
এই গল্পটি থেকে আমরা একটি শিক্ষা পাই। কোনো কাজে অসফল হ‌ওয়া বা পিছু হটে আসার একটি মূল কারণ হল মনোযোগের অভাব আর সম্মুখের বাঁধা। আমারা জীবনে কোনো না কোনো কাজ করতে গিয়ে হয় অসফল হয়েছি নতুবা বাঁধাপ্রাপ্তির ভয়ে এগোতেই পারিনি। নরেনের ধ্যানযোগের মতো মনোযোগ সহকারে যদি আমরা কাজে নিজেদের নিয়োজিত করি, তবে সাপরুপী কোনো বাধা বিপত্তিই আমাদের টলাতে পারবেনা।
বিশ্ব মানবাত্মার জয়গানে মুখরিত সপ্তর্ষি র এক ঋষি স্বামী বিবেকানন্দ আজ ও বিশ্ববাসীর হৃদয়ে স্বমহিমায় বিরাজ করছেন । তিনি মেরুদন্ড হীন যুব সমাজ কে লড়তে শিখিয়েছেন । কর্মময় জগতের নতুন সংজ্ঞা উপস্থাপিত করেছেন । কবির ভাষাতেই বলি ভেঙেছো দুয়ার এসেছো জ্যোতির্ময়, তোমার ই হউক জয় ।
পরিশেষে বলবো আমার মাথা নত করে দাওহে তোমার চরণধূলার তলে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Snake Robot : এবার মহাকাশে সাপ রোবট পাঠাবে NASA

উত্তরাপথ: মহাকাশ অনুসন্ধানের সীমানা আরও বিস্তৃত করতে এবং বহির্জাগতিক পরিবেশের দ্বারা সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলি কাটিয়ে উঠতে NASA ক্রমাগত উদ্ভাবনী প্রযুক্তির সন্ধান করেছে। এর একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হল Snake robot বা সাপের মতো রোবট তৈরি করা যা মহাকাশে নেমে যাবতীয় অনুসন্ধানের কাজগুলি করবে এবং সেই সাথে মহাকাশে বসবাসের ক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণ করবে। এই যুগান্তকারী সৃষ্টিতে মহাকাশ অভিযানে বিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা রয়েছে, যা দূরবর্তী এবং প্রতিকূল পরিবেশে গবেষণার কাজ নিখুঁত ভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করবে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top