বিকানির ও ভুজিয়া

প্রসিদ্ধ বিকানিরী ভুজিয়া প্রস্তুত পর্ব

প্রিয়াঙ্কা দত্তঃমরু শহর বিকানির আর তার এক জগৎবিখ্যাত নোনতা মুখরোচক “ভুজিয়া “। ২০১০ সালে যা পেয়ে গেছে জি আই ট্যাগ। অর্থাৎ সারা বিশ্বে যেখানেই এই ভুজিয়া তৈরি হোক না কেন ,” বিকানিরী ভুজিয়া ” নাম পাওয়ার অধিকার তাদের নেই। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি এই খাবারের উৎপত্তিও এর স্বাদের মতোই আকর্ষণীয়।

রাজস্থানের অন্যতম জনপ্রিয় শহর বিকানির। যোধপুরের রাজা রাও যোধার পুত্র রাও বিকা স্বপ্ন দেখেছিলেন এমন এক রাজ্যের যেখানে প্রজারাই হবে রাজার পরিচয়। মরুস্থলির মধ্যে দেবী করনি মাতার আশীর্বাদে তিনি গড়ে তুললেন শহর বিকানির। রুক্ষ শুষ্ক এই জনপদের মানুষের জীবনে প্রতি নিয়ত চলত বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম। রাও বিকা সেই সংগ্রামকেই সংযোজিত করলেন তাঁর জীবনেও। গড়ে তুললেন জুনাগড় দুর্গ। আর সাধারণ মানুষের খাদ্য যেমন বাজরা, রাগী, তিন্ডা, ফনী মনসা, এলোভেরা, টক কুল এই সবই রাজকীয় হয়ে উঠে এলো রাজ পরিবারের খাদ্য তালিকায়। এভাবেই বংশ পরম্পরায় বিকানিরের খাদ্য তালিকা সমৃদ্ধ হতে থাকলো নিত্য ব্যবহৃত উপাদান দিয়ে তৈরি নিত্য নতুন খাদ্যে।

বিকনিরের বিখ্যাত ভুজিয়ার জন্মও এমনই এক পরীক্ষা নিরীক্ষার দ্বারা। জনশ্রুতি আছে রাও বিকার বংশধর মহারাজা শ্রী ডুঙ্গার সিং একবার আগ্রা সফরে গিয়ে সেখানকার ডালমুট চেখে বেজায় খুশি হয়েছিলেন। নিজের গড়ে ফিরেই তাঁর খানসামাদের আদেশ দেন তেমনই মুখরোচক কোনও পদ তৈরি করতে। আর তার ফল যে এমন হবে , তা হয়ত স্বয়ং ডুঙ্গার সিং ও হয়তো কল্পনা করতে পারেন নি । বিকানিরের  জলহাওয়া আর নিজস্ব মশলার গুণে ভূজিয়া হয়ে উঠলো বিশ্ব বিখ্যাত। তবে নিশ্চয় সে সফর ছিল দীর্ঘ একশ বছরেরও বেশি সময়ের ।

১৮৭৭ সালে ডুঙ্গার সিং প্রথম তাঁর অতিথিদের পাতে পরিবেশন করেছিলেন বেসন, স্থানীয় মুসুর ডাল বা মথ , লংগী লঙ্কা গুঁড়ো  আর বিশেষ কিছু উপাদান মিশিয়ে তৈরি ছাঁকা তেলে  ভাজা সোনালি রঙের মুচমুচে ভুজিয়া। অতিথিদের সাথে স্বয়ং মহারাজ ও এর অতুলনীয় স্বাদে মোহিত হয়ে গেলেন। আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ধীরে ধীরে বিকানিরের সাধারণ মানুষের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠলো ভুজিয়ার ব্যাবহার। কবি অশোক বাজপেয়ী ঠাট্টা করে বলেছেন যে, বিকানীরের  অর্ধেক জনসংখ্যা ভুজিয়া প্রস্তুত করে আর বাকী অর্ধেক তা উদরস্থ করে। 

বর্তমানে ভুজিয়া প্রস্তুতি হয়ে উঠেছে রাজস্থানের অন্যতম কুটির শিল্প। প্রতিদিন প্রায় আড়াই লাখ প্রায়  শ্রমিক মিলে ২৫০  টন ভুজিয়া প্রস্তুত করেন বিকানিরের অলিতে গলিতে। নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই যুক্ত এই শিল্পে। ভোরের আলো ফোটার আগেই ভুজিয়া গলিতে ঊনানে বসে যায় দৈত্যাকৃতি কড়াই। কাজ চলে উদয়াস্ত। সেই ভুজিয়া রপ্তানি হয় সারা ভারত সহ বিদেশেও। এই ব্যবসায় বিকাজী, হলদিরাম প্রভৃতি কোম্পানিগুলো যে প্রভূত লাভের মুখ দেখেছে সে কথা বলাই বাহুল্য।

আসলে খাবারটির একটি বিশেষত্ব এই যে, জলখাবার হোক বা টপিংস হিসাবে, চাটের প্লেটে হোক বা ভাতের পাশে দিব্যি নিজের স্থান পাকা করে নেয় ভুজিয়া। তাই পাঞ্জাবী হোক বা মারোয়ারি, বাঙালি হোক বা তামিল ,ভুজিয়া হয়ে উঠেছে সবার প্রিয়। আর সবার সাথে মিলে মিশে যাওয়ার এই গুণ তাকে করে তুলেছে অনন্য। 

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


West Bengal Panchayet Election 2023: পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ

উত্তরাপথ: এ যেন অনেকটা প্রত্যাশিত ফলাফল । সদ্য সমাপ্ত পশ্চিমবঙ্গ Panchayet Election 2023 ফলাফল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জন্য আগামী ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে যথেষ্ট হতাশাবাঞ্জক । এই নির্বাচনের আগে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব তাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে যে আশার বাণী শুনিয়েছিল বাস্তবে তা অশ্বডিম্ব প্রসব করল । গত বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে জঙ্গলমহল,উত্তরবঙ্গ সহ নন্দিগ্রামে যে বিশাল গেরুয়া ঝড়ের আশা করেছিল শুধুমাত্র নন্দিগ্রামে ছাড়া পুরটাই হাতছাড়া হল বিজেপির । .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top