মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের বড় কারন, এটি নিঃশব্দে আমাদের জলে অনুপ্রবেশ করে, বাস্তুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে চলেছে
উত্তরাপথঃ গোয়া-ভিত্তিক CSIR-ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওশানোগ্রাফি (NIO) দ্বারা গঙ্গা এবং যমুনা নদীর উপর একটি সমীক্ষা চালানো হয় । এই সমীক্ষায় ভারতীয় বিজ্ঞানীরা গঙ্গা ও যমুনায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছেন, যা গাঙ্গেয় সমভূমির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই বিষয়ে, ডক্টর মহুয়া সাহার নেতৃত্বে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওশানোগ্রাফি (এনআইও) এবং ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি কাউন্সিলের সাথে যুক্ত বিজ্ঞানীদের একটি দল সম্প্রতি একটি নতুন গবেষণা করেছেন, তাতে গবেষকরা হরিদ্বার থেকে পাটনা পর্যন্ত গঙ্গায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের চিহ্ন খুঁজে পেয়েছেন। যা কিছুটা হলেও প্রমাণ করে যে এই পবিত্র নদীগুলোর জল কতটা দূষিত হয়েছে। এই মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলি ভূপৃষ্ঠ থেকে জলের পলি সহ নদীর সমস্ত অংশকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে।
এটি লক্ষণীয় যে আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতিতে গঙ্গা কেবল একটি নদী নয়, গঙ্গা আমাদের আধ্যাত্মিক অনুভূতির সাথেও যুক্ত।এতদিন পর্যন্ত গঙ্গায় প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে এখনও খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় নি। এই কারণেই এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা গঙ্গা ও যমুনা নদীতে উপস্থিত মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি নিয়ে তদন্ত করেছেন। এর পাশাপাশি, বিজ্ঞানীরা এই সূক্ষ্ম প্লাস্টিকের কণাগুলির ঋতু অনুসারে বন্টন বোঝার চেষ্টা করেছেন।
সমীক্ষায়, বিজ্ঞানীরা শুধুমাত্র জিআইএস ব্যবহার করেননি বরং ফিল্ড সার্ভেও করেছেন সংবেদনশীল এলাকা চিহ্নিত করতে, যেখানে প্লাস্টিকের কনার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি রয়েছে।এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেন, শুষ্ক মৌসুমের তুলনায় বর্ষাকালে মাইক্রোপ্লাস্টিকের মাত্রা অনেক বেশি ছিল। এর সাথে, বর্ষাকালে ভূপৃষ্ঠের জলে এই সূক্ষ্ম প্লাস্টিকের কণার উপস্থিতি হরিদ্বারে সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে, যেখানে পাটনায় সবচেয়ে কম। শুষ্ক মৌসুমে, আগ্রায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের মাত্রা সবচেয়ে বেশি ছিল, যেখানে পাটনা এবং হরিদ্বারে কম ছিল।
গবেষণায় পাওয়া সবচেয়ে সাধারণ প্লাস্টিকের কণা ৩০০ মাইক্রোমিটার এবং পাঁচ মিলিমিটারের মধ্যে ছিল। এগুলো ছিল ফাইবার আকৃতির এবং এদের রঙ ছিল নীল। এই টুকরাগুলির বেশিরভাগই পলিঅ্যাক্রিলামাইড, অর্থাৎ এই কণাগুলি একটি সিন্থেটিক পলিমার দিয়ে তৈরি। এমন পরিস্থিতিতে, গঙ্গা-যমুনার জলে এই কৃত্রিম পলিমারের উপস্থিতি কেবল নদীগুলিতে বসবাসকারী জীবের জন্যই নয়, সিন্ধু-গঙ্গার সমভূমির জন্যও হুমকি হয়ে উঠতে পারে। গবেষণা অনুসারে, ভারত মহাসাগরে পৌঁছানো প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রধান উৎস হল গঙ্গা নদী।
কোথায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে?
গবেষণার সময়, গবেষকরা প্রতি বর্গ মিটারে প্লাস্টিকের টুকরার সংখ্যা এবং তাদের ওজনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন স্থানে তাদের উপস্থিতি গণনা করেছেন। গবেষণায় উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, বর্ষার তুলনায় শুষ্ক মৌসুমে ম্যাক্রোপ্লাস্টিকের ঘনত্ব অনেক বেশি ছিল।এটি লক্ষণীয় যে শুষ্ক মৌসুমে, আগ্রায় এর উপস্থিতি সর্বাধিক ছিল, যেখানে প্রতি বর্গমিটারে এই ম্যাক্রোপ্লাস্টিকের ৫.৯৫ টুকরা পাওয়া গেছে। এর পরে, প্রয়াগরাজে প্রতি বর্গমিটার এলাকায় তাদের উপস্থিতি ছিল ৫.১৮। হরিদ্বারে, ৩.৬৮ কণা পাওয়া গেছে, পাটনায়, প্রতি বর্গমিটারে ৩.০৫ টুকরা পাওয়া গেছে। আমরা যদি বর্ষাকাল দেখি, আগ্রায় প্রতি বর্গমিটারে ৪.১৩ টুকরো ম্যাক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।
নেচার কমিউনিকেশনস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট জার্নালে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, নদীর তলদেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি বালির প্রাকৃতিক প্রবাহকে প্রভাবিত করছে।শুধু তাই নয়, এটি অদূর ভবিষ্যতে নদীর বাস্তুতন্ত্রেরও মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।এছাড়াও আমাদের দেশের বহু অঞ্চলের জলসরবরাহ ব্যবস্থাও এই সব নদীগুলির জলের উপর নির্ভরশীল।তারফলে এই সব মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণাগুলি জলবাহিত হয়ে আমাদের শরীরেও প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এর আগে বিজ্ঞানীরা কাবেরী নদীতে উপস্থিত মাইক্রোপ্লাস্টিক সম্পর্কে একটি বড় তথ্য উদ্ঘাটন করেছিলেন। ইকোটক্সিকোলজি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সেফটি জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা অনুসারে, কাবেরী নদীতে উপস্থিত মাইক্রোপ্লাস্টিক মাছের কঙ্কালের বিকৃতি ঘটাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ক্রমবর্ধমান প্লাস্টিক দূষণের কারণে মাছের বৃদ্ধিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
গবেষকরা সংশ্লিষ্ট পৌর কর্পোরেশনগুলির সাথে গবেষণার ফলাফলগুলিও নিয়ে আলোচনা করেছেন, যাতে এই মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলি জলের উৎসগুলিতে পৌঁছানো থেকে রোধ করা যায়। এর সাথে গবেষকরা প্রতিটি এলাকার জন্য পৃথক কর্ম পরিকল্পনা করার পরামর্শও দিয়েছেন।অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) অনুসারে, বিশ্বব্যাপী সমুদ্রে ৩০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হয়েছে, যেখানে নদীতে এর পরিমাণ ১০৯ মিলিয়ন টনের সমান।
এবার আসা যাক মাইক্রোপ্লাস্টিক কি প্রসঙ্গে। মাইক্রোপ্লাস্টিক হল প্লাস্টিকের বড় টুকরো ছোট ছোট সূক্ষ্ম কণাতে ভেঙ্গে গেলে তাকে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। এর পাশাপাশি, জামাকাপড় এবং অন্যান্য আইটেমগুলির মাইক্রোফাইবারগুলি ভেঙে গেলে মাইক্রোপ্লাস্টিকও তৈরি হয়। সাধারণত, এক মাইক্রোমিটার থেকে পাঁচ মিলিমিটার পরিমাপের প্লাস্টিকের টুকরোকে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে।
আরও পড়ুন
৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল: হাইকোর্ট ও পর্ষদের টানাপড়েন অব্যাহত
উত্তরাপথ: সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রাথমিকের ৩৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে আর তাই নিয়ে শুরু হয়েছে যুক্তি ও পাল্টা যুক্তির খেলা। বিচারপতির বক্তব্য পশ্চিমবঙ্গের এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের সময় এই শিক্ষকেরা অপ্রশিক্ষিত ছিলেন আর এই 'অপ্রশিক্ষিত প্রাথমিক শিক্ষকদের' নিয়োগ করা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা এবং সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ে। এই পদ্ধতির ত্রুটির কারণে এই শিক্ষকদের নিয়োগ বাতিল করা হল। .....বিস্তারিত পড়ুন
Green Washing থেকে সাবধান
প্রিয়াঙ্কা দত্ত, রঘনাথপুর: আপনি নিশ্চয়ই একজন পরিবেশ সচেতন নাগরিক? যদি নাও হন তবুও বাজার চলতি ভোগ্যপণ্য খরিদ করার সময় আপনি কি এখন একশ শতাংশ প্রাকৃতিক দ্রব্য কিনতেই পছন্দ করেন? এবং কেনেন? প্রসাধন দ্রব্য কেনার সময় কি আপনি নিম ,তুলসী, চন্দন বা গোলাপের নির্যাস যুক্ত জিনিসই কেনেন ? আর জামাকাপড়? একশ শতাংশ পচনশীল পদার্থ দিয়ে তৈরী? টুথ পেস্ট থেকে আরম্ভ করে তেল, সাবান, শাম্পু কিংবা ভোজ্য তেল , ফ্রুট জুস বা খাবার জিনিস! সব কিছুতেই আপনি পরিবেশে বান্ধব প্যাকেজিং এবং সম্পূর্ন প্রাকৃতিক এই লেবেল দেখেই কিনছেন। তাই না? বর্তমান যুগের .....বিস্তারিত পড়ুন
ইঞ্জিনিয়ারড ব্যাকটেরিয়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা রাখে
উত্তরাপথ: লরেন্স বার্কলে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি এবং ইউসি বার্কলে এর সহযোগিতামূলক গবেষণায় গবেষকরা একটি অভিনব ব্যাকটেরিয়া ইঞ্জিনিয়ারড করেছেন যা জ্বালানি, ওষুধ এবং রাসায়নিক উত্পাদনের সময় উত্পন্ন গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমনকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে ডিকার্বনাইজশন এর মাধ্যমে। সম্প্রতি Nature জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এই আবিষ্কারটি । আর এটি "Carbene Transfer Chemistry in Biosynthesis" নামে পরিচিত । একটি অভিনব প্রতিক্রিয়ার সাথে প্রাকৃতিক এনজাইমেটিক বিক্রিয়াকে সংহত করতে ব্যাকটেরিয়াকে কাজে লাগায়। আর যা সাধারণত জীবাশ্ম .....বিস্তারিত পড়ুন
মানুষে মানুষে ঐক্য কীভাবে সম্ভব
দিলীপ গায়েন: হিন্দু,মুসলমান,ব্রাহ্মণ,তফসিলি।সকলেই মানুষ।কিন্তু এদের মধ্যে যে ব্যবধান তা হলো ধর্ম ও সাংস্কৃতিক। এই ব্যবধান মুছতে পারলে একাকার হওয়া সম্ভব। যারা বলছে আর্থিক সমতা প্রতিষ্ঠা হলে ব্যবধান মুছে যাবে, তাদের কথাটি বোধ হয় সঠিক নয়।তার প্রমাণ গরিব ও শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে আর্থিক ব্যবধান নেই। অথচ জাতিভেদ রয়ে গেছে। তেমনি কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা ব্যতীত ধনী ও শিক্ষিত সমাজে আর্থিক সচ্ছলতা থাকলেও জাতিভেদ রয়ে গেছে। একমাত্র হাসপাতালে বা চিকিৎসা ব্যবস্থায় জাতিভেদ নেই।কারণ সেখানে তো প্রচলিত ধর্মজাত প্রভেদ বা পরিচয় নেই। আছে মেডিসিন, যা সম্পূর্ণ বিজ্ঞান। কারোর ধর্ম বা জাত দেখে প্রেসক্রিপশন হয় কি? এখানে মানুষের একমাত্র এবং শেষ পরিচয় সে মানুষ। .....বিস্তারিত পড়ুন