

উত্তরাপথঃ ভারতীয় বিজ্ঞানীরা তাঁর একটি নতুন রিসার্চ প্রকাশ করেছেন তাতে মাশরুমে কোভিড-১৯ এবং অন্যান্য ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষমতা রয়েছে। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য প্রযুক্তি মন্ত্রালয় গত শুক্রবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে, যে মাশরুমের বায়ো একটিভ উপাদানে কোভিডের মুকাবলা করার ক্ষমতা রয়েছে।মাশরুম দীর্ঘদিন ধরে তাদের পুষ্টির জন্য স্বীকৃত। এগুলি কম ক্যালোরি, চর্বিমুক্ত এবং ভিটামিন (বি, সি, এবং ডি), খনিজ পদার্থ (আয়রন, সেলেনিয়াম এবং পটাসিয়াম) এবং খাদ্যতালিকাগত ফাইবারের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। এই বৈশিষ্ট্যগুলি মাশরুমগুলিকে একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যের মূল্যবান সংযোজন করে তোলে। সেইসাথে এটি সামগ্রিক সুস্থতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়াতে সাহায্য করে।ভারতীয় বিজ্ঞানীরা মাশরুমের অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্যগুলি নিয়ে তদন্ত করছেন, বিশেষ করে কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষাপটে। প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে যে কিছু মাশরুম প্রজাতির মধ্যে বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ রয়েছে ,তারফলে এটি বিভিন্ন ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিভাইরাল কার্যকলাপ প্রদর্শন করতে সক্ষম। এই যৌগগুলি,মূলত পলিস্যাকারাইডস এবং লেকটিন।
ভাইরাল সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরকে রক্ষা করার জন্য একটি শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাশরুমগুলিতে ইমিউনোমোডুল্যাটরি বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেছে, যার অর্থ তারা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ এবং উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে। মাশরুমে পাওয়া যৌগগুলি, যেমন বিটা-গ্লুকান, রোগ প্রতিরোধক কোষগুলিকে উদ্দীপিত করতে, সাইটোকাইনগুলির উৎপাদনকে উন্নীত করতে এবং প্রাকৃতিক ঘাতক কোষগুলির কার্যকলাপকে উন্নত করতে সাহায্য করে, যা ভাইরাল সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভারতীয় বিজ্ঞানীরা সক্রিয়ভাবে সেই প্রক্রিয়াগুলি অধ্যয়ন করছেন যার মাধ্যমে মাশরুমগুলির অ্যান্টিভাইরাল প্রভাব উল্লেখযোগ্য। কিছু গবেষণা পরামর্শ দেয় যে মাশরুম যৌগগুলি হোস্ট কোষে ভাইরাস প্রবেশে বাধা দিতে পারে বা ভাইরাল সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। ইন্সটিটিউট অফ অ্যাডভান্স স্ট্যাডি ইন সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আইএএসএসটি), যা ভারত সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ (ডিএসটি)র অধীনে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান। তাদের এই অধ্যয়নের ফলাফল জার্নাল অফ ফাঙ্গিতে প্রকাশিত হয়েছে।বিজ্ঞানীদের মতে কোভিড-19 এর সাথে লড়াই করার জন্য মানুষের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
মানুষের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করার জন্য জৈব-সক্রিয় যৌগ হিসাবে বিজ্ঞানীরা মশরুম গ্রহণের কথা বলেছেন। বিজ্ঞানীদের যুক্তি মাশরুমে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা যেমন বেশী রয়েছে সেইসাথে পুষ্টি সম্পর্কিত গুণও উপস্থিত রয়েছে।প্রোফেসর আশীষ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি গবেষণা দল এই অনুসন্ধান করেছে তাতে তারা দেখেছেন কোভিড-19-এর বর্তমান চিকিৎসার তুলনায় মশরুম থেকে প্রাপ্ত বয়োঅ্যাক্টিভ উপাদানগুলি বেশী কার্যকর। মশরুম তার বায়োঅ্যাক্টিভ পলিসেকারাইড এবং ইম্যুনোমড্যুলেটিং যৌগিক যারা প্রতিরক্ষা পদ্ধতিতে সাহায্য করে সেই সাথে ভাইরাস, ব্যাক্টিরিয়া এবং ফাংগাস সংক্রমণের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে। যদিও প্রাথমিক ফলাফলগুলি আশাব্যঞ্জক, তবে এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে মাশরুমের অ্যান্টিভাইরাল সম্ভাবনা সম্পূর্ণরূপে বোঝার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন। ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলি সহ কঠোর বৈজ্ঞানিক অধ্যয়নগুলি এই দাবিগুলিকে বৈধতা দেওয়ার জন্য এবং নির্দিষ্ট মাশরুমের প্রজাতি, যৌগ এবং ডোজগুলি নির্ধারণ করতে প্রয়োজনীয় যা ভাইরাল সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর হতে পারে।
আরও পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন
Fructose: নতুন গবেষণায় ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার কারণ বলা হয়েছে
উত্তরাপথঃ একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জোরালো প্রমাণ দেওয়া হয়েছে যে ফ্রুক্টোজ (Fructose), সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয়গুলিতে থাকা এক ধরনের চিনি, যা স্থূলতার প্রাথমিক চালক। বছরের পর বছর ধরে, পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা , পাশ্চাত্য খাদ্যে, স্থূলতার মূল কারণ নিয়ে বিতর্ক করেছেন, কেউ কেউ অত্যধিক ক্যালোরি গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, অন্যরা কার্বোহাইড্রেট বা চর্বি জাতীয় খাবারকে দায়ী করেছেন। Obesity জার্নালে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার প্রকৃত চালক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।The University of Colorado Anschutz Medical Campus এর Dr. Richard Johnson এবং তার দলের মতে, ফ্রুক্টোজ হল একটি সাধারণ চিনি যা ফল এবং মধুর প্রাথমিক পুষ্টি। .....বিস্তারিত পড়ুন
সম্পাদকীয়- রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র
সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন
Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি
উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন