মৈত্রেয়ী চৌধুরী মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে বিশেষত এই দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র বলে মনে করা হয়। শাওন মাস বা শাবান মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখের মধ্যবর্তী রাত শবেবরাত এর জন্য উপযুক্ত সময়। এই রাতে আল্লাহ তার বান্দাদের বিশেষ ভাবে ক্ষমা করে দেন। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের অনেক মুসলমান নফল ইবাদাতের মাধ্যমে শবে বরাত পালন করেন। বিভিন্ন অঞ্চলে এই রাতে তারা তাদেরকে মৃত পূর্ব পুরুষদের জন্য আল্লাহের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য প্রার্থনার আয়োজন করে থাকেন।
শাবান মাস কি? শবে বরাত মানেই বা কি? এই প্রশ্ন মনে আসা স্বাভাবিক। শাবান মাসের নামকরণের পিছনে রয়েছে এক ইতিহাস।শাবান মাসের আগমনে মুসলিমদের হৃদয়ে ছড়িয়ে পড়ে আনন্দ ও খুশির এক অনাবিল অনুভূতি। কেননা, শাবান মাসের পরবর্তীতে মাসেই আগমন ঘটে বহুল প্রতিক্ষিত পবিত্র রমযান মাসের।ফলে, এই মাস থেকেই চরম উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে মুসলমানরা পবিত্র রমযান মাসের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে শুরু করে। দ্বীনদারি সকল মুসলিমই রমযান মাসের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা ও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করে। আল্লাহর কাছে আকুলভাবে প্রার্থনা করে, যাতে মহান আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে রমযান মাসের প্রভূত কল্যাণ দান করেন।
শাবান শব্দের অর্থ আরবী হিজরী ক্যালেন্ডারের অষ্টম মাস হল শাবান। আরবি ভাষায় এই নামটির উদ্ভব , বাংলায় শ্রাবন মাসকে বোঝানো হয়েছে। শাবান এই নামটির উদ্ভব হয় ইসলামের আবির্ভাবের আগেই; অর্থাৎ, আরব্য জাহিলিণ্ড যুগে। বলা হয়ে থাকে,এই মাসগুলোর নামের মাধ্যমে মূলত সেই সময়কার পরিবেশ, পরিস্থিতি ও সামাজিক ব্যবস্থা প্রতিফলিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, রমযান মাসের নামটি এসেছে ‘রমাদ্বা’ শব্দ থেকে। যার অর্থ ‘তীব্র তাপ’। গ্রীষ্মের তীব্র তাপের সাথে মিল রেখেই এই মাসের নামকরণ করা হয়েছে রমাদ্বান। যাকে আমরা বাংলায় রমযান বলে থাকি।
শাবান নামকরণের কারণ শাবান মাসটির নামের উদ্ভবের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন মত রয়েছে। শাবান শব্দটি আরবি ধাতু শা’বান থেকে এসেছে । এর দুটি অর্থ হয়, শাখায় বিন্যস্ত হওয়া এবং পৃথক করা। এই দুটি অর্থের দিক থেকে শাবান মাসের নামকরণের উদ্ভব হওয়ার কারণ হিসেবে বলা যায়।জাহিলি যুগেও আরবদের কাছে রজব পবিত্র ৪ মাসের মধ্যে একটি ছিল এবং এতে তারা সহিংসতা ও সংঘাতে জড়াতো না। পানির সন্ধানে মানুষ এই সময় ছড়িয়ে পরতো বলে এই মাসের নাম শাবান।এই মাসে গাছ তার শাখা ছড়িয়ে দিতো বলে এই মাসের নামকরণ করা হয় শাবান।রজব ও রমযান মাসের মাঝামাঝি বলে এই মাসের নামকরণ করা হয় শাবান।শাবান মাসের আরেকটি নাম হল আল-আজান। যার অর্থ দ্রুততম মাস। এটিকে দ্রুততম মাস এজন্য বলা হয় কারণ অনেকেই মনে করেন যে, এই মাসটি খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায় এবং পরবর্তী মাস রমযান খুব দ্রুত চলে আসে।
এবার আসা যাক শবে বরাত নামকরণের প্রসঙ্গে শব মানে ফরাসি ভাষায় রাত্রি আর বরাত মানে সৌভাগ্য। আরবি ভাষায় একে বলে লাইলাতুল বরাত অর্থাৎ সৌভাগ্যের রাত। হাদিসের ভাষা অনুযায়ী এই রাতে আল্লাহ তার বান্দাদের সকল দোষ ক্ষমা করে দেন এমনকি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। তাই পবিত্র এই রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহের নেক নজরে পরার জন্য তথা তাঁর করুনা লাভের আশায় নফল নামাজ পাঠ করেন । এমনকি অতীত জীবনের কোনো পাপ কর্ম থেকে থাকলেও ক্ষমা এবং তার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সেরা সময় এই রাতটি। ভবিষ্যতে ও চলার পথ যেন সুন্দর ও মসৃণ হয় সেই আশির্বাদ ও চেয়ে নেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা।অনেকেই এই দিনটিতে রোজা রাখেন আর গোপনে দান খয়রাতের কাজও করে থাকেন। এই পবিত্র রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী ও দুঃস্থদের মধ্যে হালুয়া, ফিরনি সহ বিভিন্ন ধরনের খাবার বিতরণ করে থাকেন।রাতে মাজার, মসজিদ, কবরস্থান ঘিরে চলে প্রার্থনা।
শবে বরাত পালনের প্রচলন হয় হিজরি ৪৪৮ সনে। ফিলিস্তাইনের নাবলুস শহরের ইবনে আবিল হামরা নামে একবায়তুল মুকাদ্দাস আসেন। তার তিলাওয়াত ছিল সুন্দর ও মধুর। তিনি শাবানের মধ্যরাত্রিতে নামাজে দাঁড়ালে, তাঁর পিছনে এক লোক এসে দাঁড়ান। তার পরে তাঁর সঙ্গে তৃতীয জন এসে যোগ দেন। এর পরে চতুর্থ তিনি নামাজ শেষ করার আগেই বিরাট একদল লোক এসে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন। পরবর্তী বছর এলে, তাঁর সঙ্গে অনেকেই যোগ দেন ও নামাজ আদায় করেন। এতেই মাসজিদুল আক্সাতে এই নামাজের প্রথা চালু হয়। কালক্রমে অনেকেই একে সুন্নাত মনে করতে শুরু করেন।
আরও পড়ুন
৩৭০ ধারার সিদ্ধান্ত কি SC-এ বাতিল হতে পারে ?
উত্তরাপথ: ৩৭০ ধারা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় আদালত আগামী ২ আগস্ট থেকে এ বিষয়ে নিয়মিত শুনানি করবে। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় সহ ৫ বিচারপতির বেঞ্চ উভয় পক্ষের যুক্তি শুনবে। এ বিষয়ে যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে চূড়ান্ত রায় ঘোষণার কথা রয়েছে। এখন প্রশ্ন হঠাৎ কেন ৪ বছর পর সুপ্রিম কোর্টে ৩৭০ ধারা নিয়ে শুনানি হচ্ছে, পিটিশনকারীদের যুক্তি কী .....বিস্তারিত পড়ুন
বিরোধী শূন্য রাজ্যের সমস্ত জেলা পরিষদ
উত্তরাপথ: এবার বিরোধী শূন্য রাজ্যের সব কয়টি জেলা পরিষদ। এবার রাজ্যের সমস্ত জেলা পরিষদ একাই শাসন করবে তৃণমূল । ‘সুবজ ঝড়ে কার্যত নিশ্চিহ্ন বিরোধীরা ।রাজ্যে বিরোধী দলগুলির ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ছারখার হয়ে গিয়েছে । দক্ষিণবঙ্গ তো বটেই, উত্তরবঙ্গেও একই ছবি। রাজ্যের ২০টি জেলা পরিষদই দখল করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। জেলা পরিষদের মতোই শাসক শিবিরের আধিপত্য বজায় রয়েছে পঞ্চায়েত সমিতিতেও। মোট ৩৪১টি সমিতির মধ্যে তৃণমূল ৩১৩, বিজেপি ৭ এবং বামেরা মাত্র দু’টি দখল করেছে। বামেদের রাজনৈতিক সঙ্গী কংগ্রেস .....বিস্তারিত পড়ুন
বেঙ্গালুরুতে বিরোধী জোট গঠনের বৈঠকে অংশ নিতে পারে ৩২টি দল
উত্তরাপথ: আগামী লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে বিরোধী জোট গঠনের জন্য বেঙ্গালুরুতে আগামী ১৭-১৮ জুলাই বিরোধী দলগুলির সমাবেশ হতে চলেছে। এই বৈঠকে ২৪টি রাজনৈতিক দল অংশ নেবে বলে জানা গেছে। সূত্রের খবর, এবার বিরোধী দলে যোগ দিতে যাচ্ছে আরও নতুন ৮টি দল। এই দলগুলি হল, মারুমালারচি দ্রাবিড় মুনেন্দ্র কাজগাম, কঙ্গু দেস মক্কাল কাচ্চি, বিদুথালা চিরুথাইগাল কাচ্চি, বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক দল, অল ইন্ডিয়া ফরওয়ার্ড ব্লক, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগ, কেরালা কংগ্রেস জোসেফ, কেরালা কংগ্রেস মানি ।তবে বিরোধী জোটে যদি সব গুলি দল .....বিস্তারিত পড়ুন
শুভেন্দুর, ‘স্ট্র্যাটেজি’ খারিজ সুকান্তর
উত্তরাপথ: শুভেন্দুর, ‘স্ট্র্যাটেজি’খারিজ সুকান্তর, পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে তৃণমূলকে আটকাতে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেস-সিপিএমকে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন শুভেন্দুর, আর সেই স্ট্র্যাটেজি খারিজ করে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।এখন প্রশ্ন রাজ্য বিজেপির প্রধান দায়িত্বে কে? বিরোধী দলনেতা না রাজ্য সভাপতি ? শুভেন্দু (Suvendu Adhikari) তার বিতর্কিত কথার জন্য রাজ্যে বিশেষ পরিচিত, তবে তিনি কি পারেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের(ম্মঞ্জ)সাথে আলোচনা ছাড়া কোনও সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত একক ভাবে নিতে ? .....বিস্তারিত পড়ুন