সংক্রামক রোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করার সহজ অথচ কার্যকর কৌশল

উত্তরাপথঃ সংক্রামক রোগগুলি বিশ্বব্যাপী ব্যক্তিদের জন্য একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয়, যা অপরিমেয় দুর্ভোগ, অক্ষমতা এবং এমনকি মৃত্যু ঘটায়। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO) অনুসারে, সংক্রামক রোগ প্রতি বছর ১৩ মিলিয়নেরও বেশি মৃত্যুর জন্য দায়ী, যা সমস্ত বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রায় ২২%। ভাল খবর হল সংক্রামক রোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করার সহজ এবং কার্যকর উপায় রয়েছে। এই নিবন্ধে, আমরা আপনাকে সংক্রামক রোগ থেকে নিরাপদ রাখতে টিকা, স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন এবং জীবনধারা পরিবর্তনের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করব।

টিকাকরণ: প্রতিরক্ষার প্রথম ধাপ

টিকা সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলির মধ্যে একটি। ভ্যাকসিনগুলি আপনার শরীরে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার একটি ছোট, ক্ষতিকারক অংশ প্রবর্তন করে কাজ করে, যা আপনার  ইমিউন সিস্টেমকে আরও উন্নত করে, যা ভবিষ্যতে আপনি এর সংস্পর্শে এলে আপনার শরীরকে রোগ চিনতে এবং প্রতিরোধ করতে দেয়। সবচেয়ে সাধারণ কিছু টিকা অন্তর্ভুক্ত:

 ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন: মৌসুমী ফ্লু থেকে রক্ষা করে

 হাম, মাম্পস এবং রুবেলা (এমএমআর) টিকা: হাম, মাম্পস এবং রুবেলা থেকে রক্ষা করে

 হেপাটাইটিস এ এবং বি ভ্যাকসিন: হেপাটাইটিস এ এবং বি থেকে রক্ষা করে

 এইচপিভি ভ্যাকসিন: হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) থেকে রক্ষা করে, যা যৌনাঙ্গে আঁচিল এবং সার্ভিকাল ক্যান্সারের কারণ হতে পারে

আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর দ্বারা নির্ধারিত প্রস্তাবিত সময়সূচী অনুযায়ী টিকা নেওয়া অপরিহার্য। ভ্যাকসিনগুলি কেবল ব্যক্তিদের অসুস্থ হওয়া থেকে রক্ষা করে না, তবে তারা সম্প্রদায়ে রোগের বিস্তার রোধ করতেও সহায়তা করে।

স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন: রোগের বিস্তার রোধ করার মূল চাবিকাঠি

সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধে ভাল স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কিছু সহজ কিন্তু কার্যকরী অভ্যাস গ্রহণ করা হল:

কমপক্ষে ২০ সেকেন্ডের জন্য সাবান এবং জল দিয়ে ঘন ঘন আপনার হাত ধুয়ে নিন, বিশেষ করে:

   খাওয়ার আগে বা খাবার তৈরি করার আগে

   বাথরুম ব্যবহার করার পরে

    কাশি বা হাঁচির পর

 প্রাণী বা তাদের বর্জ্য স্পর্শ করার পরে

সাবান ও জল না থাকলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন

 হাঁচি বা কাশির সময় টিস্যু দিয়ে মুখ ও নাক ঢেকে রাখুন

যারা অসুস্থ মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করবেন না

 ঘন ঘন স্পর্শ করা পৃষ্ঠ এবং বস্তু পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করুন

লাইফস্টাইল পরিবর্তন: আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান

একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে, যা আপনাকে সংক্রামক রোগের প্রতি কম সংবেদনশীল করে তোলে। এখানে কিছু লাইফস্টাইল পরিবর্তনগুলি গ্রহণ করা হল:

* পর্যাপ্ত ঘুম পান: আপনার ইমিউন সিস্টেমকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করার জন্য প্রতি রাতে ৭-৯ ঘন্টা ঘুমের লক্ষ্য রাখুন।

* নিয়মিত ব্যায়াম করুন: আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে 30 মিনিটের জন্য মাঝারি-তীব্র ব্যায়াম করুন।

* সুষম খাবার খান: পুরো খাবার, ফলমূল, শাকসবজি, গোটা শস্য এবং চর্বিহীন প্রোটিন খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিন।

* স্ট্রেস পরিচালনা করুন: দীর্ঘস্থায়ী চাপ আপনার ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করতে পারে। ধ্যান, যোগব্যায়াম বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের মতো স্ট্রেস-কমানোর ক্রিয়াকলাপগুলিতে জড়িত হন।

* যারা অসুস্থ মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করবেন না

* ভাল বায়ুচলাচল অভ্যাস করুন: সম্ভব হলে তাজা বাতাস প্রবেশ করতে জানালা এবং দরজা খুলুন

**অতিরিক্ত টিপস**

* টুথব্রাশ, রেজারের মতো ব্যক্তিগত জিনিস অন্যদের সাথে শেয়ার করা এড়িয়ে চলুন

* অপ্রয়োজনে মুখ বা মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন

* নিয়মিত পরিষ্কার এবং পৃষ্ঠ এবং বস্তু জীবাণুমুক্ত করে আপনার পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন

* সম্ভব হলে পিক ফ্লু সিজনে ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন

 সংক্রামক রোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য টিকা, ভাল স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন এবং জীবনধারা পরিবর্তনের সমন্বয় প্রয়োজন। এই সহজ টিপসগুলি অনুসরণ করে, আপনি অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারেন এবং আপনার সম্প্রদায়ে রোগের বিস্তার রোধ করতে সহায়তা করতে পারেন। মনে রাখবেন, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ সবসময়ই ভালো!

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


রবি কিরণে “আদিত্য”

ড. সায়ন বসুঃ বীর "বিক্রমে" চাঁদের মাটিতে পা রাখার পর এবার ভারতীয় মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র (ISRO)-এর লক্ষ্য সূর্য | আমাদের ৮টি গ্রহ (প্লুটো এখন বামন গ্রহের তালিকায়) যাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে সেই সূর্যের দিকে পাড়ি দিয়েছে "আদিত্য" ২রা সেপ্টেম্বর| চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের ১০ দিনের মাথায় আদিত্যকে সূর্যের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিয়ে ISRO বাকি বিশ্বের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রগুলির কাছে যে একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছে দিতে পেরেছে তা বলাই বাহুল্য| আদিত্য মিশনের সূচনা ২০০৮ সালের জানুয়ারী মাসে মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কিত একটি উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে|প্রাথমিকভাবে ঠিক করা হয় যে একটি ছোট এবং কম ওজনের (৪০০ কেজি) কৃত্রিম উপগ্রহকে low Earth orbit (LEO ;লিও) যে কক্ষপথের উচ্চতা ১,২০০ কিলোমিটারের থেকে কম সেখানে পাঠানো হবে এবং তার কাজ হবে সূর্যের একদম যে বাইরের স্তর যাকে আমরা সৌর-করোনা বলি তার সম্বন্ধে তথ্য পাঠানো। .....বিস্তারিত পড়ুন

পোল্ট্রি শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চলেছে নতুন জিন প্রযুক্তি

উত্তরাপথ - পোল্ট্রি শিল্পে পুরুষ ছানা মারার অভ্যাস দীর্ঘকাল ধরে নৈতিক উদ্বেগের বিষয়।পরিসংখ্যানে প্রকাশ প্রতি বছর পোলট্রিগুলিতে ৭ বিলিয়ন পুরুষ ছানাকে হত্যা করা হয়।কারণ পুরুষ ছানারা ডিম দিতে পারে না সেই সাথে তারা  মাংসের জন্যও উপযুক্ত না হওয়ার কারণে,তারা অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক বলে বিবেচিত হয় । সেই কারণে ডিম ফোটার পরপরই তাদের euthanized করা হয়।এবার এই সমস্যা সমাধানে মধ্য ইস্রায়েলের Yuval Cinnamon এর গবেষণাগারে এক নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করা হয় যার দ্বারা সমস্ত ছানাই মহিলা হবে।এক্ষেত্রে পুরুষ ছানাগুলিকে সম্পূর্ণভাবে ডিম থেকে বেরোনোর আগেই তাদের বাঁধা দেওয়া হবে। এই নতুন প্রযুক্তির আবিষ্কার মুর্গীর পুরুষ ছানাগুলিকে প্রায়শই ম্যাসারেশন বা গ্যাসিং পদ্ধতির মাধ্যমে হত্যা করার মত অমানবিক কাজ বন্ধ করতে সাহায্য করবে। .....বিস্তারিত পড়ুন

ঘোষণা হল ভারতের শীর্ষ বিজ্ঞান পুরস্কার শান্তি স্বরূপ ভাটনগর প্রাপকদের নাম  

উত্তরাপথঃ এটি আশ্চর্যজনকভাবে ২০২২ সালে, প্রথমবারের মতো, বিজ্ঞানে ভারতের শীর্ষ বার্ষিক পুরস্কার ঘোষণা করা হয়নি।এক বছর স্থগিত রাখার পর, সোমবার ২০২২ সালের শান্তি স্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার ঘোষণা করা হয়, যেখানে ১২ জন তরুণ বিজ্ঞানীকে ভারতের শীর্ষ বিজ্ঞান পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে।ভাটনগর পুরষ্কার, CSIR-এর প্রথম মহাপরিচালক শান্তি স্বরূপ ভাটনাগরের নামানুসারে, প্রতি বছর সাতটি বৈজ্ঞানিক শাখায় গবেষকদের অসামান্য কৃতিত্বের জন্য দেওয়া হয়। জীববিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, পদার্থবিদ্যা, চিকিৎসা, প্রকৌশল এবং পৃথিবী, বায়ুমণ্ডল, মহাসাগর এবং গ্রহ বিজ্ঞান - এর অধীনে ৪৫ বছর পর্যন্ত অসামান্য গবেষকদের নির্বাচন করা হয়। পুরস্কারে ৫ লক্ষ টাকা নগদ ও একটি প্রশংসাপত্র দেওয়া হয়। .....বিস্তারিত পড়ুন

ভোরের শুকতারা

অনসূয়া পাঠকঃ বাস ছাড়তে তখনো কিছুটা সময় বাকি ছিলো, আমি মা বাবার সাথে বাসের ভেতরে জানালার দিকের সিটটায় বসে আছি। এমন সময় দেখি আমাদের পাশের সিটে বসে একজন রবীন্দ্রনাথের সঞ্জয়িতা পড়ছেন, বইটাকে দেখে আমার চোখের সামনে একটা সোনালী ফ্রেমের চশমা পরা মুখ ভেসে উঠলো, চন্দন স্যারের মুখ। বছর পাঁচেক আগের কথা, আমার বাবা তখন জঙ্গলমহল মেদিনীপুরের আমলাশুলির পোষ্টমাষ্টার। দু কিমি দূরেই আমার পিসীমার বাড়ি। ওখানেই আমার হাইস্কুলে পড়াশোনা শুরু। আর যে স্যার আমার মননে সদা জাগরুক , বাংলা সাহিত্যের বটবৃক্ষ বলা যায় যাকে , আমার গল্প যাঁকে নিয়ে সেই চন্দন স্যারকে ওখানেই পাওয়া। ফর্সা গায়ের রঙ, মাথায় ক়াঁচা পাকা চুল , সরু গোঁফ চোখে সোনালী ফ্রেমের চশমা, .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top