সম্পাদকীয়- নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলি কি জন কল্যাণের জন্য , নাকি ভোট সংগ্রহের জন্য ‘উৎকোচ ‘?

আমরা এমন এক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি যখন  সরকারের ক্ষমতা নেই  সমস্ত বেকার ছেলে-মেয়েদের চাকরি দেওয়ার। তাই নির্বাচন এলেই স্টক ক্লিয়ারেন্স সেলের মত শুরু হয়ে যায় সস্তায় সবকিছু পাইয়ে দেওয়ার প্রতিযোগিতা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে ,বর্তমানে নির্বাচনের পর অধিকাংশ দল সরকার গঠনের সাথে সাথে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে শুরু করে। কয়েক দশক আগে দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে শুরু হওয়া এই প্রবণতা এখন প্রায় সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো প্রতিটি দলই এ ধরনের প্রতিশ্রুতিা দেয়, তা সত্বেও একে অপরের দিকে আঙুল তোলার কোনো সুযোগ তারা হাতছাড়া করে না।

খুব সম্প্রতি দিল্লীতে এবং এরপর বিহারে বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে। আমআদমি পার্টি আগামী নির্বাচনকে  সামনে রেখে তাদের বেশকিছু গ্যারান্টি ঘোষণা করেছে । আমআদমি প্রধান কেজরিবালের এই বক্তব্যে কারো কি আপত্তি থাকতে পারে? যে শুনবে সে বলবে এটা একটা বুদ্ধিমানের কাজ, সব রাজনৈতিক দলগুলোরও তাই করা উচিত। কিন্তু রাজনীতি এভাবে চলে না। বিজেপি বিষয়টি নিয়ে মাঠে নেমেছে এবং কেজরিবাল সরকারর বিরুদ্ধে বেশ কিছু দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এনেছে যদিও বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে আমআদমি পার্টির পক্ষ থেকে। অন্যদিকে তারাও খোদ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে সেইসাথে তারা নির্বাচনের আগে যৌতুক বিতরণের অভিযোগ এনেছে। তাই স্বাভাবিক ভাবে এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলি কি জনগণের কল্যাণের জন্য নাকি সেগুলি ভোট সংগ্রহের জন্য ‘উৎকোচ ‘ বিতরণের অনুশীলন?

এর আগে মহারাষ্ট্র নির্বাচনের জন্য মহাবিকাশ আঘাদি, অর্থাৎ কংগ্রেস জোটের পক্ষ থেকেও পাঁচটি গ্যারান্টি ঘোষণা করা হয়েছিল। রাহুল গান্ধী নিজেই নারীদের জন্য তিন হাজার টাকা ঘোষণা করেন।এর আগে একই ধরনের রাজনৈতিক  ঘোষণা  বিজেপি থেকে তৃণমূল কংগ্রেস সবাই করে এসেছে। এগুলি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি  না উৎকোচ এই প্রশ্নটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দু’বছর আগে উত্থাপন করেছিলেন, যখন কংগ্রেস কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা এবং হিমাচল প্রদেশের নির্বাচনে মহিলা এবং যুবকদের জন্য একই রকম প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।সেই সময় তিনটি স্থানেই নারী ও যুবকদের আকৃষ্ট করার জন্য প্রতি মাসে তাদের ভাতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এতে দলটিও লাভবান হয়েছিল বলা যায়।অন্যদিকে সেই নির্বাচনে তেলেঙ্গানায় কেসিআর এবং অন্ধ্রের জগন মোহন রেড্ডি তাদের সরকারের কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি দেখিয়ে ভোটারদের সমর্থন আদায় করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ভোটাররা তাদের সমর্থন করেননি।

যদিও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি  দিয়ে ভোটারদের মন জয় করার এই জাতীয় পরিকল্পনা মধ্যপ্রদেশে বিজেপির জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করা হচ্ছে।এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের লক্ষ্মী ভান্ডার সহ একাধিক প্রকল্প সেখানকার নির্বাচনে বড় ভূমিকা পালন করেছে সন্দেহ নাই। এমনকি রাজ্য নির্বাচনকে বাদ দিয়েও, কিষাণ সম্মান যোজনা, বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস, বিনামূল্যে শৌচাগার, বিনামূল্যে বাড়ি এবং বিনামূল্যে শস্য প্রকল্প দেশের জাতীয় রাজনীতিতে যে ভূমিকা পালন করেছে তা আমরা কীভাবে উপেক্ষা করতে পারি?

এমনকি নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদরাও এখন বলছেন যে আগামী দিনে সরকারের পক্ষে পর্যাপ্ত কাজ তৈরি করা সম্ভব হবে না, এমন পরিস্থিতিতে সরকারগুলিকে কেবল দরিদ্রদের সাহায্য করলে হবে না, তাদের আত্মসম্মানে আঘাত না করে সাহায্যের ব্যবস্থাও করতে হবে। আমরা যদি কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারগুলির অবস্থা দেখি, তারাও এই পরিস্থিতি উপলব্ধ করে নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধার্থে এটিকে পরিচালনা করছে।সুতরাং নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি  না উৎকোচ এই বিতর্কগুলি এখন অবান্তর।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি

উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা  ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন

রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন  

উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর  অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।    বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top