

উত্তরাপথঃভারতের পরিবেশ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এমন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হতে পারে। দেশের অধিকাংশ কয়লা-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রকে সালফার ডাই-অক্সাইড (SO₂) কমানোর জন্য বাধ্যতামূলকভাবে Flue Gas Desulphurisation (FGD) যন্ত্র বসানোর নিয়ম থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
এখন প্রশ্ন FGD প্রযুক্তি কি ?Flue Gas Desulphurisation (FGD) হলো একটি প্রযুক্তি, যা বিদ্যুৎ উৎপাদনের সময় নির্গত গ্যাস থেকে সালফার ডাই-অক্সাইড (SO₂) অপসারণ করে।
SO₂ একটি ক্ষতিকর গ্যাস, যা শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যাসহ ফুসফুসে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ হতে পারে। এছাড়াও, এটি বাতাসে সালফেট কণায় রূপান্তর হয়ে PM2.5 (particulate matter) গঠনে সাহায্য করে, যা শহুরে দূষণের অন্যতম মারাত্মক উপাদান।
ভারতের প্রায় ১৮০টি বড় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে মোট ৬০০টি ইউনিট রয়েছে। ২০১৫ সালে সরকার নির্দেশ দিয়েছিল যে সব কয়লা-চালিত ইউনিটে FGD বসাতে হবে ২০১৭ সালের মধ্যে।
কিন্তু বাস্তবে, আজ পর্যন্ত মাত্র ৮% ইউনিটে FGD স্থাপন হয়েছে, যার বেশিরভাগই সরকারি সংস্থা NTPC করেছে।
সম্প্রতি পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নতুন সিদ্ধান্তের পিছনে কয়েকটি কারণ দেখানো হয়েছে:
১,ভারতীয় কয়লাতুলনামূলকভাবে কম সালফারযুক্ত, তাই SO₂ নির্গমন তুলনামূলকভাবে কম বলে দাবি।
২,CPCB-এর পরিমাপ অনুযায়ী দেশের বেশিরভাগ জায়গায় SO₂-এর মাত্রা অনুমোদিত সীমার নিচেই থাকে।
৩, FGD বসাতে খরচ অনেক, এবং এতে বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে।
৪,আবার কিছু গবেষণায় বলা হচ্ছে সালফেট কণাগুলো বাতাসে তাপ কমিয়ে দেয়, যা গ্লোবাল ওয়ার্মিং রোধে সাময়িকভাবে সহায়ক হতে পারে।
কিন্তু সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হতে পারে।SO₂ দীর্ঘমেয়াদে শ্বাসতন্ত্রে প্রভাব ফেলে, বিশেষত শিশু ও প্রবীণদের ক্ষেত্রে। WHO ও অন্যান্য বৈজ্ঞানিক সংস্থা SO₂-কে একাধিক অসুস্থতার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।আবার ,শুধুমাত্র কয়লা কম সালফারযুক্ত বলেই, বা কিছু শহরে মাত্রা সীমার নিচে আছে বলেই, গোটা দেশে FGD নীতির ছাড় দেওয়া যুক্তিসঙ্গত নয়।মাত্র ২০% ইউনিট (যেগুলো দিল্লি NCR বা বড় শহরের ১০ কিমির মধ্যে থাকবে সেখানেই ) FGD বসাবে — মানে দূষণ রোধ এখন অবস্থাননির্ভর! এটি ভারতের অভ্যন্তরেই বৈষম্যমূলক পরিবেশ নীতির উদাহরণ।
IPCC-এর (আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তন প্যানেল) রিপোর্টে সালফেট কণার তাপ-নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা স্বীকার করলেও, এটিকে সম্পূর্ণ ইতিবাচক হিসেবে ধরা হয় না, কারণ এটি শ্বাসতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর ।তাই এক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে
- FGD স্থাপন ব্যয়বহুল হলেও জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- SO₂ মাত্রা এখন সীমার নিচে থাকলেও, ভবিষ্যতের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা জরুরি।
- পরিবর্তিত নীতির আগে সর্বজনীন বিতর্ক ও স্বচ্ছ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রয়োজন।
এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে ১। ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা ব্যবহারকারী দেশ।
২।ভারতীয় শহরগুলিতে SO₂ ও PM2.5 বায়ুদূষণের মূল উৎসগুলির মধ্যে অন্যতম ।
৩।বায়ুদূষণে প্রতিবছর ভারতে লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারান বা দীর্ঘমেয়াদী অসুখে ভোগেন।
আমাদের উন্নয়নের গতি যতই ত্বরান্বিত হোক না কেন, পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের মূল্য কোনওভাবেই কমিয়ে দেখা উচিত নয়। উন্নয়নের আসল মানে তখনই, যখন তা মানুষের জীবন রক্ষা করে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখে।
আরও পড়ুন
বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি
আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি
উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন
World’s most polluted cities: নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়
উত্তরাপথঃ দিওয়ালি উদযাপনের একদিন পর জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় উঠে এসেছে।সোমবার, অর্থাৎ দীপাবলির পরের দিন এই শহরগুলির বায়ুর গুণমান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় খারাপ হয়েছে।বায়ুর গুনমান খারাপ হওয়ার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত আতশবাজি জ্বালানোকে দায়ী করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় যথারীতি প্রথম স্থান দখল করেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দীপাবলির পরের দিন এটির AQI (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) পরিসংখ্যান ছিল ৪০৭। নভেম্বরের শুরু থেকে, দিল্লিতে AQI পরিসংখ্যান খারাপ হয়েছে। সুইস গ্রুপ আইকিউএয়ার শহরের বাতাসকে "বিপজ্জনক" বিভাগে রেখেছে।ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়(World’s most polluted cities), ১৫৭ এর AQI সহ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। কলকাতা ১৫৪ এর AQI সহ সপ্তম স্থানে রয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন
প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে
উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন