

উত্তরাপথঃ একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রচুর পরিমাণে লবণাক্ত খাবার খাওয়া মানসিক বিষণ্ণতার কারণ হতে পারে। গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে শরীরে IL-17A নামক প্রোটিনের মাত্রা বাড়ে, যা মানুষের মধ্যে বিষণ্ণতার অন্যতম কারন হতে পারে।
নানজিং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান বিজ্ঞানী ডঃ জিয়াওজুন চেন বলেছেন, “এই গবেষণায় দেখা গেছে যে আমাদের খাদ্যতালিকায় লবণ কমানো বিষণ্ণতার মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। এটি IL-17A-এর উপর নির্ভর করে একটি নতুন চিকিৎসার দরজা খুলে দিয়েছে।” তাঁর আশা গবেষণার এই ফলাফলগুলি আমাদের কতটা লবণ খাওয়া উচিত তা নিয়ে আরও গবেষণা শুরু করবে।
গবেষকরা আরও দেখেছেন যে গামা-ডেল্টা টি কোষ (বা γδT কোষ) নামক একটি বিশেষ ধরণের রোগ প্রতিরোধক কোষ এক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। গবেষকরা ইঁদুরের উপর এই পরীক্ষাটি করার সময় দেখেছেন উচ্চ লবণযুক্ত খাবার খাওয়া ইঁদুরের ক্ষেত্রে, এই কোষগুলি IL-17A প্রোটিনের প্রায় ৪০% তৈরি করে। বিজ্ঞানীরা যখন এই কোষগুলি অপসারণ করেন, তখন ইঁদুরগুলিতে বিষণ্ণতার লক্ষণ কম দেখা যায়, যা ভবিষ্যতে বিষণ্ণতার চিকিৎসা বা প্রতিরোধের একটি নতুন উপায়ের ইঙ্গিত দেয়।
লবণ গ্রহণ এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি
পশ্চিমের দেশগুলির অনেক মানুষ প্রচুর পরিমাণে লবণ খায়, বিশেষ করে ফাস্ট ফুড থেকে এই লবণ আসে। অন্যদিকে কখনও কখনও এই খাবারগুলিতে বাড়িতে তৈরি খাবার খাওয়ার চেয়ে ১০০ গুণ বেশি লবণ থাকে। যদিও আমরা ইতিমধ্যেই জানি যে অতিরিক্ত লবণ হৃদপিণ্ড, কিডনি এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ক্ষতি করতে পারে, বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করছেন যে এটি আমাদের মস্তিষ্ক এবং মেজাজকেও প্রভাবিত করতে পারে।
বিষণ্ণতা একটি প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা, যা তাদের জীবনের কোনও না কোনও সময়ে প্রতি ৫ থেকে ৬ জনের মধ্যে ১ জনকে প্রভাবিত করে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। লোকেরা দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ করে আসছে যে লবণাক্ত খাবার খাওয়া সমস্যার অংশ হতে পারে, কিন্তু এখন পর্যন্ত, বিষয়টি স্পষ্ট ছিল না।
সাম্প্রতিক গবেষণায়, পাঁচ সপ্তাহ ধরে ইঁদুরদের নিয়মিত খাবার অথবা উচ্চ লবণযুক্ত খাবার খাওয়ানো হয়েছিল। লবণাক্ত খাবারে থাকা ইঁদুরগুলি বেশী নিষ্ক্রিয় বোধ করার লক্ষণ দেখিয়েছিল – যা মানুষের মধ্যে বিষণ্ণতার সমান। এটি দেখায় যে লবণ কেবল হৃদয় এবং কিডনিকেই প্রভাবিত করে না – এটি মস্তিষ্ককেও প্রভাবিত করতে পারে।
IL-17A এবং বিষণ্ণতা
বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই জানতেন যে IL-17A বিষণ্ণতার সাথে জড়িত। এই নতুন গবেষণায়, তারা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে উচ্চ লবণযুক্ত খাবার ইঁদুরের প্লীহা, রক্ত এবং মস্তিষ্কে এই প্রোটিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় – যা মেজাজ এবং উদ্বেগের সাথে সম্পর্কিত। যখন IL-17A তৈরি করতে পারে না এমন ইঁদুরদের উচ্চ লবণযুক্ত খাবার খাওয়ানো হয়েছিল, তখন তারা বিষণ্ণতার লক্ষণ দেখায়নি। এটি নিশ্চিত করে যে IL-17A লবণের কারণে বিষণ্ণতার মতো লক্ষণগুলি বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভবিষ্যতের চিকিৎসার জন্য এর অর্থ কী
গবেষকরা আশা করেন যে তাদের অনুসন্ধানগুলি বিষণ্ণতা সম্পর্কিত ভবিষ্যৎ গবেষণাকে অনুপ্রাণিত করবে। ডঃ চেন এবং তার দল মানুষের মধ্যে এই প্রভাবগুলি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার এবং উচ্চ লবণযুক্ত খাবার কীভাবে এই রোগ প্রতিরোধক কোষগুলিকে সক্রিয় করে তা ঠিক কীভাবে বের করার পরিকল্পনা করছেন।সংক্ষেপে বলতে গেলে, অতিরিক্ত লবণ খাওয়া আপনার হৃদয়ের জন্য কেবল খারাপই নয় – এটি আপনাকে হতাশ বা বিষণ্ণ বোধও করাতে পারে। লবণ গ্রহণ কমানো আপনার মেজাজ এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করার একটি সহজ উপায় হতে পারে।
সূত্রঃ- “High-salt diet drives depression-like behavior in mice by inducing IL-17A production” by Di Lu, Wenjie Chen, Wenhui Sun, Chuan Wei, Xuan Xie, Na Li, Haiyan Yan, Ying Chen, Yue Wu, Zhigang Lei, Lei Xu, Jifeng Zhu, Yalin Li, Chuan Su, Wei Li, Sha Zhou and Xiaojun Chen, 22 March 2025, The Journal of Immunology.
DOI: 10.1093/jimmun/vkaf019
আরও পড়ুন
প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে
উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন
সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?
উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি
উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন