দুর্ঘটনার পর হাহাকার নয়, সময় এসেছে জবাবদিহিতার

ছবি- এক্স হ্যান্ডেল থেকে নেওয়া।

উত্তরাপথঃ ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে একের পর এক দুর্ঘটনার খবর যেন আর নতুন কিছু নয়। তবে গত কয়েকদিনে যেভাবে বিমান, হেলিকপ্টার এবং সেতু বিপর্যয়ের ঘটনা সামনে এসেছে, তা শুধু “দুর্ভাগ্যজনক” বলেই পার পাওয়ার সুযোগ নেই। বরং এটি স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে—দুর্নীতি, অবহেলা ও জবাবদিহিতার অভাব আমাদের পরিকাঠামো এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে কতটা দুর্বল করে ফেলেছে।

মাত্র কিছু দিন আগে আহমেদাবাদে উড্ডয়নের পরপরই একটি এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বিধ্বস্ত হয়। একই সপ্তাহে কেদারনাথে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় সাতজন তীর্থযাত্রীর, যার মধ্যে ছিল এক শিশু। একই দিনে লখনউগামী হজযাত্রী বহনকারী একটি বিমানের চাকা থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। পরের দিন হংকং থেকে দিল্লিগামী একটি বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। এবং এসব ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যেই পুনের ইন্দ্রায়নী নদীর ওপর একটি পুরনো লোহার সেতু ভেঙে পড়ে।

প্রশ্ন উঠছেই—এই ধারাবাহিক দুর্ঘটনার দায় কার? কেন নিয়মকানুন থাকা সত্ত্বেও তা মানা হয় না? কেন হেলিকপ্টার ভোর ৫:৩০-এ উড়ল, যখন তার স্লট ছিল সকাল ৬টা থেকে? কেন আবহাওয়ার সতর্কতা অগ্রাহ্য করা হলো, যখন গোটা হিমালয় এলাকা তখন ঘন কুয়াশায় ঢেকে ছিল?

একদিকে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার তদন্তের ঘোষণা করা হয়, আরেকদিকে সেই একই রুটে বারবার হেলিকপ্টার ক্র্যাশ হচ্ছে। শুধুমাত্র চারধাম যাত্রার পথেই এই বছর পঞ্চম দুর্ঘটনা! কেন দুর্ঘটনার পরে তৎপরতা, কিন্তু আগে না?

পুনে সেতু দুর্ঘটনার কথাই ধরা যাক। সেতু বিপজ্জনক, জেলা প্রশাসন জানতো, বোর্ডও লাগানো হয়েছিল। তবু পর্যটকদের প্রবেশ বন্ধ করা হয়নি। এটা কি শুধু দায়সারা গোছের ‘প্রশাসনিক সতর্কতা’? না কি জনগনের জীবনের ব্যাপারে প্রশাসন সত্যিই অনেকটা উদাসীন মনভাব দেখাচ্ছে ?

এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন:

১। প্রতিটি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই স্বতন্ত্র এবং দ্রুত তদন্ত।

২। দুর্ঘটনার আগেই ঝুঁকি চিহ্নিত করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা।

৩। যান্ত্রিক ত্রুটি বা সময়সীমা লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি।

৪। বিমান ও হেলিকপ্টার চালক এবং টেকনিক্যাল টিমের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স যাচাই।

৫। ‘সতর্কতা বোর্ড’ নয়, কার্যকর নিষেধাজ্ঞা।

বিমান ভ্রমণ ও যাত্রীসুরক্ষা কেবল আধুনিক প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল নয়—এটি প্রশাসনের সদিচ্ছা, দায়িত্ববোধ ও স্বচ্ছতা দ্বারাও পরিচালিত হয়। আর এই সিস্টেম বারবার ভেঙে পড়ছে। এখনই যদি এই অবহেলার বিরুদ্ধে শাস্তির নজির স্থাপন না করা হয়, তাহলে আগামী দিনের দুর্ঘটনাগুলি হবে আরও ভয়াবহ, আরও নির্মম।

পরিশেষে শুধু হেলিকপ্টার বা সেতু নয়, আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার গোটা কাঠামোই প্রশ্নের মুখে। দায়িত্ব এড়ানোর সময় ফুরিয়েছে। এবার সময় এসেছে—জবাবদিহিতা ও জনসুরক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার। কারণ, প্রতিটি প্রাণ অমূল্য।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি

উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন

উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি  তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top