

প্রীতি গুপ্তাঃ বাংলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম, শ্যামপুর। সবুজ ধানখেত আর নদীর কোল ঘেঁষে এই গ্রাম যেন এক টুকরো স্বর্গ। বছরের বেশিরভাগ সময় এখানে শান্তি আর সরলতার রাজত্ব। কিন্তু আষাঢ় মাস এলেই শ্যামপুরের মানুষের মনে এক অন্যরকম উৎসাহ জাগে। কারণ, এ সময় এখানে পালিত হয় জগন্নাথের রথযাত্রা। এই উৎসব শুধু একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এ যেন গ্রামের প্রাণের মেলা, একতার উৎসব।
গ্রামের মাঝখানে রয়েছে এক প্রাচীন জগন্নাথ মন্দির। মন্দিরের চারপাশে বিশাল আমবাগান আর একটা পুকুর, যার জলে সারা বছর পদ্মফুল ফোটে। মন্দিরের পুরোহিত, গোপাল দাস, বয়সে প্রৌঢ় হলেও তাঁর উৎসাহে যেন কোনও কমতি নেই। তিনি বলেন, “জগন্নাথ আমাদের সকলের। তিনি গ্রামের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে বাস করেন। রথযাত্রার এই সময় আমাদের একসঙ্গে আনন্দ করার এক সুযোগ।”
এবারের রথযাত্রার প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল এক মাস আগে। গ্রামের যুবকরা মিলে রথ তৈরির কাজে লেগে পড়েছিল। কাঠের গাড়ি, রঙিন কাপড় আর ফুলের মালায় সাজানো রথ যেন এক স্বপ্নের ছোঁয়া। রথের চাকা তৈরি করেছিলেন গ্রামের বুড়ো কাঠমিস্ত্রি রামধন। তিনি বলেন, “আমার বাবা, তার বাবা—সবাই এই রথের চাকা বানিয়েছেন। এই কাজে আমার প্রাণ আটকে আছে।”
গ্রামের মেয়েরা রথের জন্য ফুলের মালা গাঁথছিল। তারা গান গাইছিল, হাসছিল, আর একে অপরের সঙ্গে গল্প করছিল। মাঝে মাঝে তাদের হাসির শব্দে পাখিরা উড়ে যাচ্ছিল। ছোট্ট মেয়ে রাধা, যার বয়স মাত্র দশ, তার হাতে তৈরি একটা ছোট্ট মালা দেখে সবাই মুগ্ধ। রাধা লাজুক হেসে বলল, “আমার মালাটা জগন্নাথের গলায় পরাব। তিনি আমার দিদির অসুখ সারিয়ে দেবেন।”
রথযাত্রার দিন ভোর থেকেই গ্রামের মানুষ ব্যস্ত। মন্দিরে ভক্তদের ভিড়, ধূপের গন্ধ, শঙ্খধ্বনি আর মন্ত্রোচ্চারণে চারদিক মুখরিত। গ্রামের প্রতিটি ঘর থেকে মানুষ এসে জড়ো হয়েছিল। কেউ পুজোর থালা হাতে, কেউ ফুলের ঝুড়ি নিয়ে, আর কেউ শুধু হৃদয় ভরা ভক্তি নিয়ে।
দুপুরের দিকে রথযাত্রা শুরু হল। জগন্নাথ, বলরাম আর সুভদ্রার মূর্তি রথে বসানো হল। গ্রামের যুবকরা দড়ি টানতে শুরু করল। তাদের মুখে হাসি, কপালে ঘাম। বুড়ো রামধন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন, তার চোখে গর্বের চমক। গ্রামের মেয়েরা রথের পাশে পাশে হাঁটছিল, হাতে ফুল ছড়াচ্ছিল। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা দৌড়ে রথের পিছু পিছু যাচ্ছিল, তাদের হাসির শব্দ যেন সব দুঃখ ভুলিয়ে দিচ্ছিল।
রথ যখন গ্রামের মাঝখানে এসে পৌঁছল, তখন এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। গ্রামের কুখ্যাত মানুষ, যদু, যে কখনও কারও সঙ্গে ভালো করে কথা বলত না, সে হঠাৎ রথের দড়ি ধরে টানতে শুরু করল। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। যদুর চোখে জল, মুখে এক অদ্ভুত শান্তি। পরে সে বলল, “জগন্নাথ আমাকে ডাকছিলেন। আমি তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি।”
রথযাত্রা শেষ হল গ্রামের শেষ প্রান্তে, যেখানে একটা বিশাল বটগাছের নিচে রথ থামল। সবাই মিলে প্রসাদ খেল। বুড়ো-বুড়ি, যুবক-যুবতী, ছেলেমেয়ে—সবাই একসঙ্গে বসে। সেখানে কোনও ছোট-বড় নেই, ধনী-গরিব নেই। শুধু আছে ভক্তি আর ভালোবাসা।
রাধার দিদি, যার অসুখ ছিল, সে সেদিন প্রথমবার বিছানা ছেড়ে উঠে এসেছিল। রাধা তার হাত ধরে বলল, “দেখ, আমি বলেছিলাম না, জগন্নাথ আমার কথা শুনবেন!” গ্রামের মানুষের মুখে হাসি। তাদের হৃদয়ে এক অপার শান্তি।
শ্যামপুরের এই রথযাত্রা শুধু একটা উৎসব নয়। এ যেন একটা বন্ধন, যা গ্রাম থেকে শহর প্রতিটি মানুষকে একসঙ্গে বাঁধে। জগন্নাথের রথ যেন তাদের জীবনের দুঃখ-কষ্ট, পাওয়া – নাপাওয়া সবকিছু বয়ে নিয়ে যায়। আর প্রতিবছর, আষাঢ় মাস এলে, শ্যামপুরের মানুষ আবার নতুন করে জগন্নাথের কাছে নিজেদের সমর্পণ করে।
আরও পড়ুন
Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে বিতর্কে এ আর রহমান
উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
World’s most polluted cities: নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়
উত্তরাপথঃ দিওয়ালি উদযাপনের একদিন পর জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় উঠে এসেছে।সোমবার, অর্থাৎ দীপাবলির পরের দিন এই শহরগুলির বায়ুর গুণমান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় খারাপ হয়েছে।বায়ুর গুনমান খারাপ হওয়ার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত আতশবাজি জ্বালানোকে দায়ী করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় যথারীতি প্রথম স্থান দখল করেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দীপাবলির পরের দিন এটির AQI (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) পরিসংখ্যান ছিল ৪০৭। নভেম্বরের শুরু থেকে, দিল্লিতে AQI পরিসংখ্যান খারাপ হয়েছে। সুইস গ্রুপ আইকিউএয়ার শহরের বাতাসকে "বিপজ্জনক" বিভাগে রেখেছে।ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়(World’s most polluted cities), ১৫৭ এর AQI সহ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। কলকাতা ১৫৪ এর AQI সহ সপ্তম স্থানে রয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন
বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি
আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে
উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন