সহানুভূতির পাঠ: বাংলার স্কুলগুলিকে রাস্তার কুকুরদের খাওয়ানো ও টিকা দেওয়ার নির্দেশ

উত্তরাপথঃ বাংলার স্কুলগুলি এখন শুধু ছাত্রছাত্রীদের জন্য পুষ্টিকর খাবারই নয়, স্কুলের আশপাশের রাস্তার কুকুরদের পেটও ভরাবে। রাজ্য সরকার সমস্ত সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলকে নির্দেশ দিয়েছে, একজন কর্মী নিয়োগ করে দুপুরে এই প্রাণীদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে এবং তাদের টিকা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে। এই উদ্যোগ ছাত্রছাত্রীদের মনে সহানুভূতির বীজ বপন করবে এবং প্রাণীদের প্রতি যত্নশীল হওয়ার শিক্ষা দেবে, এমনটাই বিশ্বাস রাজ্য সরকারের।

গত সপ্তাহে সমগ্র শিক্ষা মিশনের জারি করা এই নির্দেশে বলা হয়েছে, কুকুরদের নির্বীজন ও টিকাকরণের জন্য জেলা স্তরে পশু সম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় স্থাপন করতে হবে। এই উদ্যোগের পিছনে প্রেরণা এসেছে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মানেকা গান্ধীর এপ্রিল মাসে বাংলা সরকারকে লেখা একটি চিঠি থেকে, যেখানে তিনি স্কুলে মানুষ ও রাস্তার কুকুরদের মধ্যে বন্ধন গড়ে তোলার উদ্যোগের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

স্কুল শিক্ষা দপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “এই ধরনের অভ্যাস ছাত্রছাত্রীদের রাস্তার প্রাণীদের প্রতি যত্নশীল হতে শেখায়। অনেক সময় ছাত্রছাত্রীরা কুকুরদের উত্ত্যক্ত করে, ফলে শিশু বা প্রাণীদের আঘাত লাগতে পারে। যখন তারা শিক্ষক ও স্কুলের কর্মীদের রাস্তার কুকুরদের যত্ন নিতে দেখবে, তখন তাদের মনে প্রাণীদের প্রতি সংবেদনশীলতা জাগবে। এই অভ্যাস তাদের আরও ভালো মানুষ হতে সাহায্য করবে।”

অনেক স্কুল প্রধান এই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, তাদের প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই এই দিকে পদক্ষেপ নিয়েছে। এই ব্যাপারে ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলের বাইরে রাস্তার কুকুর ও বিড়ালদের যত্ন নিতে শুরু করেছেন। তাদের খাওয়ানোর পাশাপাশি, গরমের সময় তাদের জন্য জলের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।সেই সাথে স্কুলের দেওয়ালে প্রাণীদের প্রতি সদয় হওয়ার বার্তা লিখে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে বিভিন্ন স্কুল।

তবে, কিছু স্কুল প্রধান সীমিত সম্পদের কারণে প্রতিদিন কুকুরদের খাওয়ানোর জন্য একজন কর্মী নিয়োগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। উত্তর কলকাতার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “সম্প্রতি কুকুরের কামড় নিয়ে সচেতনতার নির্দেশ জারি হয়েছিল। এখন এই নির্দেশ ছাত্রছাত্রীদের রাস্তার কুকুরের সঙ্গে বন্ধন গড়তে বলছে। সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব হলেও, সীমিত সময়ে এটি বাস্তবায়ন করা চ্যালেঞ্জিং। সরকার যদি এই ধরনের উদ্যোগ চালাতে চায়, তবে একাধিক কর্মশালা ও কর্মসূচির আয়োজন করা উচিত।”

স্কুল শিক্ষক অনিমেষ হালদার বলেন, “এই পদক্ষেপ ইতিবাচক এবং এই শিক্ষা স্কুল স্তর থেকেই শুরু হওয়া উচিত। তবে, ব্যবস্থাটি যাতে ভেঙে না পড়ে, তার জন্য সামগ্রিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন।” অনেক শিক্ষক সরকারি উদ্যোগের ইতিবাচক দিক স্বীকার করলেও বলেন, “অনেক ছাত্রছাত্রীর কুকুরের প্রতি ভয় রয়েছে। আমাদের অগ্রাধিকার তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।”

এই উদ্যোগ শুধু প্রাণীদের প্রতি মমত্বই নয়, বাংলার শিশুদের হৃদয়ে সহানুভূতি ও মানবিকতার আলো জ্বালাতে চায়। তবে, এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে, যা একসঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?

উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন  দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI  এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে।   বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।  নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা  ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী?  আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত?  পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না?  এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন

PAN-Aadhar link: কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে নিষ্ক্রিয় করেছে

উত্তরাপথ : আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link)করার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ড নিষ্ক্রিয় করেছে৷ আপনি যদি এখনও প্যান কার্ডের সাথে আধার কার্ড লিঙ্ক না করে থাকেন, তাহলে আপনি সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপের আওতায় এসেছেন। আপনি যদি আপনার আধার কার্ডকে প্যানের সাথে লিঙ্ক করতে চান তবে আপনি জরিমানা দিয়ে এটি সক্রিয় করতে পারেন। কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে আধারের সাথে লিঙ্ক না করার কারণে নিষ্ক্রিয় করেছে। একটি আরটিআই-এর জবাবে, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস জানিয়েছে যে আধার কার্ডের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link) করার সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হয়েছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড লিঙ্ক করেননি তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশে ৭০ কোটি প্যান কার্ড বর্তমানে ভারতে প্যান কার্ডের সংখ্যা ৭০.২ কোটিতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৭.২৫ কোটি মানুষ আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক করেছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে  বিতর্কে এ আর রহমান

উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top