

উত্তরাপথঃ দশকের পর দশক ধরে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করে এসেছেন যে খাবারে ব্যবহৃত অনেক সাধারণ থিকনার বা ঘন করার উপাদান (যেমন সেলুলোজ-ভিত্তিক অ্যাডিটিভ) মানুষের শরীরে হজম হয় না। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা দেখাচ্ছে, এই ধারণা পুরোপুরি সঠিক নয়।
কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া–এর একদল গবেষক আবিষ্কার করেছেন, আমাদের অন্ত্রে থাকা বিশেষ কিছু গাট ব্যাকটেরিয়া আসলে এই বৃহৎ আণবিক গঠনগুলোকে খাবার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। এতদিন ধরে যেটিকে অসম্ভব মনে করা হতো!
গবেষকদের মতে, এর মূল রহস্য লুকিয়ে আছে এনজাইমে। সাধারণত আমাদের শরীর খাদ্য আঁশ ভাঙতে যে এনজাইম ব্যবহার করে, সেই একই এনজাইম সক্রিয় হয়ে এই কৃত্রিম সেলুলোজজাত থিকনারকেও ভেঙে ফেলতে পারে।
ড. দীপেশ পানওয়ার, মাইকেল স্মিথ ল্যাবরেটরির পোস্টডক্টরাল ফেলো এবং গবেষণার প্রধান লেখক, জানিয়েছেন—


“আমরা এতদিন ধরে ভেবেছিলাম এই সেলুলোজ-জাত থিকনারগুলো অপরিবর্তিত অবস্থায় শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু আমাদের গবেষণা দেখাল, ফল, শাকসবজি ও সিরিয়ালের মতো প্রাকৃতিক পলিস্যাকারাইড খাওয়ার পর অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া আসলে এই অ্যাডিটিভগুলো ভাঙতে সক্ষম।”
কেচাপ, সালাদ ড্রেসিং, আইসক্রিম, এমনকি টুথপেস্ট—এসবের মধ্যে যে ঘনভাব বা মসৃণতা আমরা পাই, তার মূল কারণ এই সেলুলোজ-ভিত্তিক থিকনার। কিন্তু একইসঙ্গে, বেশি পরিমাণে এগুলো গ্রহণ করলে এগুলো ল্যাক্সেটিভ বা হালকা জোলাপ হিসেবেও কাজ করে।
এই গবেষণা দেখিয়েছে, যদি অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়াগুলো আগে থেকেই প্রাকৃতিক শর্করার দীর্ঘ শৃঙ্খল (পলিস্যাকারাইড)–এর সংস্পর্শে থাকে, তবে তারা কৃত্রিম সেলুলোজ ভাঙতে প্রস্তুত হয়ে যায়। অর্থাৎ, স্বাস্থ্যকর খাবারের সঙ্গে এই অ্যাডিটিভ খেলে ব্যাকটেরিয়া সহজে এগুলোকে শক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
ড. হ্যারি ব্রুমার, কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক, বলেছেন—
“আমরা কখনো ভাবিনি যে এই কৃত্রিম উপাদানগুলোও ব্যাকটেরিয়ার জন্য চিনি সরবরাহ করতে পারে। এতদিন যেগুলোকে নিছক নিষ্ক্রিয় থিকনার মনে করা হতো, সেগুলো আসলে ভিন্ন ভূমিকাও রাখছে।”
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এতদিনের ব্যবহারের অভিজ্ঞতা এবং পরীক্ষায় প্রমাণিত যে এই থিকনারগুলো খাবারে ব্যবহার নিরাপদ। তবে এগুলো ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে আংশিক হজম হয়, তাই এখন নতুন করে গবেষণা প্রয়োজন—
- এগুলো শরীরে ঠিক কী ধরনের রাসায়নিক পরিবর্তন আনে?
- দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পুষ্টি বা স্বাস্থ্যের ওপর কী হতে পারে?
এত দিন এই সম্পর্কে না জানার প্রধান কারণ হলো, ল্যাবরেটরিতে গবেষণা সাধারণত একক উপাদান ব্যবহার করে করা হয়। সেখানে ব্যাকটেরিয়াকে প্রাকৃতিক খাদ্য আঁশের সঙ্গে কৃত্রিম অ্যাডিটিভ একসঙ্গে দেওয়া হয় না। ফলে আসল খাবারের মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি, আর এই সত্য এতদিন ধরা পড়েনি।
আজ যখন আপনি সালাদের সঙ্গে মিষ্টি ড্রেসিং খাচ্ছেন, তখন শুধু আপনার জিভই নয়—আপনার গাট ব্যাকটেরিয়াও ব্যস্ত থেকে যাচ্ছে এই অদৃশ্য শর্করা ভেঙে কাজে লাগাতে!স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখলে এরা শুধু আপনাকে শক্তিই দেবে না, হয়তো ভবিষ্যতে আরও অজানা রহস্যও উন্মোচন করবে।
আরও পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন
প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে
উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন
রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন
উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক
উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন