সময় এসেছে  ভারতের বিচার ব্যবস্থায় দ্রুত সংস্কারের

উত্তরাপথ

বিলম্বিত বিচার বা বিচার ব্যাবস্থার দীর্ঘসূত্রতা আমাদের দেশের সাধারণ জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়। কবিগুরুর ভাষায়, বিচারের বানী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। অর্থাৎ একজন ব্যক্তিকে ন্যায় বিচার পেতে যে পরিমাণ সময় কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রজন্মের পর প্রজন্ম অপেক্ষা করে থাকতে হয় তাতে দুর্ভাগ্যজনকভাবে মানুষের বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা হারাতে শুরু করেছে। তারা ন্যায় বিচার না পেয়ে নিজেদের উপেক্ষিত বোধ করছেন। সম্প্রতি আমাদের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় গুহাটি হাইকোর্টের প্ল্যাটিনাম জয়ন্তী উদযাপনের অনুষ্ঠানে আমাদের  বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতার দিকটি তুলে ধরেন যা আপামর ভারতবাসীর অন্তরের কথা। তিনি বলেন আইন যেহেতু সমস্ত মানুষের প্রয়োজন ও স্বার্থ পূরণ করে তাই আইনের মানবিক থাকা খুব প্রয়োজন। একজন বিচারক যখন বাস্তবতা ও সহানুভূতির সাহায্যে বিষয়টি পরিচালনা করেন তখন ন্যায় বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা এক ধাপ এগিয়ে যায়। আবার যখন ন্যায় বিচার কোনও  নীতি ছাড়াই পরিচালিত হয় তখন তা স্বেচ্ছাচারিতার বোঝা বহন করতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আরও বলেন বিচার ব্যবস্থার মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে বিচারপতিদের বিচার পদ্ধতি সরাসরি সম্প্রসারণ প্রয়োজন। এই প্রসঙ্গে তিনি ওড়িশার বিচার ব্যাবস্থার ভূয়সী প্রশংসা করেন সেই সাথে তাঁর বক্তব্য বিচার ব্যবস্থা এমন ভাবে পরিচালনা করতে হবে যাতে একজন প্রান্তিক মানুষও সুবিচার পান।

কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বিচার ব্যবস্থাকে যতই  জনমুখী করার  কথা বলুন বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা আমাদের দেশের বিচারব্যবস্থার এক বড় দুর্বলতা। আর এই বিলম্বিত বিচার আবিচারের নামান্তর। বিচারপ্রক্রিয়া যত বিলম্বিত হবে, ন্যায় বিচার প্রাপ্তির সম্ভাবনাও তত কমবে। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার কারণে অনেক মামলার নিস্পত্তির অনেক আগেই বাদী বা বিবাদী যে কেউ একজনের মৃত্যু হয় । ন্যায় বিচার পাওয়া যা মানুষের একটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে তা থেকে সে বঞ্ছিত  হয় । মানুষের এই বঞ্চনা বিচার ব্যাবস্থার প্রতি নির্ভরশীলতা তৈরির পথে এক বড় বাঁধা।

জেলা ও হাইকোর্টে জমে থাকা মামলার জট এখন মহাজটের আকার ধারন করেছে। ন্যাশানাল জুডিশিয়াল গ্রিড (এন যে ডি জি) ফেব্রুয়ারী ২০২৩ এর তথ্য  অনুযায়ী, সারা দেশে উচ্চ আদালতে ৫৯,৮৭,৪৭৭ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ২ আগস্ট, ২০২২পর্যন্ত ভারতের সুপ্রিম কোর্টে মোট মুলতুবি মামলার সংখ্যা ৭১,৪১১ যার মধ্যে ৫৬,৩৬৫টি দেওয়ানী বিষয় এবং ১৫০৭৬ টি ফৌজদারি বিষয়, আমাদের দেশে শুধু বিচারে দীর্ঘসূত্রতাই নয়, বরং যথাসময়ে অপরাধের তদন্ত না হওয়াও বড় সমস্যা। ফলে এক দিকে বিচারপ্রার্থীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, আর বিচারহীনতার কারণে অপরাধপ্রবণতাও ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া আমাদের দেশে বিচারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতার বিষয়টি প্রমাণিত ও সুস্পষ্ট। কোনো বিশেষ মামলা নয়; বরং ন্যায়বিচার প্রাপ্তির জন্য সব মামলার দ্রুততার সাথে নিষ্পত্তি হওয়া আইন ও সংবিধানের দাবি তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমাদেরকে এই অশুভ বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ

উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top