সম্পাদকীয়

উষ্ণায়ণ ও আমরা

সম্প্রতি  নাভি মুম্বাইয়ে একটি  সরকারি অনুষ্ঠান হয় যেখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৮ডিগ্রি সেলসিয়াস । অনুষ্ঠানের  যা ফটো প্রকাশ করা হয়েছে তাতে দেখা গেছে হাজার হাজার মানুষ সরাসরি সূর্যের নিচে বসে আছে কোন ছাদ বা আবরণ ছাড়াই । মাত্র কয়েকজনের মাথায় ছাতা বা গামছা জড়ানো।খবরে প্রকাশ এদের মধ্যে অত্যাধিক গরমে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে । বর্তমানে সারা দেশে তাপমাত্রার রেকর্ড  বৃদ্ধি অব্যাহত । গত সোমবার সারা দেশের ৩৬টি আবহাওয়া কেন্দ্রে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের  উপর রেকর্ড করা হয়েছে । ইন্ডিয়া মেটিওরোলজিক্যাল  ডিপার্টমেন্ট (আইএম ডি ) ভারতের সবচেয়ে উষ্ণ শহরগুলির একটি তালিকা প্রকাশ করেছে । তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে  উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজ (৪৪.২ডিগ্রী) ও  উড়িষ্যার বারিপাদা (৪৪.২ ডিগ্রী) এবং উত্তর প্রদেশের ঝাসি রয়েছে ৪৩.৬ ডিগ্রীতে । ৩৬টির মধ্যে ১৮টি আবহাওয়া কেন্দ্রের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ ডিগ্রির কাছাকাছি এবং বাকিগুলোর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি।এছাড়াও পাঞ্জাব, হরিয়ানা,বিহার এবং উপকূলীয়  আন্ধ্রপ্রদেশে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির উপরে  । দিল্লিতেও  সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে চারটি ডিগ্রী  বেশি । আইএমডি র ঘোষণায় বলা হয়  যে বিহার এবং গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে চার দিনের জন্য “গুরুতর” তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি দেখা যেতে পারে। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে  মুখ্যমন্ত্রী মমতা  বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কয়েক দিনের ছুটি ঘোষণা করেন ।  ত্রিপুরা সরকারও  রাজ্যে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতির কারণে ১৮ থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত সমস্ত সরকারী এবং রাষ্ট্রীয় সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল বন্ধ রাখার ঘোষণা করেন।  এর আগে ওড়িশাও একই নির্দেশ জারি করেছিল।

বর্তমানে তাপমাত্রার এই  ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আবহাওয়াবিদেরা বলেছেন বৃষ্টি শূন্যতার পাশাপাশি ধেয়ে আসা লু হাওয়া এমন দাবদহ পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে । এই অবস্থায় মানুষের  কাজকর্ম দারুনভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে । সাধারন থেকে নিম্নবিত্ত সব শ্রেনীর মানুষ কাজের প্রয়োজনে বাইরে বেরিয়ে প্রচণ্ড দুর্ভোগে পড়ছেন তা বলাই বাহুল্য ।মেডিক্যাল জার্নাল, দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে ভারতে ২০০০ – ২০০৪ এবং ২০১৭ – ২০২১ -এর মধ্যে প্রচণ্ড গরমের কারণে মৃত্যুতে ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ।   তাপের গরমের  কারণে ২০২১ সালে ভারতীয়দের মধ্যে ১৬৭.২বিলিয়ন সম্ভাব্য শ্রমঘণ্টার ক্ষতি হয়েছে, যার ফলে দেশের জিডিপির প্রায় ৫.৪ % এর সমান আয়ের ক্ষতি হয়েছে।

বর্তমানে বিজ্ঞানিরা  ঐক্যমতে  এসেছে যে পৃথিবী ক্রমশ উষ্ণ হচ্ছে এবং এই উষ্ণতা প্রধানত মানুষের কার্যকলাপের কারণে ঘটছে । সেই মত বিজ্ঞানীরা সতর্কবাণী উচ্চারণ করলেও স্বল্পোন্নত এবং ধনী দেশগুলো কেউ তাতে কর্ণপাত করেনি। পরমানবিক লড়াই  থেকে শুরু করে বৃক্ষচ্ছেদন নির্বিচারে করে চলেছে ।জাতিসংঘ বলছে, গত ১০ বছরে বিশ্বে বিলুপ্ত হয়েছে প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ হেক্টর বনভূমি,যার ফলশ্রুতি বৈশ্বিক উষ্ণতা । আবহাওয়াবিদের মতে এই শতাব্দীর শেষ দিকে সমুদ্রের জলস্তর ৩.৬১ ফিট পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে । এরফলে বন্যা একটি সাধারন সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে । আগামী ১৫ বছর পর আর্কটিক মহাসাগর গ্রীষ্মকালে থাকবে পুরোপুরি বরফ মুক্ত । এটি ভারতের মতো কৃষিপ্রধান ও অধিক জনসংখ্যার দেশের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এ অবস্থায় বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম রাখতে এবং কার্বন নিঃসরণ কমাতে অত্যন্ত উন্মুক্ত এবং উত্তপ্ত এলাকায় পর্যাপ্ত গাছ লাগানো জরুরী যা  তাপ বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করবে সেই সাথে উন্নত ও উন্নয়নশীল সমস্ত দেশগুলোকে একযোগে  তৎপরতার সাথে  অ্যাকশন প্ল্যান গ্রহণ করা জরুরি।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


ছৌশিল্পী পদ্মশ্রী নেপাল মাহতো ও বিশ্ব মঞ্চে ভারতের লোকনৃত্য

গার্গী আগরওয়ালা মাহাতোঃ আমাদের চারিদিকে বিশ্ব দ্রুত বিকশিত হচ্ছে,পরিবর্তিত হচ্ছে শিল্প সাধনার প্রকৃতি। এই পরিবর্তিত শিল্প সাধনার যুগে আমাদের সেই সমস্ত ব্যক্তিদের স্বীকৃতি দেওয়া এবং সম্মান করা অপরিহার্য যারা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রচারে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এমনই একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব হলেন ছৌশিল্পী পদ্মশ্রী নেপাল মাহতো। নেপাল মাহাতো, যার ছৌনৃত্যের জগতে  দেশে ও বিদেশে অতুলনীয় অবদান তাকে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘পদ্মশ্রী´এনে দিয়েছে। নেপাল মাহতোর জন্ম ১৭ জুন ১৯৫৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার বরাবাজার থানার আদাবনা নামে একটি ছোট গ্রামে। তার পিতা স্বর্গীয় নগেন্দ্রনাথ মাহাতো ও মাতা তুষ্ট মাহাতো। .....বিস্তারিত পড়ুন

একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) স্পেন সফরে

উত্তরাপথঃ  একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পেনে রয়েছেন। জানা যাচ্ছে, স্পেনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম বৈঠক হবে ফুটবল নিয়ে। ১৪ সেপ্টেম্বর, মাদ্রিদে লা লিগার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদলের বৈঠক। বাংলা ফুটবলের উন্নতির স্বার্থে সরকারের সঙ্গে কোনও বিশেষ চুক্তি হতে পারে লা লিগার । এই বৈঠকে তাঁর সঙ্গে থাকবেন ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহামেডান স্পোর্টিংয়ের ক্লাবকর্তারাও। এছাড়াও থাকার কথা  সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়েরও।যদিও তিনি এই মুহূর্তে লন্ডনে রয়েছেন লন্ডনে,সেখান থেকেই ১৪ তারিখ সরাসরি মাদ্রিদ পৌঁছবেন বলে খবর।এরপর স্পেনে মমতার লক্ষ্য রাজ্যের জন্য বিনিয়োগ টানা। রাজ্যে বিদেশি লগ্নি বাড়াতে তিনি সঙ্গে বড় প্রতিনিধিদল নিয়ে স্পেনে গিয়েছেন।প্রতিনিধিদলে রয়েছেন ময়দানের তিন ফুটবল ক্লাবের কর্তা, বই প্রকাশকদের একটি দল। .....বিস্তারিত পড়ুন

লোকসংস্কৃতির আলোকে মালদার শতাব্দী প্রাচীন গম্ভীরা  

মৈত্রেয়ী চৌধুরীঃ পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের একটি জেলা মালদা। আমের জন্য এই জেলাটি পরিচিতি লাভ করলেও এই জেলা আর ও একটি কারণে বিখ্যাত, তা হল গম্ভীরা । মালদার নিজস্ব লোকসংস্কৃতি।গম্ভীরা শব্দটি প্রকোষ্ট, গৃহ বা মন্দির অর্থের সঙ্গে আভিধানিক মিল থাকলেও এই অনুষ্ঠানটি উন্মুক্ত আকাশের নিচে বা কোথাও চাঁদোয়া বা ত্রিপল  দিয়ে ঢেকে অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলেন স্বয়ং দেবাদিদেব। এই উৎসবের তিনি 'নানা' নামে পরিচিত।একজন শিবের সাজে থাকেন, আর দেবাদিদেবের চেলার মতো কিছু সংখ্যক সেই নানার ভক্ত হয়ে খোল, করতাল হাতে উনার সঙ্গী হন। বাস্তব জগতের এবং পারিপার্শ্বিক যা মা সমস্যা থাকে তা  চেলার নানার কাছে অভিযোগ জানান, যেন নানা সেই অভিযোগ শুনে তার সমাধান করেন।শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই ভিড় করে জমায়েত .....বিস্তারিত পড়ুন

ধানের সাধ ভক্ষণ : জিহুড়

ড.  নিমাইকৃষ্ণ মাহাত: আশ্বিন সংক্রান্তিতে কৃষক সমাজের মধ্যে জিহুড় পার্বণ পালিত হয়। কৃষক সাধারণের মধ্যে জিহুড় পার্বণের একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। জিহুড় অর্থাৎ আশ্বিন সংক্রান্তির সময় বহাল জমিতে লাগানো ধান বা বড়ান ধানে থোড় আসতে শুরু করে। সুতরাং ধান গাছ গর্ভাবস্থায় থাকে। মানুষের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় নানা ধরনের আচার-সংস্কার পালন করা হয়। এই সংস্কারগুলির অন্যতম হলো " ন' মাসি " অর্থাৎ গর্ভাবস্থার নবম মাসে যে আচার -অনুষ্ঠান পালন করা হয়। এর কিছুদিন পরেই সন্তানজন্মগ্রহণ করে। মানব- সমাজের গর্ভাবস্থাজনিত এই ধরনের আচার সংস্কারের সঙ্গে ধান গাছের গর্ভাবস্থার কারণে পালনীয় অনুষ্ঠান জিহুড়ের সাদৃশ্য থাকে দেখা যায়। সেই জন্য অনেকে জিহুড় অনুষ্ঠানকে ধান গাছের 'সাধভক্ষণ'  বলে থাকেন। জিহুড়-এ ধান গাছ .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top