Bhil Tribe: রাজস্থানের ভিল উপজাতির সামাজিক জীবন

গার্গী আগরওয়ালা মাহাতো

ছবি সৌজন্য:উত্তরাপথ

উপজাতি রাজস্থানের প্রাচীনতম উপজাতি। ‘ভিল’ শব্দটি দ্রাবিড় শব্দ “বিলু” থেকে এসেছে যার অর্থ ‘ধনুক’। তিরন্দাজিতে তাদের অসাধারণ দক্ষতার কারণে এই উপজাতিটি এই নামটি পেয়েছে। রাজস্থানের আদিবাসী জনসংখ্যার দিক থেকে ভিল উপজাতি দ্বিতীয়।  ভিলরা প্রধানত দক্ষিণ রাজস্থানের বাঁশওয়াড়া, দুঙ্গারপুর, উদয়পুর এবং রাজসমন্দ জেলায় বাস করে।  এদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি উদয়পুর জেলায়। রাজস্থানের মোট উপজাতীয় জনসংখ্যার প্রায় ৩৯% ভিল।  প্রাচীন জনগোষ্ঠী হিসাবে ভিলদের উল্লেখ পুরাণে রয়েছে সেইসাথে ভাল তীরন্দাজ এবং ধনুকধারী বলে রামায়ণ ও মহাভারতেও ভিলদের উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়াও রাজস্থানের ইতিহাসে ভিলদের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। মহারানা প্রতাপের সেনাবাহিনীতে “ভিলু রানা” এবং আরও অনেক সাহসী যোদ্ধা ছিল, যারা তাকে যুদ্ধে অনেক সাহায্য করেছিল। ভিলু রানা এবং প্রতাপের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রতীক এখনও মেওয়ার রাজ্যের অস্ত্রের কোটে খোদাই করা আছে। রানা পুঞ্জা ভীল এবং মহারানা প্রতাপের পারস্পরিক যুদ্ধনীতির কারণেই মেওয়ার মুঘলদের হাত থেকে নিরাপদে ছিল। হলদিঘাটির যুদ্ধে রানাপুঞ্জ ও তার ভীল বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। ইতিহাসে ভিলরা তাদের অবিরাম সংগ্রামের কারণে ভাল যোদ্ধা হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। মেওয়ার এবং মুঘল যুগে ভীল সম্প্রদায়ের উচ্চ মর্যাদা ছিল, সেই সময়ে ভীল সম্প্রদায়কে রাওয়াত, ভোমিয়া এবং জায়গিরদার বলা হত।

বর্তমানে ভিলেরা পাহাড় ও সমতল সব জায়গাতে রয়েছে। যে সমস্ত ভিল পাহাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে তাদের আবাসস্থলের এলাকাগুলো সাধারণত এবড়োখেবড়ো ও বনভূমিতে আবৃত। যদিও আজ খুব সামান্য সংখ্যক ভিল পাহাড়ে কুঁড়েঘর বানিয়ে বসবাস করে। পাহাড়ের বুকে এসব কুঁড়েঘরগুলি ছড়ান দূর-দূরান্ত পর্যন্ত। ভিলদের ছোট গ্রাম বা এলাকাকে ‘ফালান’ এবং বড় গ্রামকে ‘পাল’ বলা হয়। ভিলদের বাড়িকে বলা হয় ‘কু’।  তাদের বাড়িগুলোকে ‘টাপাড়া’ও বলা হয়। পাহাড়ে বসবাসকারী ভিলদের পালভি বলা হয়। সমতল ভূমিতে বসবাসকারী ভিলদের বলা হয় বাংদি।তবে বর্তমানে এই বাংদি ভিলেরা কেউ আর কুঁড়েঘরে বাস করেনা। বেশীরভাগ ভিল সরকারী পাকা বাড়িতে বসবাস করে।  

ভিল সমাজ পুরুষতান্ত্রিক এবং অর্থনৈতিকভাবে তাদের প্রধান জীবিকা হল কৃষিকাজ সেইসাথে তারা পশুপালনও করে থাকে।বর্তমানে অনেক ভিল বনজ পণ্য বিক্রি ও শ্রম বিক্রিকে তাদের প্রধান পেশা হিসাবে গ্রহণ করেছে। রাজস্থানের উদয়পুরে আমরা যে ভিল উপজাতি গোষ্ঠীকে দেখতে পায় তারা মুলত ভিল জনগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় বিভাগের অন্তর্গত। এখানকার প্রতিটি গ্রামে ভিল উপজাতিদের মধ্যে একজন করে গ্রামপ্রধান রয়েছে যিনি তাদের সমস্ত সমস্যার সমাধান করেন। ভিলরা সাধারণত অন্য গোত্রে বিবাহ করে কিন্তু সমসামাজিক মর্যাদায়। ভিল সমাজ বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত এবং প্রতিটি গোত্র বিভিন্ন প্রানী এবং গাছপালার নামে। ভিলরা বিশ্বাস করে যে তাদের উৎপত্তি কোনও প্রাণী বা  গাছ থেকে।তাই আজও তারা তাদের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সেইসব গাছ বা পশুকে পূজা করে। ভিল জনজাতির লোকেরা নিজেদের ভগবান শিবের সন্তান মনে করে। আমজা মাতা/কেলওয়াদা মাতা, খড়িয়াল মাতা, হবণ মাতা সহ শীতলা মাতার পূজা করে।হিন্দু দেবতা ছাড়াও, ভিলরা স্থানীয় লোকদেবতাদেরও পূজা করে। গাওয়ারী (রায় নৃত্য), ঘূমার, গাইর, দ্বিচকি এবং হাতিমনা হল ভীলদের প্রধান নৃত্য।  হোলিতে তারা গাইর নাচ এবং নেজা নাচ পরিবেশন করে।  তাদের মধ্যে লোকগানও বেশ জনপ্রিয়।

ভিল সমাজে পুরুষদের মধ্যে বহু বিবাহের প্রচলন রয়েছে তবে বর্তমানে বেশীরভাগ ভিল পুরুষেরা একটি মাত্র বিবাহ করে। ভিল সমাজে এখনও পাত্রপক্ষকে পণ দিয়ে মেয়ে বিয়ে করে আনতে হয়। অর্থনৈতিকভাবে, ভিলরা অত্যন্ত দরিদ্র হওয়ায় অনেকক্ষেত্রে তারা পণ জোগাড় করতে পারেনা তাই তারা পালিয়ে বিবাহ করে। আজও ভিলদের একটি বড় অংশ বিভিন্ন কুসংস্কারে বিশ্বাসী। তারা বিশ্বাস করে পরিবারের কোনও সদস্যের মৃত্যু আসন্ন হলে তারা একটি বিশেষ পাখির ডাক শুনতে পাবে। তারপর কোনও সদস্যের মৃত্যু হলে আত্মীয়রা সেই মৃত ব্যক্তির মুখে সুরা দিয়ে দেয়। এর দ্বারা তারা বুঝাতে চায় তারা তাদের ভাগের সুরা মৃত ব্যক্তিকে দান করল। তারপর এক বছর সেই মৃত ব্যক্তিকে পরিবারের সদস্যদের মত আহার দেওয়ার প্রথা রয়েছে।

কালের নিয়মে ভিল সমাজে অনেক পরিবর্তন এসেছে কিন্তু আজও ভিলেরা তাদের সততা ও সহজ সরল ব্যবহারের জন্য পরিচিত।

খবরটি শেয়ার করুণ

6 thoughts on “Bhil Tribe: রাজস্থানের ভিল উপজাতির সামাজিক জীবন”

  1. সিদ্ধার্থ মজুমদার Siddhartha Majumdar

    ভালো এবং তথ্যসমৃদ্ধ লেখা।

  2. অসাধারণ লেখাটি তথ্যসমৃদ্ধ। রাজস্থান বরাবরই ঘটনাবহুল। এই লেখাটা পড়ে বেশ ভালো লাগলো।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


মানুষে মানুষে ঐক্য কীভাবে সম্ভব

দিলীপ গায়েন: হিন্দু,মুসলমান,ব্রাহ্মণ,তফসিলি।সকলেই মানুষ।কিন্তু এদের মধ্যে যে ব্যবধান তা হলো ধর্ম ও সাংস্কৃতিক। এই ব্যবধান মুছতে পারলে একাকার হওয়া সম্ভব। যারা বলছে আর্থিক সমতা প্রতিষ্ঠা হলে ব্যবধান মুছে যাবে, তাদের কথাটি বোধ হয় সঠিক নয়।তার প্রমাণ গরিব ও শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে আর্থিক ব্যবধান নেই। অথচ জাতিভেদ রয়ে গেছে। তেমনি কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা ব্যতীত ধনী ও শিক্ষিত সমাজে আর্থিক সচ্ছলতা থাকলেও জাতিভেদ রয়ে গেছে। একমাত্র হাসপাতালে বা চিকিৎসা ব্যবস্থায় জাতিভেদ নেই।কারণ সেখানে তো প্রচলিত ধর্মজাত প্রভেদ বা পরিচয় নেই। আছে মেডিসিন, যা সম্পূর্ণ বিজ্ঞান। কারোর ধর্ম বা জাত দেখে প্রেসক্রিপশন হয় কি? এখানে মানুষের একমাত্র এবং শেষ পরিচয় সে মানুষ। .....বিস্তারিত পড়ুন

৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল: হাইকোর্ট ও পর্ষদের টানাপড়েন অব্যাহত   

উত্তরাপথ: সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রাথমিকের ৩৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে আর তাই নিয়ে শুরু হয়েছে যুক্তি ও পাল্টা যুক্তির খেলা। বিচারপতির বক্তব্য পশ্চিমবঙ্গের এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের সময় এই শিক্ষকেরা অপ্রশিক্ষিত ছিলেন আর এই 'অপ্রশিক্ষিত প্রাথমিক শিক্ষকদের' নিয়োগ করা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা এবং সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ে। এই পদ্ধতির ত্রুটির কারণে এই শিক্ষকদের নিয়োগ বাতিল করা হল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top