২৭ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামের পর সামনে এল নারী শক্তি বন্দন আইন কিন্তু?

উত্তরাপথঃ মহিলা সংরক্ষণ বিল, ২৯২৩ বুধবার লোকসভায় পাস হয়েছে।সরকার এই বিলের নাম দিয়েছেননারী শক্তি বন্দন আইন।এই আইনকে সমাজে লিঙ্গ সমতা অর্জন এবং নারীর ক্ষমতায়নের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে রাজনৈতিক দলগুলির দ্বারা দেখান হলেও এটি ২৯২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিলটি কার্যকর হয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই । এটি কার্যকর হতে আরও কয়েকটি বছর লেগে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে ।  

এবার আসা যাক মহিলা সংরক্ষণ বিল প্রসঙ্গে। সহজ ভাষায়, মহিলা সংরক্ষণ বিলটি হল লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভাগুলিতে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ বা এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণের প্রস্তাব । বিলটিতে ৩৩ শতাংশ কোটার মধ্যে SC, ST এবং অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের জন্য উপ-সংরক্ষণের প্রস্তাব করা হয়েছে।বিলে প্রস্তাব করা হয়েছে যে প্রতি সাধারণ নির্বাচনের পর সংরক্ষিত আসন পরিবর্তন করতে হবে।  অর্থাৎ এবার যদি ১০টি আসন সংরক্ষিত থাকে, তাহলে পরের বার অন্য আর ১০টি আসন সংরক্ষণ করতে হবে।  আগের সিটে আবার রিজার্ভেশন প্রযোজ্য হবে না।

২৭ বছরের যাত্রা

ভারতে মহিলা সংরক্ষণ বিলের যাত্রা বেশ দীর্ঘ প্রায় ২৭ বছরের। এই দীর্ঘ যাত্রাপথে ৮ বার বিভিন্ন দলের সরকারের দ্বারা উপস্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু এটি বাস্তবায়ন করা যায়নি।দেবগৌড়ার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট সরকারের সময় ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬-এ এই বিলটি প্রথম আনা হয়েছিল।এটি ৮১ তম সংশোধনী বিল হিসাবে লোকসভায় পেশ করা হয়েছিল।তবে লোকসভা ভেঙে দেওয়ায় বিলটি হাউসে পাশ করানো যায়নি ।

এই প্রচেষ্টার প্রায় দুই বছর পরে, অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার ১৯৯৮ সালে ১২তম লোকসভায় বিলটি পুনরায় পেশ করে।বাজপেয়ী ১৯৯৮ সালে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের কথাও উল্লেখ করেছিলেন।

 তবে এবারও বিলটি পাসের জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন না পাওয়ায় তা আবার আটকে যায়।  পরে এটি ১৯৯৯, ২০০২ এবং ২০০৩ সালে বাজপেয়ী সরকারের সময় আবার পাশ করার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু কোন সাফল্য পায়নি।

 মনমোহন সিং-এর নেতৃত্বাধীন ইউপিএ-১ সরকারের আমলে মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে আলোচনা আবার গতি পায়।৬ মে, ২০০৮-এ, এই বিলটি আবার রাজ্যসভায় পেশ করা হয়েছিল এবং তিন দিন পরে, ৯ মে, এটি স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল।

 স্থায়ী কমিটি দেড় বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত করে ২০০৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রতিবেদন পেশ করে।এরপর সরকার কখনই এটিকে আবার লোকসভায় বিবেচনার জন্য রাখেনি এবং ২০১৪ সালে লোকসভা ভেঙে দেওয়ার সাথে সাথে এটি আর পাস করা যায়নি।অর্থাৎ বিভিন্ন সময়ে এই বিলটি মোট ৮ বার সংসদে পেশ করা হলেও তা আইনে পরিণত হয়নি।

 মহিলা সংরক্ষণ বিলের প্রয়োজনীয়তা –

 কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে ১৮ সেপ্টেম্বর সংসদে বেশ কয়েকটি পরিসংখ্যান দিয়েছেন এবং ব্যাখ্যা করেছেন কেন মহিলা সংরক্ষণ বিলের প্রয়োজন।তিনি বলেছিলেন যে আজ লোকসভায় প্রায় ১৪ শতাংশ মহিলা সাংসদ এবং রাজ্যসভায় প্রায় ১০ শতাংশ।১৯৫২ সালে, প্রথম লোকসভায় প্রায় ৫ শতাংশ মহিলা সাংসদ ছিলেন।তার মানে ৭০ বছরে বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি। তিনি আরও বলেন, আমেরিকা ও ব্রিটেনের পার্লামেন্টে মহিলা এমপি ছিলেন ২-৩ শতাংশ, আজ তা ২৮ ও ৩৩ শতাংশ।

 প্রধানমন্ত্রী মোদি আরও বলেছেন যে স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত, প্রায় ৭৫০০ সাংসদ সংসদের উভয় কক্ষে অবদান রেখেছেন, যার মধ্যে মাত্র ৬০০ জন মহিলা সাংসদ ছিলেন।

 এর আগে ২০১৮ সালে, কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী তার দলের পক্ষ থেকে মহিলা সংরক্ষণ বিলে সরকারকে সমর্থন করার কথা বলেছিলেন।এই পরিস্থিতিতে, এখন কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ১৩ বছর পর আবার মহিলা সংরক্ষণ সংক্রান্ত একটি বিলটি পার্লামেন্টে পাশ করাল।সরকার এই বিলের নাম দিয়েছে ‘নারী শক্তি বন্দন আইন।

তবে সংবিধানের ১২৬ তম সংশোধন অনুসারে বিলটি নারী শক্তি বন্দন আইন হিসাবে স্বীকৃত হওয়ার পরে সদ্য হওয়া আদমশুমারির তথ্যের ভিত্তিতে নির্বাচনী এলাকার পুনর্নির্ধারণের পরেই নতুন সংরক্ষণ আইনটি প্রযোজ্য হবে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন  

উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর  অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

ওজন হ্রাস (weight loss) মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে

উত্তরাপথঃ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, শাকসবজি, সামুদ্রিক খাবার এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ একটি ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য খাওয়া - এমনকি শুধুমাত্র খাদ্যের নির্দেশিকা অনুসরণ করে   ওজন হ্রাস (weight loss)মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে বলে মনে করা হয়।সাম্প্রতি ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত, একটি  গবেষণায় দেখা গেছে যে ওজন হ্রাস মস্তিষ্কে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ৯ মাস পর্যন্ত ধীর করে (aging process) দিতে পারে। গবেষণায় ৬০ থেকে ৭৮ বছর বয়সের মধ্যে ৪৭ জন অংশগ্রহণকারীকে জড়িত করা হয়েছিল, যাদের প্রত্যেকেরই ওজন বেশি বা স্থূল ছিল এবং তাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ  ছিল। তাদের এলোমেলোভাবে একটি ক্যালোরি-সীমাবদ্ধ গ্রুপ বা একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে বরাদ্দ করা হয়েছিল।ক্যালোরি-সীমাবদ্ধতা গোষ্ঠীর সদস্যদের একটি খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করে, যার লক্ষ্য ছিল তাদের আনুমানিক প্রয়োজনের চেয়ে ১০ – ১৫% কম ক্যালোরি গ্রহণ করা। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ তাদের খাদ্য পরিবর্তন করেনি .....বিস্তারিত পড়ুন

Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে  বিতর্কে এ আর রহমান

উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top