চিনিযুক্ত পানীয়ের দৈনিক ব্যবহার কি লিভার ক্যান্সারের সাথে যুক্ত

উত্তরাপথঃ এতদিন আমরা জানতাম চিনিযুক্ত পানীয়ের দীর্ঘদিন ধরে অত্যধিক ব্যবহার স্থূলতা, ডায়াবেটিস এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগ সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সাথে যুক্ত। সম্প্রতি Brigham and Women’s Hospital এর গবেষকরা, Mass General Brigham healthcare system এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরা প্রথম, চিনিযুক্ত পানীয়, কৃত্রিমভাবে মিষ্টিযুক্ত পানীয়, এবং লিভার ক্যান্সারের ঘটনা মধ্যে সংযোগ আবিস্কার করেছেন,যা  সম্প্রতি JAMA জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষক দলের সদস্য Longgang Zhao এর মতে এটি সম্ভবত প্রথম গবেষণা যেখানে,চিনি-মিষ্টিযুক্ত পানীয় গ্রহণ এবং দীর্ঘস্থায়ী লিভার রোগের মৃত্যুহারের মধ্যে একটি সম্পর্ক খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়েছে।এই পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় বিশেষত মহিলাদের স্বাস্থ্য  অধ্যয়নের জন্য প্রায় ১০০,০০০ পোস্টমেনোপজাল মহিলা অন্তর্ভুক্ত করা হয়।  অংশগ্রহণকারীরা তাদের স্বাভাবিক কোমল পানীয় (ফলের রস সহ নয়) সেবনের কথা জানিয়েছে এবং এরপর তিন বছর তারা কৃত্রিমভাবে মিষ্টি পানীয় খাওয়ার কথা জানিয়েছে। প্রসঙ্গত  অংশগ্রহণকারীদের গড়ে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অনুসরণ করা হয়েছিল। 

এরপর চূড়ান্ত বিশ্লেষণে মোট ৯৮,৭৮৬ পোস্টমেনোপজাল মহিলা অন্তর্ভুক্ত ছিল।যে সমস্ত মহিলারা প্রতিদিন এক বা একাধিক চিনিযুক্ত পানীয় পান করেছেন তাদের ৬.৮ শতাংশ লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি ৮৫ শতাংশ বেশি এবং দীর্ঘস্থায়ী লিভারের রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি ৬৮ শতাংশ বেশি।গবেষক দলের মতে চিনিযুক্ত পানীয়গুলি কেন লিভার ক্যান্সার এবং রোগের ঝুঁকি বাড়ায় তা নির্ধারণ করার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন। 

প্রসঙ্গত লিভার ক্যান্সার, বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারের অন্যতম সাধারণ ধরন, চিনিযুক্ত পানীয়ের সাথে যুক্ত বলে গবেষকরা মনে করছেন। Cancer Epidemiology Biomarkers and Prevention জার্নালে একটি সমীক্ষা  প্রকাশ করা হয়েছে যেখানে দেখান হয়েছে  যারা প্রতিদিন চিনিযুক্ত পানীয় গ্রহণ করেন তাদের হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা (এইচসিসি) হওয়ার ঝুঁকি ৭৯% বেশি , যা লিভার ক্যান্সারের সবচেয়ে সাধারণ রূপ। এই পানীয়গুলিতে বেশি মাত্রায় চিনির উপস্থিতি ওজন বৃদ্ধি, ইনসুলিন প্রতিরোধ এবং প্রদাহের জন্য দায়ী, এগুলি সবই লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকির  অন্যতম কারণ।

তাই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে এই পানীয়গুলি পান করা কমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জন সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অত্যধিক চিনি খাওয়ার সাথে সম্পর্কিত সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং স্বাস্থ্যকর বিকল্পগুলি প্রচার করা এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিষ্টি ছাড়া চা, বা প্রাকৃতিক ফল-মিশ্রিত জল এক্ষেত্রে শর্করার গ্রহণকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে এবং ক্ষতিকারক প্রভাব ছাড়াই হাইড্রেশন সরবরাহ করতে পারে। উপরন্তু, ফলের রসের পরিবর্তে পুরো ফলের ব্যবহারকে উৎসাহিত করা লিভারের স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।    বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি

উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা  ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন

দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?

উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন  দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI  এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে।   বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।  নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা  ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী?  আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত?  পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না?  এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top