Golden Fort: রাজস্থানের থর মরুভূমির কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সত্যজিতের সেই “সোনার কেল্লা”

Golden Fort বা সোনার কেল্লা যা রাজস্থানে জয়সালমেরে অবস্থিত । ছবি – উত্তরাপথ

গার্গী আগরওয়ালা মাহাতোঃ বাঙালি মাত্রই “সোনার কেল্লা”(Golden Fort) নামটির সাথে পরিচিত। এটি সত্যজিৎ রায়ের লেখা ক্লাসিক বাংলা গোয়েন্দা উপন্যাস যা পরে সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় চলচিত্রের রূপ পায়।আজ আমরা বাঙালির সেই নস্টালজিয়া”সোনার কেল্লা” ঘুরে দেখব যা পশ্চিম ভারতের রাজস্থানের থর মরুভূমির কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত জয়সালমির দুর্গ নামে পরিচিত।বেলেপাথর দিয়ে তৈরি এই দুর্গটিতে সকালের সূর্যের রশ্মি পড়লে এটি সোনার মতো চকচক করে, তাই হয়ত সত্যজিৎ রায় এই দুর্গটিকে “সোনার কেল্লা”(Golden Fort)বলেছিলেন।  

জয়সালমির দুর্গটি বিশ্বের বৃহত্তম দুর্গগুলির মধ্যে একটি। এই দুর্গটি একটি বিস্তীর্ণ মরুভূমির মাঝখানে ২৫০ ফুট উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা। দুর্গটি ১১৫৬ খ্রিস্টাব্দে রাজপুত শাসক রাওয়াল জয়সাল দ্বারা  ত্রিকুটা পাহাড়ের চূড়ায়  নির্মিত হয়েছিল।দুর্গটির চিত্তাকর্ষক স্থাপত্যের জন্য, হলুদ বেলেপাথর ব্যবহার করা হয়েছিল, যা পুরো কাঠামোকে একটি সোনালি আভা দেয়।জয়সালমির দুর্গটির দেয়াল এবং বারান্দায় অপূর্ব কারুকাজ রয়েছে যা সেই যুগের কারিগরদের শৈল্পিক দক্ষতাকে প্রতিফলিত করে।

Golden Fort বা সোনার কেল্লা দুর্গ

জয়সালমির দুর্গ শুধু একটি ঐতিহাসিক দুর্গ নয়; এটি একটি জীবন্ত দুর্গ যেখানে এখনও প্রায় ৩০০০ লোক দুর্গটির মধ্যে বসবাস করে।দুর্গে বসবাসকারী মানুষদের বেশিরভাগই সেই সময়ের রাজকর্মচারী এবং ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের লোক।দুর্গটির মধ্যে অসংখ্য হাভেলি (ঐতিহ্যবাহী রাজস্থানী প্রাসাদ), মন্দির , দোকান ও হোটেল রয়েছে।পুরো দুর্গটির মধ্যে অসংখ্য সরু গলি রাস্তা রয়েছে যা এক অদ্ভুত গোলকধাঁধার অনুভুতি প্রদান করে পর্যটকদের।

দুর্গটির প্রধান আকর্ষণ রাজার প্রাসাদ ও তার পাশেই রানীর প্রাসাদ যাকে বর্তমানে একটি  সংগ্রহশালার রূপ দেওয়া হয়েছে। এই সংগ্রহশালাটিতে অসংখ্য কক্ষ রয়েছে ,যা রাজ পরিবারের এক বিস্তৃত ইতিহাস আমাদের সামনে তুলে ধরে।এছাড়াও দুর্গটির মধ্যে  বেশ কয়েকটি জৈন মন্দির এবং লক্ষ্মী মন্দির রয়েছে, যা এই রাজ্যের উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক এবং স্থাপত্য নিদর্শন বহন করে। সত্যজিৎ রায়ের “সোনার কেল্লা”র(Golden Fort) মূখ্য চরিত্র সেই ছোট্ট ছেলেটি মুকুল যার বাড়ী ‘’ মুকুলের বাড়ী’’ নামে পরিচিত সেটিও জয়সালমির দুর্গের এক অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র ।

সোনার কেল্লা”র(Golden Fort) মূখ্য চরিত্র সেই ছোট্ট ছেলেটি মুকুল যার বাড়ীর ধ্বংসাবশেষ । স্থানীয় মানুষদের কাছে এটি ‘’ মুকুলের বাড়ী’’ নামে পরিচিত । ছবি -উত্তরাপথ

২৫০ ফুট উঁচু দুর্গটি থর মরুভূমির অন্যতম আকর্ষণ। এই দুর্গটি ৩০ ফুট উঁচু একটি আকর্ষণীয় প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত এবং এতে ভারতীয় শীশম কাঠের তৈরি একটি ৬০ ফুট লম্বা প্রধান ফটক রয়েছে।রাজস্থানের অন্যান্য দুর্গের মত এই দুর্গটিতে ৪টি প্রবেশদ্বার গণেশ পোল, বায়ু পোল, সুরজ পোল এবং অক্ষয় পোল রয়েছে। এই চারটি প্রবেশদ্বারের মধ্যে একটি প্রবেশ দ্বারের উপর কামান রাখা রয়েছে যা পর্যটকদের এক আলাদা অভিজ্ঞতা প্রদান করে। জয়সালমির দুর্গ সমৃদ্ধ রাজপুতানা ঐতিহ্যের প্রতীক এবং রাজপুত শাসকদের বীরত্বের  জীবন্ত সাক্ষ্য হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে।দুর্গটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য, যা ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং স্থাপত্যের অনন্য মিশ্রণের সাথে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। দুর্গের মধ্যে প্রাণবন্ত স্থানীয় বাজারগুলি এর আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে তোলে।

জয়সালমির দুর্গ, তার মন্ত্রমুগ্ধকর স্থাপত্য এবং ঐতিহাসিক তাৎপর্য সহ, রাজস্থানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মুকুটে একটি রত্ন হিসাবে রয়েছে।এর সোনার দেয়ালের জাদু এবং পাথরের অপূর্ব কারুকাজগুলি দেখতে বিশ্বজুড়ে দর্শকরা এখানে আসেন। তবে বর্তমানে জয়সালমির দুর্গ তার নিছক বয়স এবং পর্যটনের প্রভাবের কারণে সংরক্ষণ ও সংরক্ষণ সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।এই সাংস্কৃতিক সম্পদের দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করার জন্য সংরক্ষণের প্রচেষ্টা শুরু করা হয়েছে । কিন্তু দুর্গের ঐতিহ্য বজায় রাখতে স্থানীয় মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি

আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।    বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে

উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর  প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top