গর্ভনিরোধক পিলগুলি (Oral contraceptive pill) কি সত্যই বিষণ্ণতার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে?

উত্তরাপথঃ গবেষকরা ব্যক্তিদের মধ্যে মৌখিক গর্ভনিরোধক পিল ব্যবহার এবং মানসিক বিষণ্ণতার মাত্রা কম হওয়ার মধ্যে কোনও সম্পর্ক আছে কিনা তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন।তবে এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে মৌখিক গর্ভনিরোধক পিল(Oral contraceptive pills or OCP) এবং মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে সম্পর্ক জটিল যা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে পরিবর্তিত হতে পারে।কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টিনযুক্ত কম্বিনেশন পিল সহ কিছু হরমোনজনিত গর্ভনিরোধক পিল মেজাজের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং কিছু ব্যক্তির মধ্যে বিষণ্ণতার ঝুঁকি কমাতে পারে। এই হরমোনগুলি মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার এবং হরমোনের মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে, যা কিছু ব্যবহারকারীর মেজাজ উন্নত করতে অবদান রাখতে পারে।

যাইহোক, এটি বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে সমস্ত ব্যক্তি একই প্রভাবের সম্মুখীন হবেন না, এবং কেউ কেউ গর্ভনিরোধক পিল ব্যবহার করার সময় নেতিবাচক মেজাজ পরিবর্তন বা হতাশাজনক লক্ষণগুলিও অনুভব করতে পারেন।তবে মৌখিক গর্ভনিরোধক পিল এবং মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে কোনও সম্পর্ক আছে কিনা তা আলোচনা করার জন্য গবেষকরা সাম্প্রতিক একটি  গবেষণা করেছেন যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৬,২৩৯জন মহিলার তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন।সমীক্ষায় দেখা গেছে যে মহিলারা মৌখিক গর্ভনিরোধক পিল (OCP) ব্যবহার করেন তাদের মানসিক বিষণ্ণতায় ভোগার সম্ভাবনা কম।

গবেষণায় ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৬,২৩৯ জন মহিলার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে যে বর্তমান OCP ব্যবহারকারীদের মধ্যে বড় মানসিক বিষণ্ণতার ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল ৪.৬%।  বিপরীতে যারা আগে Oral contraceptive pills (OCP) ব্যবহার করেছিলেন তাদের মধ্যে  মানসিক বিষণ্নতার হার ছিল  ১১.৪% । বোস্টনের ডানা-ফারবার ক্যান্সার ইনস্টিটিউট (Dana – Farber Cancer Institute in Boston) এবং ডেভিস ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার (University of California, Davis) বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি অ্যাংলিয়া রাস্কিন ইউনিভার্সিটির (Anglia Ruskin University) গবেষকরা এই গবেষণার নেতৃত্ব দেন।

গবেষকরা তাদের অনুসন্ধানের জন্য দুটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যার পরামর্শ দিয়েছেন, যার একটি হল OCP হতাশার কারণ হতে পারে। অন্যটি হল পিল গ্রহণ অবাঞ্ছিত গর্ভাবস্থা সম্পর্কে উদ্বেগ দূর করতে পারে, যা OCP ব্যবহারকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। তবে এটাও সম্ভব যে ফলাফলগুলি “সারভাইভার বায়াস” দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে, যেখানে যে মহিলারা Oral contraceptive pills (OCP) ব্যবহার করার সময় মানসিক বিষণ্ণতার লক্ষণগুলি অনুভব করেন তারা এটি গ্রহণ করা বন্ধ করে দেন এবং তাদের প্রাক্তন ব্যবহারকারীদের বিভাগে ধরে নেওয়া হয়।

গবেষণায় বর্তমান ব্যবহারকারী এবং প্রাক্তন ব্যবহারকারীদের মধ্যে, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত বা বিচ্ছিন্ন মহিলা, স্থূল মহিলা বা যাদের ক্যান্সারের ইতিহাস রয়েছে তাদের বিষণ্নতার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার  সম্ভাবনা বেশি ছিল।  এছাড়াও, প্রাক্তন ব্যবহারকারীদের মধ্যে, মানসিক বিষণ্ণতা সাধারণত এমন মহিলাদের মধ্যে বেশী পাওয়া গিয়েছিল যারা কালো বা হিস্পানিক ছিল, ধূমপায়ী ছিল, শিক্ষার মাত্রা নিম্ন স্তরের ছিল বা দারিদ্র্যের সম্মুখীন হয়েছিল।

অ্যাংলিয়া রাস্কিন ইউনিভার্সিটির (Anglia Ruskin University) পোস্টডক্টরাল রিসার্চ ফেলো, প্রধান লেখক ডাঃ জুলিয়া গাওরনস্কা (Dr. Julia Gawronska) বলেছেন: “গর্ভনিরোধক স্বাস্থ্য সুরক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বেশিরভাগ মহিলাই মানসিক বিষণ্ণতার লক্ষণগুলি অনুভব না করেই মৌখিক গর্ভনিরোধক পিল গ্রহণ করেন। তবে যে সমস্ত মহিলারা এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অনুভব করতে পারেন তাদের মধ্যে একটা মানসিক বিষন্নতা তৈরি হতে পারে।‘’ গবেষণায় আরও বলা হয়েছে  যে বর্তমানে মৌখিক গর্ভনিরোধক পিল গ্রহণকারী মহিলারদের পূর্বে পিল গ্রহণকারী মহিলাদের তুলনায় বিষন্নতার মাত্রা অনেক কম ছিল।

গবেষকদের ধারনা যেসমস্ত মহিলা গর্ভনিরোধক পিলগুলির (Oral contraceptive pill)পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসাবে মানসিক বিষণ্ণতাকে দায়ী করছেন এবং গর্ভনিরোধক বড়িগুলি ব্যবহার করার বিষয়ে বিবেচনা করছেন এমন মহিলাদের গর্ভনিরোধক পিলগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানানো গুরুত্বপূর্ণ ছিল।অন্যদিকে যেহেতু আমরা এই গবেষণায় শুধুমাত্র সম্মিলিত গর্ভনিরোধক বড়িগুলি নিয়ে তদন্ত করেছি, তাই আমরা অন্যান্য গর্ভনিরোধক বিকল্পগুলি, যেমন মিনি পিল, গর্ভনিরোধক প্যাচ, হরমোনাল সর্পিল, যোনি রিং বা গর্ভনিরোধক রডগুলি সম্পর্কে কোনও গবেষণা করা হয়নি যা এই গবেষণার সবচেয়ে বড় ত্রুটি। যদি গবেষণায় বিভিন্ন গর্ভনিরোধক পদ্ধতিগুলি তুলনা করে আলোচনা করা হত তাহলে তা   মহিলাদেরকে তাদের গর্ভনিরোধক বিকল্পগুলি সম্পর্কে সুপরিচিত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করার জন্য আরও বেশি তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারত ৷

Reference: “Association of oral contraceptive pill use and depression among US women” by Julia Gawronska, Catherine Meads, Lee Smith, Chao Cao, Nan Wang and Susan Walker, 11 October 2023, Journal of Affective Disorders.

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


ওজন হ্রাস (weight loss) মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে

উত্তরাপথঃ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, শাকসবজি, সামুদ্রিক খাবার এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ একটি ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য খাওয়া - এমনকি শুধুমাত্র খাদ্যের নির্দেশিকা অনুসরণ করে   ওজন হ্রাস (weight loss)মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে বলে মনে করা হয়।সাম্প্রতি ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত, একটি  গবেষণায় দেখা গেছে যে ওজন হ্রাস মস্তিষ্কে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ৯ মাস পর্যন্ত ধীর করে (aging process) দিতে পারে। গবেষণায় ৬০ থেকে ৭৮ বছর বয়সের মধ্যে ৪৭ জন অংশগ্রহণকারীকে জড়িত করা হয়েছিল, যাদের প্রত্যেকেরই ওজন বেশি বা স্থূল ছিল এবং তাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ  ছিল। তাদের এলোমেলোভাবে একটি ক্যালোরি-সীমাবদ্ধ গ্রুপ বা একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে বরাদ্দ করা হয়েছিল।ক্যালোরি-সীমাবদ্ধতা গোষ্ঠীর সদস্যদের একটি খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করে, যার লক্ষ্য ছিল তাদের আনুমানিক প্রয়োজনের চেয়ে ১০ – ১৫% কম ক্যালোরি গ্রহণ করা। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ তাদের খাদ্য পরিবর্তন করেনি .....বিস্তারিত পড়ুন

দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?

উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন  দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI  এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে।   বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।  নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা  ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী?  আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত?  পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না?  এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে

উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি।  ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে।  আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি।  এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন।  সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে।  এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top