দেশি ঘি (Desi Ghee) এর স্বাস্থ্য উপকারিতা

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ঐতিহ্যগত এবং প্রাকৃতিক খাদ্য পণ্যগুলির প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে তেমন কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া অসংখ্য স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করে। এমনই একটি পণ্য যা ইদানিং জনপ্রিয়তা পেয়েছে তা হল দেশি ঘি(Desi Ghee)। পরিষ্কার করা মাখন থেকে প্রাপ্ত, দেশি ঘি (Desi Ghee)। এটি এমন এক উপাদান যা কেবল খাবারের স্বাদই বাড়ায় না বরং আমাদের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য বেশ কিছু সুবিধাও প্রদান করে।

আগে আমাদের প্রবীণরা তাদের খাবারে ঘি অন্তর্ভুক্ত করতেন, প্রাচীনকালে এটি শক্তির সেরা উৎস হিসাবে বিবেচিত হত।  ঘিতে স্বাস্থ্যকর চর্বি পাওয়া যায়, যা আমাদের শুধু শক্তিই দেয় না, অনেক উপকারও দেয় এবং রোগ থেকে রক্ষা করে।  বেশির ভাগ স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে ঘিতে।  গরুর দুধের ঘিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন কে রয়েছে।  আসুন জেনে নিই খাদ্যতালিকায় ঘি অন্তর্ভুক্ত করলে কী কী উপকার পাওয়া যায়।

আপনিও যদি এমন লোকদের মধ্যে থাকেন যারা ঘিকে শুধু চর্বি বলে মনে করেন, তাহলে আসুন আমরা আপনাকে বলি যে এটি এমন একটি চর্বি যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।বিশেষত শীতকালে ঘি খেলে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়।  ঘি খেলে হজমশক্তি ভালো থাকে।এছাড়া এটি ত্বকের জন্য উপকারী।  এটি ত্বকে একটি নতুন আভা দিতে পারে যা শীতকালের শুষ্ক এবং প্রাণহীন ত্বকে।  শুধু তাই নয়, কাশি থেকে মুক্তি পেতেও ঘি আপনাকে সাহায্য করতে পারে।  তাহলে কিসের জন্য অপেক্ষা করছেন, আসুন জেনে নেওয়া যাক দেশি ঘি খাওয়ার অগণিত উপকারিতা সম্পর্কে।

দেশি ঘি (Desi Ghee) অপরিহার্য পুষ্টির একটি পাওয়ার হাউস। এটিতে ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে রয়েছে, যা বিভিন্ন শারীরিক ক্রিয়াকলাপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাট-দ্রবণীয় ভিটামিন। এই ভিটামিনগুলি স্বাস্থ্যকর ত্বক বজায় রাখতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে এবং রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও দেশি ঘি স্বাস্থ্যকর চর্বির একটি ভালো উৎস, যার মধ্যে রয়েছে ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

দেশি ঘি দীর্ঘদিন ধরে তার পাচক বৈশিষ্ট্যের জন্য স্বীকৃত। দেশি ঘি -তে বিউটারিক অ্যাসিডের উপস্থিতি পাচনতন্ত্রের আস্তরণের কোষগুলিকে পুষ্ট করে অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে। এটি প্রদাহ কমাতে, উপকারী অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে এবং পুষ্টির শোষণ বাড়াতে সাহায্য করে। আপনার খাদ্যতালিকায় দেশি ঘি অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভাব্যভাবে হজম সংক্রান্ত সমস্যা যেমন ফোলা, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদহজম উপশম করতে পারে।

মাঝারি-চেইন ট্রাইগ্লিসারাইড (MCTs) এর উচ্চ ঘনত্বের কারণে দেশি ঘি(Desi Ghee) শক্তির একটি চমৎকার উৎস হিসেবে কাজ করে। এমসিটিগুলি সহজেই হজম হয় এবং শরীর দ্বারা দ্রুত শক্তিতে রূপান্তরিত হয়, যা ক্রীড়াবিদ বা প্রাকৃতিক শক্তি বৃদ্ধি করতে চাওয়া ব্যক্তিদের জন্য দেশি ঘি কে একটি আদর্শ পছন্দ করে তোলে। তদুপরি, দেশি ঘি’র মধ্যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উপস্থিতি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য এবং জ্ঞানীয় কার্যকারিতাকে সমর্থন করে, সম্ভাব্যভাবে স্মৃতিশক্তি এবং ফোকাস উন্নত করে।

‘দেশি ঘি খেলে ওজন বাড়ে’এই রকম এক জনপ্রিয় বিশ্বাসের বিপরীতে, একটি সুষম খাদ্যের মধ্যে মাঝারি পরিমাণে দেশি ঘি অন্তর্ভুক্ত করা আসলে ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। দেশি ঘি তে উপস্থিত স্বাস্থ্যকর চর্বি তৃপ্তি বাড়াতে, তৃষ্ণা কমাতে এবং পূর্ণতার অনুভূতি বাড়াতে সাহায্য করে। এটি অতিরিক্ত খাওয়া প্রতিরোধ করতে পারে এবং ক্যালোরি-নিয়ন্ত্রিত খাদ্যের অংশ হিসাবে খাওয়া হলে এটি একটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে অবদান রাখতে পারে।

দেশি ঘি ময়শ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যা ত্বক এবং চুল উভয়েরই উপকার করতে পারে। দেশি ঘিতে উপস্থিত ভিটামিন এবং ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের পুষ্টি জোগাতে, এর স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করতে এবং একটি স্বাস্থ্যকর বর্ণকে উন্নীত করতে সাহায্য করে। উপরন্তু, চুলে দেশি ঘি লাগালে তা শুষ্কতা, কুঁচকে যাওয়া এবং বিভক্ত প্রান্তের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে।

দেশি ঘি (Desi Ghee) , এর সমৃদ্ধ পুষ্টির প্রোফাইল এবং অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা সহ, যে কোনও খাদ্যের জন্য একটি মূল্যবান সংযোজন। হজমে সহায়তা করা এবং শক্তি বৃদ্ধি করা থেকে শুরু করে ওজন ব্যবস্থাপনার প্রচার এবং ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি, দেশি ঘি আমাদের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে। যাইহোক, এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে পরিমিত পরিমাণে দেশি ঘি খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যেকোনো খাবারের অত্যধিক ব্যবহার বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

বিঃদ্রঃ- আপনার খাদ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করার আগে একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদার বা পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে

উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর  প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন

সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top