Japan;জাপানের সমীক্ষায় প্রকাশ সেখানে এক-চতুর্থাংশ মানুষদের মধ্যে বিয়ে করার ইচ্ছা দেখা যাচ্ছে না 

প্রীতি গুপ্তাঃ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, জাপান (Japan) একটি অনন্য সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন।সেখানকার এক-চতুর্থাংশ মানুষদের মধ্যে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছা দেখা যাচ্ছে না ,তারফলে জাপানের জনসংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে। সমীক্ষায় প্রকাশ জাপানে (Japan) ৩৪.১ শতাংশ অবিবাহিত পুরুষ এবং মহিলার অনুপাত যারা কখনোই রোমান্টিক সম্পর্কে ছিল না। জাপানের সর্বশেষ সমীক্ষাটি সেপ্টেম্বরে পরিচালিত হয়েছিল এবং এই মাসে তা প্রকাশিত হয়।সমীক্ষাটিতে ১,২০০ জন অবিবাহিত প্রাপ্তবয়স্ককে প্রশ্ন করা হয় ।  উত্তরদাতাদের মধ্যে ১৯.৪ শতাংশ মহিলা এবং ২৩.৭ শতাংশ পুরুষ ছিলেন ,যারা বলেছেন যে একটি রোমান্টিক সম্পর্ক স্থাপন করা মানে সময় এবং অর্থের অপচয়।

জাপানের এই সাম্প্রতিক প্রবণতাটি একটিকে যেমন কৌতূহল এবং উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে , অন্যদিকে সমাজতত্ত্বের গবেষকদের এই ঘটনার জন্য অবদানকারী অন্তর্নিহিত কারণগুলির গভীরে অনুসন্ধান করতে প্ররোচিত করেছে।ভারত সহ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলি যখন তাদের অত্যাধিক জনসংখ্যার বৃদ্ধির সমস্যায় চিন্তিত সেখানে জাপানের এই বিপরীত চিত্র সেখানকার রাষ্ট্রনেতাদের উদ্বেগের কারণ।  আজ আমরা জাপানের এই চমকপ্রদ পরিসংখ্যানের পিছনের কারণগুলি এবং জাপানি সমাজের জন্য এর সম্ভাব্য প্রভাবগুলি অন্বেষণ করব।

গবেষকদের মতে জাপানের এই সমীক্ষার ফলাফলের পেছনে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক কারণ অবদান রাখতে পারে।প্রথমেই তারা জাপানের কর্মসংস্কৃতির কথা বলেছেন যা প্রায়শই দীর্ঘ কাজের সময় দাবি করে এবং ক্যারিয়ারের অগ্রগতিকে অগ্রাধিকার দেয়, ব্যক্তিগত সম্পর্কের জন্য খুব কম সময় দেয়। যা একজন ব্যক্তিকে  বিয়ে করা তথা রোমান্টিক সম্পর্ক অনুসরণ করতে নিরুৎসাহিত করতে পারে।

বিবেচনা করার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল জাপানে ক্রমবর্ধমান লিঙ্গ সমতা । ঐতিহাসিকভাবে, প্রথাগত লিঙ্গভেদ সমাজের কাজকর্মের উপর অনেকটা প্রভাব বিস্তার করত পুরুষদের উপর প্রাথমিক উপার্জনের দায়িত্ব থাকত এবং মহিলাদের উপর থাকত ঘরের দায়িত্ব। কিন্তু বর্তমানে পরিবর্তিত অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে অধিক সংখ্যক নারী জীবিকার সন্ধানে বাইরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। পুরুষ ও মহিলা উভয়ের  কর্মজীবনে অতিরিক্ত ব্যস্ততা সামাজিক সম্পর্কগুলো বজায় রাখার ক্ষেত্রে অনীহা সৃষ্টি করছে।

প্রযুক্তি এবং সোশ্যাল মিডিয়ার উত্থান জাপানে ডেটিং প্যাটার্ন প ভূমিকা পালন করেছে। অনলাইন যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম এবং ভার্চুয়াল বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম আবির্ভাবের সাথে, কিছু ব্যক্তি মুখোমুখি সম্পর্কে জড়িত হওয়ার পরিবর্তে ডিজিটাল মাধ্যমে অন্যদের সাথে সংযোগ রক্ষা করা সহজ বলে মনে করতে পারে যা বাস্তব জীবনের সম্পর্কের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

জাপানের যুব সমাজের মধ্যে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে অনীহার এই প্রবণতার প্রভাব বহুমুখী। একদিকে, এটি যেমন বিবাহের হার হ্রাস করছে  এবং জনসংখ্যা সঙ্কুচিত করছে অন্যদিকে এটি জাপানের অর্থনীতি এবং সামাজিক কাঠামোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সৃষ্টি করছে।এই ঘটনার দ্বারা সৃষ্ট সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলিকে স্বীকৃতি দিয়ে, জাপান (Japan )সরকার সমস্যাটি মোকাবেলার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। ম্যাচমেকিং ইভেন্ট, সম্পর্ক কাউন্সেলিং পরিষেবা এবং কর্ম-জীবনের ভারসাম্যের প্রচার করার মতো উদ্যোগগুলি ব্যক্তিদের রোমান্টিক সম্পর্ক অনুসরণ করতে এবং সামাজিক চাপ কমাতে উৎসাহিত করার জন্য প্রয়োগ করা হচ্ছে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


NASA Carbon Emission: পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে

উত্তরাপথঃ কার্বন নির্গমন (NASA Carbon Emission) সম্পর্কে নাসার সর্বশেষ আবিষ্কার পৃথিবীর জন্য এক সতর্কতা সংকেত। মহাকাশ সংস্থার মতে, পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে, যার ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। NASA এর এই আবিষ্কারটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে দেখা যেতে পারে, সেইসাথে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেছে।নাসার সর্বশেষ গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে পৃথিবীর মহাসাগর এবং ভূমি-ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্র আগের চেয়ে কম কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে গত এক দশকে ভূমি এবং মহাসাগর দ্বারা শোষিত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৫% হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

PAN-Aadhar link: কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে নিষ্ক্রিয় করেছে

উত্তরাপথ : আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link)করার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ড নিষ্ক্রিয় করেছে৷ আপনি যদি এখনও প্যান কার্ডের সাথে আধার কার্ড লিঙ্ক না করে থাকেন, তাহলে আপনি সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপের আওতায় এসেছেন। আপনি যদি আপনার আধার কার্ডকে প্যানের সাথে লিঙ্ক করতে চান তবে আপনি জরিমানা দিয়ে এটি সক্রিয় করতে পারেন। কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে আধারের সাথে লিঙ্ক না করার কারণে নিষ্ক্রিয় করেছে। একটি আরটিআই-এর জবাবে, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস জানিয়েছে যে আধার কার্ডের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link) করার সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হয়েছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড লিঙ্ক করেননি তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশে ৭০ কোটি প্যান কার্ড বর্তমানে ভারতে প্যান কার্ডের সংখ্যা ৭০.২ কোটিতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৭.২৫ কোটি মানুষ আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক করেছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে

উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর  প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top