

উত্তরাপথঃ আজকের আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বে, একটি একক ছবি কিভাবে সুদূরপ্রসারী পরিণতি ডেকে আনতে পারে তা প্রত্যক্ষ করল সারাবিশ্ব। এটি স্পষ্ট হয়েছিল যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটি আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ সমুদ্র সৈকতের ছবি মালদ্বীপের বয়কটের #BoycottMaldives অনুঘটক হয়ে ওঠে ।
সম্প্রতি দক্ষিণ ভারতের কেরালার উপকূলের কাছাকাছি লাক্ষাদ্বীপে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার নিজের কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করেন। সেখানে তাকে সমুদ্রতটের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে ও সাগরে ডুব দিতে দেখা যাচ্ছে।এরপর সেই ছবিগুলোকে কেন্দ্র করেই বিতর্কের সূত্রপাত শুরু হয়।
মোদী তার পোস্টে মালদ্বীপের কথা উল্লেখ করেননি। তবে তার পোস্টে তিনি স্বল্প পরিচিত লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জের মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের প্রশংসা করেছেন।মোদীর এই পোস্ট দেখে অনেকে ধরে নেন, প্রকারান্তরে তিনি ভারতের নাগরিকদের মালদ্বীপে না গিয়ে লাক্ষাদ্বীপে ছুটি কাটাতে যেতে উদ্বুদ্ধ করছেন।
এরপর ছবিগুলো দেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে।এর মধ্যে মালদ্বীপের তিনজন মন্ত্রীও এই পোস্টের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।তারা মোদীকে ‘ভাঁড়’, ‘সন্ত্রাসী’ এবং ‘ইসরায়েলের হাতের পুতুল’ বলে মন্তব্য করেছেন।তাদের এসব মন্তব্যের জেরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মালদ্বীপ বর্জনের ডাক দেয় ভারতীয়রা এবং দ্রুত #BoycottMaldives এক ব্যাপক অনলাইন আন্দোলনের দিকে পরিচালিত হয়।


পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে মালদ্বীপ সরকার তাদের মন্ত্রীদের এসব ‘অসম্মানজনক’ মন্তব্য থেকে দ্রুত নিজেদের আলাদা করে নেয় এবং অসম্মানজনক মন্তব্য করার জেরে সেখানকার যুব কর্মসংস্থান, তথ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের তিনজন মন্ত্রীকে বরখাস্ত করা হয়। এক বিবৃতিতে মালদ্বীপ সরকার জানায় তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় করা ‘অসম্মানজনক’ মন্তব্যের কথা জেনেছে। এগুলো তাদের ‘ব্যক্তিগত অভিমত’ এবং কোনোভাবেই মালদ্বীপ সরকারের সঙ্গে এর যোগসূত্র নেই।
অন্যদিকে, ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটেছে যখন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে চীনে গেছেন। গত অক্টোবরে নির্বাচনে তার জয়লাভের পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটি তার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর।মুইজ্জু তার চীনপন্থী অবস্থানের জন্য পরিচিত। তিনি তার পূর্ববসূরীদের প্রণীত ‘সবার আগে ভারত’ নীতির অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নির্বাচনের আগে।
তবে মুইজ্জু বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে আগ্রহী হলেও ভারত মহাসাগরের ক্ষুদ্র এই দ্বীপরাষ্ট্রের তার নিকটতম প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার সামর্থ্য নেই,কারন মালদ্বীপ পর্যটনের উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল এবং এর আয়ের একটি বড় অংশ ভারত থেকে আসে।মালদ্বীপের পর্যটন ওয়েবসাইট অনুসারে, গত বছর মালদ্বীপে ভ্রমণকারী সবচেয়ে বেশি পর্যটক ছিল ভারতীয়।২০২৩ সালে ২ লাখ ৯ হাজারেরও বেশি ভারতীয় পর্যটক মালদ্বীপে বেড়াতে গেছে, যা দেশটির পর্যটন আয়ের ১১ শতাংশ এনেছে।
সামাজিক মাধ্যমে #BoycottMaldives আন্দোলন শুরু হওয়ার সাথে সাথে এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান ভারতীয়রা। বলিউডের তারকা থেকে শুরু করে ক্রিকেট খেলোয়াড় পর্যন্ত অনেকেই ছুটি কাটানোর জন্য মালদ্বীপের পরিবর্তে ভারতের নিজস্ব গন্তব্যগুলোয় যাওয়ার আহ্বান জানান।এরপর ভারতীয়দের মধ্যে অনেকেই মালদ্বীপের মন্ত্রীদের এসব মন্তব্যের স্ক্রিনশট নিয়ে মালদ্বীপকে বর্জনের আহ্বান জানাতে থাকেন ‘এক্স’ মাধ্যমে।এরপর ‘চালো লাক্ষাদ্বীপ’ #Lakshadweep এই হ্যাশট্যাগটিও জনপ্রিয়তা পেতে থাকে।
এক বিবৃতিতে ভারতের পর্যটন ওয়েবসাইট ইজিমাইট্রিপ জানিয়েছে, তারা মালদ্বীপের ফ্লাইটের বুকিং নিচ্ছে না।ইজিমাইট্রিপের সিইও ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা নিশান্ত পিট্টি এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, ”আমাদের জাতির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে ইজিমাইট্রিপ মালদ্বীপের সব ফ্লাইট বুকিং স্থগিত করেছে।”
অন্যদিকে, ভারতের বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ‘দ্য কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স’ মালদ্বীপের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছে।সংগঠনটির সেক্রেটারি-জেনারেল প্রবীণ খান্ডেলওয়াল বলেছেন, ”মালদ্বীপ যতক্ষণ না ক্ষমা চাচ্ছে বা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ভারতের ব্যবসায়ীরা তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের ব্যবসা করবে না।”
x-এ দেওয়া এক পোস্টে মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুসা জমির মন্ত্রীদের মন্তব্যকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছেন।তিনি আরও বলেছেন, মালদ্বীপ তার ‘অংশীদারদের সঙ্গে একটি ইতিবাচক ও গঠনমূলক সংলাপ করতে’ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।মালদ্বীপে ভারতের হাইকমিশন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এ ঘটনার ‘কড়া ভাষায়’ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।এখন দেখার মালদ্বীপের বর্তমান সরকার ভারত ও চীন উভয়ের সঙ্গেই তার সম্পর্কের ভারসাম্য কিভাবে বজায় রেখে চলে।
আরও পড়ুন
রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন
উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক
উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক। প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন। ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন
Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ
উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন
Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন
উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন