২০২৪ কি গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় বছর হতে চলেছে ?

উত্তরাপথঃ ২০২৪ কি গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় বছর হতে চলেছে ?এটি মানব ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হতে চলেছে। এই বছর চার বিলিয়নেরও বেশি মানুষ ৪০টিরও বেশি দেশে নির্বাচনে অংশ নেবে যা বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি । যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, রাশিয়া, পাকিস্তান, তাইওয়ান, মেক্সিকো এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে (বাংলাদেশে সদ্য শেষ হয়েছে ২০২৪ এর নির্বাচন)। নির্বাচনের এই ব্যস্ত ক্যালেন্ডারে ইউরোপীয় ইউনিয়নও নির্বাচনে অংশ নেবে।

আধুনিক বিশ্বে জনগণকে শাসন করার জন্য প্রভাবশালী সাংগঠনিক নীতি হিসাবে গণতন্ত্রের  কথা বলা হলেও ভালো করে বিবেচনা করলে দেখা যাবে গণতন্ত্র অনেক ক্ষেত্রেই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের জন্য ভারতীয় রাজনীতিতে একটি শব্দ বার বার উঠে আসছে তা হল ‘হিন্দুত্ব’। এই একটি শব্দ যাকে প্রায় জাতীয়তাবাদের সমর্থক শব্দ হিসাবে প্রচার করা হচ্ছে। হিন্দুত্ব, একটি আদর্শ হিসাবে, ২০ শতকের গোড়ার দিকে আবির্ভূত হয় এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) এবং এর রাজনৈতিক শাখা ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও  শিবসেনার  মতো সংগঠনগুলির প্রচেষ্টার মাধ্যমে ‘হিন্দুত্ব’ ভারতীয় রাজনীতিতে প্রধান্য লাভ করে।

বিগত ২০১৪ ও ২০১৯ সালে ভারতে নির্বাচনী ফলাফল গঠনে ‘হিন্দুত্ব’ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।ভারতের সিংহভাগ বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দল নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপির নির্বাচনী সাফল্যের জন্য হিন্দুত্বকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন।তাই তারাও অন্তত আংশিকভাবে হলেও, হিন্দুত্ব নীতির ভিত্তিতে জন সমর্থন জোগাড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এই প্রচেষ্টার অঙ্গ হিসেবে গত ২২ জানুয়ারি যখন নরেন্দ্র মোদীকে অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধনে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেল সেই একই দিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কলকাতায় কালিঘাট মন্দিরে পূজা দিয়ে “সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সমাবেশ”নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেল।একইভাবে, উদ্ধব ঠাকরে এবং তার দলের নেতারা ২২ জানুয়ারী নাসিকের কালারাম মন্দিরে পূজা দেন এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, তার ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার মাঝেই আসামের একটি মন্দিরে পূজা দিতে যান। AAP আহ্বায়ক এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জাতীয় রাজধানীতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।

ভারতীয় রাজনীতিতে বর্তমানে হিন্দুত্ব একটি স্থায়ী বিষয় হিসাবে উঠে আসার পিছনে মূল কারণ হল ভারতের সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগণ  হিন্দু।দেশে বিজেপির সাংগঠনিক শক্তি এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কার্যকর ব্যবহার হিন্দুত্বের বর্ণনাকে ব্যাপক ভাবে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে গেছে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে হিন্দুত্বকে একটি উল্লেখযোগ্য ফ্যাক্টর হিসাবে মনে করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি ধারাবাহিকভাবে হিন্দুত্বের নীতির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছে।

তবে এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে হিন্দুত্বের প্রভাব সারা দেশে সমান নয়।দেশের তথাকথিত হিন্দি বলয়ে ‘হিন্দুত্ব’ ইস্যুটি  শক্তিশালী সমর্থন লাভ করলেও, এটি অন্য অংশে প্রতিরোধ এবং সংশয়ের সম্মুখীন । যদিও বর্তমানে বিজেপি বিরোধী অনেক দল, বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকে মোকাবেলা করতে নিজেরাও নরম হিন্দুত্বের লাইন গ্রহণ করছেন একটা বড় অংশের ভোটারদের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা তুলে ধরতে।

ভারতের রাজনীতিতে হিন্দুত্বের অব্যাহত প্রভাব দেশের ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামো এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করে। সমালোচকরা যুক্তি দেখান যে উন্নয়নের রাজনীতি থেকে দূরে সরে হিন্দুত্বের উপর জোর দেওয়া মানে ধর্মীয় মেরুকরণের ভিত্তিতে একটি সুরক্ষিত ভোট ব্যাঙ্ক  তৈরি করা । কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলি দেশের চলতে থাকা প্রধান সমস্যা যেমন বেকারত্ব, আর্থিক মন্দা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সহ একাধিক বিষয় নিয়ে একেবারে নির্লিপ্ত কারণ কোনও রাজনৈতিক দলই তা সে কেন্দ্রেরই হউক বা রাজ্যের তারা কেউই এই সমস্যাগুলির সমাধান করতে পারেনি। তাই ২০২৪ এর নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ভারতীয় গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ গঠনে হিন্দুত্বের ভূমিকা ততই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

Fructose: নতুন গবেষণায় ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার কারণ বলা হয়েছে

উত্তরাপথঃ একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জোরালো প্রমাণ দেওয়া হয়েছে যে ফ্রুক্টোজ (Fructose), সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয়গুলিতে থাকা এক ধরনের চিনি, যা স্থূলতার প্রাথমিক চালক। বছরের পর বছর ধরে, পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা , পাশ্চাত্য খাদ্যে, স্থূলতার মূল কারণ নিয়ে বিতর্ক করেছেন, কেউ কেউ অত্যধিক ক্যালোরি গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, অন্যরা কার্বোহাইড্রেট বা চর্বি জাতীয় খাবারকে দায়ী করেছেন। Obesity জার্নালে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার প্রকৃত চালক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।The University of Colorado Anschutz Medical Campus এর Dr. Richard Johnson এবং তার দলের মতে, ফ্রুক্টোজ হল একটি সাধারণ চিনি যা ফল এবং মধুর প্রাথমিক পুষ্টি। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে  বিতর্কে এ আর রহমান

উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top