জলবায়ু পরিবর্তন কি লাদাখের নির্বাচনী ইতিহাসের টার্নিং পয়েন্ট হতে চলেছে?

উত্তরাপথঃ জলবায়ু পরিবর্তন কি লাদাখের ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন কি লাদাখের নির্বাচনী ইতিহাসে একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে চলেছে? প্রত্যন্ত শীতল একটি পাহাড়ী উপত্যাকা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের (UT) মর্যাদা পাওয়ার পর প্রথমবারের মতো সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিতে চলেছে যা আগামী দিনে লাদাখের রাজনৈতিক পটভূমি নিশ্চিত করবে। লাদাখে ১,৮২,৫৭১ -এরও বেশি (জানুয়ারি ১,২০২৪ পর্যন্ত ডেটা) নাগরিক তাদের ভোট দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। লাদাখবাসীর কাছে এই নির্বাচন কেবল তাদের প্রতিনিধি বাছাই এর জন্য নয় বরং এই দুর্গম অথচ কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমির ভাগ্য নির্ধারণের জন্য।

এই নির্বাচনে লাদাখিরা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের স্বীকৃতি পাওয়ার পর তাদের ভঙ্গুর বাস্তুতন্ত্রের কথা মাথায় রেখে তাদের স্বদেশের জন্য সুরক্ষা দাবি করছে। বর্তমানে লাদাখের লোকেরা তাদের পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠেছে বিশেষ করে বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদ সোনম ওয়াংচুকের অনশন চালিয়ে যাওয়ার কারণে তারা মনে করে যে UT মর্যাদা মানে লাদাখ সরাসরি নয়াদিল্লি থেকে শাসিত হবে।এখন দেখার পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন লাদাখের ভোটিং প্যাটার্নকে কতটা প্রভাবিত করে।

সোনম ওয়াংচুকের উপবাস এই বিষয়গুলির প্রতি নতুন করে মনোযোগের জন্ম দিয়েছে।আগে লাদাখের রাজনৈতিক দলগুলো সবুজ ইস্যুতে খুব কমই নজর দিত। কিন্তু এবার, বিজেপি এবং কংগ্রেসের জাতীয় ইশতেহারে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোঝানোর জন্য ১-২ পৃষ্ঠা উৎসর্গ করেছে। ভোটাররা ক্রমবর্ধমান পরিবেশগত সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং এমন রাজনৈতিক নেতাদের খুঁজছেন যারা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবেন।

বিগত ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে লাদাখে, চারজন প্রার্থী ছিলেন – একজন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি), একজন কংগ্রেসের এবং দুইজন স্বতন্ত্র হিসেবে কার্গিল জেলা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। বিজেপির জামিয়াং সেরিং নামগ্যাল সাজ্জাদ হুসেনকে ১০,৯৩০ ভোটে পরাজিত করে সেই সময় নির্বাচন জিতেছিলেন।কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরিস্থিতি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। পাঁচ বছর আগে, লাদাখ একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ছিল না।বর্তমানে মানুষ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের দ্বারা অনেক বেশী জাগ্রত হয়েছে। তারা ভোট দেওয়ার আগে লাদাখের সুরক্ষা নিয়ে ভাববে বলে মনে করেন সেখানকার বুদ্ধিজীবিদের একটা অংশ।  

তাদের মতে, লাদাখ হিমবাহের জলের উপর নির্ভরশীল।পরিবেশ উপযোগী না হলে মানুষের অস্তিত্ব থাকতে পারে না। উন্নয়ন ঘটতে থাকবে সেইসাথে পরিবেশ সংরক্ষণও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ।তাদের মতে,  ইতিমধ্যেই আমরা লাদাখ জুড়ে প্রচুর পরিমাণে ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলনের ঘটনা প্রত্যক্ষ করছি কারণ অনেক হোটেল এবং গেস্ট হাউস সাবমারসিবল পাম্প বসিয়েছে। লাদাখে ভূগর্ভস্থ জল এখন কমছে।

লাদাখের সাংবাদিক, সেরিং ডলকারের মতে, ওয়াংচুকের উপবাস শুরু হওয়ার পর থেকে লাদাখিদের মধ্যে পরিবেশ সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সচেতনতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা আসন্ন নির্বাচনে পরিবেশকে একটি অন্যতম চাপের ইস্যুতে পরিণত করেছে। ভোটদানে এই প্রভাব দেখা বাকি আছে, তবে বিজ্ঞানী, সাংবাদিক এবং অন্যান্যদের মধ্যে একটি ক্রমবর্ধমান ঐকমত্য রয়েছে যে এই অঞ্চলে পরিবেশগত সংকট মোকাবেলার জন্য জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন।

স্নো লেপার্ড কনজারভেন্সির বিজ্ঞানী সেওয়াং নামগেইল বলেন, “যখন আমরা জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ নিয়ে কথা বলি, তখন লাদাখে মানুষের মধ্যে তেমন সচেতনতা নেই। ২০১০সালের আকস্মিক বন্যা ছিল লাদাখের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম প্রধান বিপর্যয়। কিন্তু মানুষ সুবিধামত এ কথা ভুলে যায়। এটি মোকাবেলার জন্য আমাদের আরও আলোচনা এবং প্রচেষ্টা দরকার। এছাড়াও, এই ধরনের বিপর্যয় পুনরায় ঘটলে আমরা কি প্রস্তুত?”

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে

উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর  প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন

উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি  তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন

World’s most polluted cities: নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়

উত্তরাপথঃ দিওয়ালি উদযাপনের একদিন পর জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় উঠে এসেছে।সোমবার, অর্থাৎ দীপাবলির পরের দিন এই শহরগুলির বায়ুর গুণমান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় খারাপ হয়েছে।বায়ুর গুনমান খারাপ হওয়ার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত আতশবাজি জ্বালানোকে দায়ী করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় যথারীতি প্রথম স্থান দখল করেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দীপাবলির পরের দিন এটির AQI (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) পরিসংখ্যান ছিল ৪০৭। নভেম্বরের শুরু থেকে, দিল্লিতে AQI পরিসংখ্যান খারাপ হয়েছে।  সুইস গ্রুপ আইকিউএয়ার শহরের বাতাসকে "বিপজ্জনক" বিভাগে রেখেছে।ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়(World’s most polluted cities), ১৫৭ এর AQI সহ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। কলকাতা ১৫৪ এর AQI সহ সপ্তম স্থানে রয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top