

সমীক্ষা বিশ্লেষণে গার্গী আগরওয়ালা মাহাতোঃ নির্বাচনের ফলাফলের ভবিষ্যদ্বাণী করা প্রাক-নির্বাচন সমীক্ষার প্রধান কাজ। এটি ভোটারদের ভোট দেওয়ার উদ্দেশ্য সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য প্রদান করতে পারে, যা নির্বাচনের ফলাফলের পূর্বাভাস দিতে সাহায্য করতে পারে অনেক ক্ষেত্রে।কিন্তু এই প্রসঙ্গে একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ তাহল আজ পর্যন্ত কোনও প্রাক-নির্বাচন সমীক্ষা ১০০ শতাংশ সঠিক প্রমানিত হয়নি। সম্প্রতি সামনে এসেছে সিএসডিএস-লোকনীতির(CSDS-Lokniti)প্রাক-নির্বাচন সমীক্ষা। এই সমীক্ষা অনুসারে, এবারের নির্বাচনে ভোটারদের কাছে সবচেয়ে বড় ইস্যূ হতে চলেছে বেকারত্ব। যখন সমীক্ষা করা হয় সেই সময় লোকদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা কী, ২৭ শতাংশ মানুষ বলেছেন বেকারত্ব তাদের কাছে সবচেয়ে বড় সমস্যা। প্রসঙ্গত এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্য জনক হলেও সত্যি যে আজ পর্যন্ত আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে গরীব বা বেকারত্ব ইস্যুই প্রধান নির্বাচনের ইস্যূ হলেও আজ পর্যন্ত সেই সমস্যার সমাধান হয়নি। ১৯৭১ সালে ইন্দিরা গান্ধী স্লোগান দিয়েছিলেন ‘গরিবী হঠাও’। সেই থেকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে এটি একটি প্রধান ইস্যূ হিসেবে উঠে এলেও বাস্তবে এই সমস্যার সমাধান হয়নি।স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের দেশে প্রতিটি রাজনৈতিক দলই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে দেশ শাসন ক্রেছেন,কিন্তু এই সমস্যার সমাধান হয়নি। নির্বাচন আসে নির্বাচন যায় আমাদের দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের আবস্থা নিয়ে যা চলে তা হল রাজনীতি। কোনও দলই আন্তরিক নয় প্রকৃত অর্থে সমস্যার সমাধানে। তাই আশা করা যায় আগামী কয়েক দশক এটি নির্বাচনের প্রধান ইস্যূ হয়েই থাকবে।
বেকারত্বের পর মুদ্রাস্ফীতি দ্বিতীয় বৃহত্তম সমস্যা হিসেবে সমীক্ষায় উঠে এসেছে। সমীক্ষা অনুসারে দেশের ২৩% মানুষ মনে করছে মুদ্রাস্ফীতি অর্থাৎ মূল্যবৃদ্ধি এই নির্বাচনে দ্বিতীয় বৃহত্তম ইস্যূ হতে চলেছে।এটির অবস্থাও সেই একই, যার কোনও সমাধান হয়নি। শুধুমাত্র নির্বাচনী রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ রয়েগেছে। এরপর ১৩% উন্নয়নকে, ৮% মানুষ দুর্নীতিকে, ৮% মানুষ অযোধ্যায় রাম মন্দিরকে, ২% হিন্দুত্বকে, ২% ভারতের আন্তর্জাতিক চিত্রকে সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসাবে সমীক্ষায় উল্লেখ করেছেন।
সিএসডিএস-লোকনিতি (CSDS-Lokniti) দ্য হিন্দুর সহযোগিতায় সমীক্ষাটি পরিচালনা করেছে। এই প্রাক-নির্বাচন সমীক্ষায় প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বা প্রায় ৬২% লোক বলেছেন যে বর্তমানে চাকরি পাওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। শহরে এই সংখ্যা ৬৫% এবং গ্রামে ৬২%। অন্যদিকে ৫৯% মহিলা এবং ৬৫% পুরুষ এই ব্যাপারে সহমত পোষণ করেছেন। সমীক্ষায় মাত্র ১২% মানুষ বলেছেন যে চাকরি পাওয়া বর্তমানে সহজ হয়ে গেছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ইন্ডিয়া এমপ্লয়মেন্ট রিপোর্ট-২০২৪ দেখায় যে ২০২২ সালে মোট বেকার জনসংখ্যার মধ্যে বেকার যুবকদের অংশ ছিল ৮২.৯%। জাতীয় নমুনা সমীক্ষা অফিসের (এনএসএসও) প্রতিবেদন, যা ২০২৩ সালে জুনে প্রকাশিত হয়েছিল, দাবি করা হয়েছিল যে বেকারত্বের হার যা ২০১১-১২ সালে ২.২ শতাংশ ছিল, তা বেড়ে বর্তমানে ৬.১ শতাংশের রেকর্ড স্তরে পৌঁছেছে।ইনস্টিটিউট অফ হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট এবং ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন দ্বারা প্রস্তুত করা ইন্ডিয়া এমপ্লয়মেন্ট রিপোর্ট ২০২৪ বলেছে, ‘ভারতে বেকারত্ব প্রাথমিকভাবে তরুণদের মধ্যে একটি সমস্যা , বিশেষ করে যারা মাধ্যমিক স্তর বা তার উপরে শিক্ষা নিয়েছিল।
২০২৩ সালে আমাদের সাক্ষরতার হার যেখানে ৭৭.৭০ শতাংশ ছিল সেই একই বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ২৫ বছরের কম বয়সী শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে বেকারত্বের (Educated unemployment) হার ৪২ শতাংশের বেশি ছিল। অর্থাৎ বেকার যুবকদের সম্পর্কে কেউ বলতে পারবে না যে তারা লেখাপড়া না করলে চাকরি পাবে কোথা থেকে।এক কথায় এ ধরনের শিক্ষিত যুবকের হার বাড়ছে।
এই CSDS সমীক্ষার ফলাফলগুলি ইঙ্গিত করে যে অর্থনৈতিক সংকট ভোটারদের জন্য একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। সুরক্ষিত কর্মসংস্থানের সুযোগগুলি না পাবার ভয়, মূল্যস্ফীতির বাস্তবতা, জীবন ও জীবিকার উপর এর প্রভাব এবং গ্রামীণ দুর্দশার বাস্তবতা এই নির্বাচনের বড় ইস্যূ হতে চলেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে কম অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল লোকেরা এই সংকট তীব্রভাবে অনুভব করছে। এর অর্থ এই নয় যে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিরা অর্থনৈতিক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন না, বরং বলা যেতে পারে তাদের কাছে এই সমস্যা কাটিয়ে উঠার কৌশল এবং সরঞ্জাম উপলব্ধ রয়েছে।
প্রসঙ্গতও উল্লেখ্য যে ২০১৯ CSDS-লোকনীতি প্রাক-নির্বাচন সমীক্ষা অনুসারে, সেই সময় প্রায় ১৬ শতাংশ মানুষ বেকারত্ব এবং মুদ্রাস্ফীতি এই দুটি বিষয়কে নির্বাচনের মূল বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। আর ২০২৪ প্রাক নির্বাচনী সমীক্ষায় সেই সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে। এই সমীক্ষাটিতে ১৯টি রাজ্যের প্রায় ১০ হাজার মানুষের মতামত নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?
উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন
উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন
Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক
উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক। প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন। ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন