Diabetes রাখুন খুব সহজেই নিয়ন্ত্রনে

উত্তরাপথ

Diabetes রোগীর রক্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে । ছবি- সংগৃহীত

ডায়াবেটিসের (Diabetes) সমস্যা সারা বিশ্বের লোকেদের এক প্রধান  সমস্যা । ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ এর একটি রিপোর্ট অনুসারে ২০১৯ সালের ভারতে ৭৭ মিলিয়ন ব্যক্তির ডায়াবেটিস ছিল, যা ২০৪৫ সালের মধ্যে ১৩৪ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা এই ব্যক্তিদের প্রায় ৫৭% জানতেননা তাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে ।

একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা ডায়াবেটিসে (Diabetes )আক্রান্ত ব্যক্তিদের গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন সেই সাথে সুষম খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত শারীরচর্চা  এবং নিজের শারীরিক অবস্থার উপর নজর দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।আজ আমরা ডায়াবেটিস (Diabetes) রোগীদের একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণের জন্য কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।

১. সুষম খাদ্য:

ক কার্বোহাইড্রেট ম্যানেজমেন্ট: কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের উপর নজর রাখুন এবং নিয়ন্ত্রণ করুন, কারণ এগুলো রক্তে শর্করার মাত্রার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। মিহি শর্করা এবং চিনিযুক্ত খাবার সীমিত করুণ ।সেই সাথে গোটা শস্য, লেবু এবং শাকসবজির মতো জটিল কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার গুলিতে মনোযোগ দিন।

খ সঠিক মাত্রা: অতিরিক্ত খাওয়া প্রবণতা এড়াতে আপনার ঠিক কতটা খাদ্য দরকার সে সম্পর্কে সচেতন হন। আপনার খাদ্যতালিকাগত চাহিদা অনুসারে একটি ব্যক্তিগতকৃত খাবার পরিকল্পনা তৈরি করতে একজন বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন।

গ. স্বাস্থ্যকর চর্বি: বাদাম, বীজ, অ্যাভোকাডো এবং জলপাই তেলের মতো স্বাস্থ্যকর চর্বি বেছে নিন। স্যাচুরেটেড এবং ট্রান্স ফ্যাট সীমিত করুন, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

ঘ,প্রোটিনের উৎস: আপনার খাদ্যতালিকায় চর্বিহীন প্রোটিনের উৎস যেমন মুরগি, মাছ, টফু এবং লেবুস অন্তর্ভুক্ত করুন। প্রোটিন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং তৃপ্তি বাড়ায়।

২. নিয়মিত শারীরচর্চা :

ক একজন পেশাদার  বিশেষজ্ঞকে পরামর্শ করুন: যেকোনো ব্যায়াম রুটিন শুরু করার আগে, আপনার শারীরিক অবস্থার মূল্যায়ন করতে এবং কার্যকলাপের উপযুক্ত স্তর নির্ধারণ করতে আপনার বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন।

খ. বায়বীয় ব্যায়াম: দ্রুত হাঁটা, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা বা নাচের মতো শারীরিক ব্যায়ামে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিটের জন্য করুন । এই ক্রিয়াকলাপগুলি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

গ. শক্তি প্রশিক্ষণ: পেশী ভর তৈরি করতে, বিপাক বাড়াতে এবং ডায়াবেটিস উন্নত করতে ওজন ব্যবহার করে শক্তি প্রশিক্ষণ মূলক ব্যায়াম অন্তর্ভুক্ত করুন।

ঘ, সারাদিন সক্রিয় থাকুন: দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা বা বসে থাকা আচরণ এড়িয়ে চলুন এবং সারা দিন শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করুন।

৩. ব্লাড সুগার মনিটরিং:

ক নিয়মিত পরীক্ষা: আপনার বিশেষজ্ঞ Diabetes চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা নিরীক্ষণ করুন। এটি বুঝতে সাহায্য করবে কিভাবে বিভিন্ন খাবার, শারীরিক কার্যকলাপ এবং ওষুধ আপনার রক্তে শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করছে।

খ. রেকর্ড রাখা: আপনার রক্তে শর্করার রিডিং, খাদ্য গ্রহণ, শারীরিক কার্যকলাপ এবং যেকোনো উল্লেখযোগ্য পর্যবেক্ষণের রেকর্ড রাখুন। এই তথ্য আপনার চিকিৎসকে ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় প্রয়োজনীয় সমন্বয় করতে সহায়তা করতে পারে।

৪. ঔষধ ব্যবস্থাপনা:

ক নির্দেশিত ওষুধগুলি অনুসরণ করুন: আপনার চিকিৎসকের দ্বারা নির্ধারিত ডায়াবেটিসের ওষুধ সেবন করুন। তাদের পরামর্শ ছাড়া ডোজ এড়িয়ে যাবেন না বা পরিবর্তন করবেন না।

খ. ইনসুলিন ব্যবস্থাপনা: আপনার যদি ইনসুলিনের প্রয়োজন হয়, আপনার চিকিৎসকের দ্বারা প্রদত্ত প্রস্তাবিত ইনজেকশন কৌশল, স্টোরেজ নির্দেশিকা এবং সময় নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন।

৫. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট:

ক স্ট্রেস কমানোর কৌশল: স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের কৌশলগুলি অনুশীলন করুন যেমন গভীর শ্বাসের ব্যায়াম, ধ্যান,বা যোগব্যায়াম । স্ট্রেস বা উচ্চ চাপ রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করতে পারে।

খ. পর্যাপ্ত ঘুম: সামগ্রিক  ভাবে সুস্থ থাকতে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে প্রতি রাতে ৭-৮ ঘন্টা  ঘুমনোর চেষ্টা করুণ।

নিয়মিত মেডিকেল চেক-আপ:

ক নিয়মিত ডাক্তারের ভিজিট: আপনার ডায়াবেটিস (Diabetes)অবস্থা নিরীক্ষণ করতে, ওষুধের পর্যালোচনা করতে এবং যেকোনো উদ্বেগ বা জটিলতার সমাধান করতে আপনি চিকিৎসকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করুন।

খ. চোখ এবং পা পরীক্ষা: ডায়াবেটিস(Diabetes )-সম্পর্কিত জটিলতা সনাক্ত করতে এবং প্রতিরোধ করতে নিয়মিত চোখ পরীক্ষা এবং পায়ের চেক-আপের ব্যবস্থা করুন।

এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে ডায়াবেটিস(Diabetes) চিকিৎসা সবসময় আপনার ব্যক্তিগত প্রয়োজন অনুসারে হওয়া উচিত। আপনার নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তা অনুসারে একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে ডাক্তার, ডায়েটিশিয়ান এবং ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন। সেই সাথে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ করে এবং  ডায়াবেটিসের প্রভাব কমিয়ে পরিপূর্ণ জীবনযাপন করুন।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন

উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি  তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন

Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি

উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা  ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন

Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে

উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি।  ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে।  আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি।  এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন।  সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে।  এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ

উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top