রুবি আহমেদঃ বাংলাদেশেও এবার বিনিয়োগ এবং ব্যবসা করতে চাইছে এলন মাস্কের স্যাটেলাইট কোম্পানি। এলন মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্সের আরেকটি সংস্থা স্টার লিংক (Starlink)। এই স্যাটেলাইট কোম্পানি বাংলাদেশে ইন্টারনেট সরবরাহ করবে। এই লক্ষ্য নিয়েই বাংলাদেশে এসেছেন স্পেসএক্সের দুই প্রতিনিধি। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার স্টারলিংককে সেবা প্রদানের লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদের এক বিবৃতিতে। তাই এবার স্টারলিংকের রাউটার কেনার জন্য আগাম অর্ডার করা যাবে বাংলাদেশ থেকেও। সম্প্রতি স্টারলিংকের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ থেকে ডিভাইসের অর্ডার নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। যে কেউ ৯৯ ডলার ডিপোজিট করে অর্ডার করতে পারবে।
গত বছর প্রথম স্টারলিংক(Starlink) বাংলাদেশে কার্যক্রম চালুর প্রক্রিয়া শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় একাধিকবার আলোচনা ও বৈঠক হয়েছে সরকারের কর্মকর্তা ও স্টারলিংকের মধ্যে। চলতি বছরের জুনে স্টারলিংকের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই সূত্র ধরেই সরকারের এ সিদ্ধান্ত এসেছে। ৬ ডিসেম্বর বিটিআরসির সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ২০১৯ সালে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে পাঠায় স্টারলিংক। বর্তমানে পৃথিবীর নিম্নকক্ষপথে (ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫৫০ কিলোমিটার ওপরে) প্রতিষ্ঠানটির প্রায় সাড়ে ৫ হাজার স্যাটেলাইট কার্যকর আছে। এসব স্যাটেলাইট পৃথিবীপৃষ্ঠের বিভিন্ন ডেটা সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত। স্টারলিংকের স্যাটেলাইটগুলো এসব তথ্য তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ আকারে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। একই সঙ্গে ভূপৃষ্ঠে ছুড়ে দেয় তরঙ্গ। ফলে স্টারলিংক ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য ব্যবহারকারীর কাছেও তরঙ্গ শনাক্তের যন্ত্র থাকতে হয়। এই যন্ত্র বা অ্যান্টেনা প্রতিষ্ঠানটিই সরবরাহ করে। অনেকটা স্যাটেলাইট টেলিভিশনের মতো একই পদ্ধতিতে কাজ করে এই ইন্টারনেট সেবা। পৃথিবীর কক্ষপথজুড়ে প্রচুর কৃত্রিম উপগ্রহ থাকায় যেকোনো জায়গায় ইন্টারনেট সিগন্যাল পাঠানো সম্ভব। দুর্গম মরু, পাহাড় বা সমুদ্রের মধ্যে, যেখানে সরাসরি তার বা ভূস্থাপনার মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া যায় না, সেখানেও কাজ করবে স্টারলিংক (Starlink )ইন্টারনেট।
কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার প্রচেষ্টা অবশ্য এটিই প্রথম নয়। তবে স্টারলিংকের মতো এত ব্যবহারবান্ধব নয় সেগুলো। স্টারলিংকের পরিষেবা খরচ বাবদ বাংলাদেশের মানুষকে মাসে এখন কত টাকা দিতে হবে তা এখনও স্পষ্ট হয়,তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ ইন্টারনেট সেবার দাম অনেক বেশি হবে বলে করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর বেশির ভাগ স্থানে স্টারলিংকের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে মাসে ১২০ ডলার খরচ করতে হয়। বর্তমানে বাংলাদেশি টাকায় এই খরচ পড়বে ১৩ হাজারের মতো। ডলারের দাম বাড়া বা কমার সঙ্গে এই অঙ্ক পরিবর্তিত হবে। এ ছাড়া প্রথম মাসে অ্যান্টেনা ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ কেনার জন্য খরচ হয় প্রায় ৫৯৯ ডলার। অঙ্কটা ৬৫ হাজার টাকারও বেশি।
এদিক থেকে দেশের ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেটের দাম অনেক কম। গ্রামাঞ্চলে বর্তমানে রাউটার ও অপটিক্যাল নেটওয়ার্ক ইউনিটসহ প্রাথমিক সংযোগ নিতে ২ থেকে ৩ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। প্রতিমাসে ৫০০ টাকায় ৫ এমবিপিএস (প্রতি সেকেন্ডে ৫ মেগাবিট ডেটা আদান-প্রদানে সক্ষম) ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সেবা নেওয়া যায়। এ ছাড়া একমাস মেয়াদে মোবাইল ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে ৩০ জিবি ইন্টারনেটের জন্য জন্য ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পড়তে পারে।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের তথ্য অনুযায়ী, স্পেসএক্সের কর্মকর্তার পরিবেশনায় স্টারলিংক ইন্টারনেটের ডাউনলোড স্পিড পাওয়া গেছে প্রায় ৫০০ এমবিপিএস (সেকেন্ডে ৫০০ মেগাবিট ডেটা আদান-প্রদানে সক্ষম)। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগের পরীক্ষণে এ গতি প্রায় ১৫০ এমবিপিএস (সেকেন্ডে ১৫০ মেগাবিট ডেটা আদান-প্রদানে সক্ষম) পাওয়া গেছে। বর্তমানে ৬০টিরও বেশি দেশে ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে স্টারলিংক। তাদের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে তাদের গ্রাহক সংখ্যা ২০ লাখেরও বেশি। দেশে স্টারলিংকের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হলে দুর্গম অঞ্চলে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। পাশাপাশি বর্তমান ইন্টারনেট সেবা ব্যবসায় কিছুটা প্রতিযোগিতা তৈরি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে গ্রাহকদের জন্য তা কল্যাণকর হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন
Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক
উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক। প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন। ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন
রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন
উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে
উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি। ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে। আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি। এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে। এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন