

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ভারত অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে দুর্দান্ত অগ্রগতি করেছে, তার সত্বেও জনসংখ্যার একটি বড় অংশ এখনও দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে এবং নিজেদের নূন্যতম চাহিদা মেটাতে সংগ্রাম করছে। ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে আর্থিক বৈষম্যের ক্ষেত্র দিন দিন প্রসারিত হয়েছে, কারণ আর্থিক বৃদ্ধির সুবিধাগুলি দেশের সব নাগরিকদের মধ্যে সমানভাবে বিতরণ করা যায়নি।
আজ ভারতের সাধারণ মানুষের মুখোমুখি হওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলির মধ্যে একটি হল খাদ্যপণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি,যা সাধারণ মানুষের জীবনে এক দুঃসহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে ।বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন ওষুধ,রান্নার গ্যাস,পেট্রল,ডিজেল সহ বহু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিপূর্বে কোভিডের ভয়াবহ সংক্রমণের সময় দেশের অর্থনীতি মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বহু পরিবার তাদের আর্থিক সংস্থানের উপায় হরায়। সেই সাথে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য এবং পরিষেবার দাম বাড়তে থাকায়, অনেক পরিবারের পক্ষে তাদের মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিষগুলি ক্রয় করা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে।জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দৈনিক ভিত্তিতে পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে না।সরকার কর্তৃক প্রকাশিত ২০২২-২০২৩ সালের গৃহস্থালী ব্যয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ দিনে তিনবেলা খাবার পায় না। গ্রামে এবং শহরে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে এই পার্থক্য খুবই সামান্য। প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা নিয়মিত সকালের জলখাবার, দুপুরের খাবার ও রাতের খাবার খেতে পারছে না।অধিকাংশ ক্ষেত্রে অতিকষ্টে হিসেব করে দিন কাটছে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তের মানুষদের।
একথা সত্য-দেশের একটি শ্রেণীর মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, বেড়েছে মাথাপিছু আয়। তবে তাদের সংখ্যা মাত্র ৫ শতাংশ। বর্তমান দ্রব্যমূল্য দেশের অধিকাংশ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার অনেক বাইরে চলে গেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার কর্তৃক গৃহীত কোনো পদক্ষেপই তেমন কাজে আসছে না। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই দেশে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু দুঃখের বিষয় আন্তর্জাতিক বাজারে যখন জিনিসের দাম কমে, আমাদের দেশের বাজারের ওপর তার প্রভাব পড়ে না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঘটে এর উলটোটা। এভাবে চলতে থাকলে দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ কী হবে, তা সহজেই অনুমেয়। ক্রমাগত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে দেশের কোটি কোটি মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হবে। ধনী-দরিদ্রের আয় বৈষম্য আরও বৃদ্ধি পাবে, যা কোনোমতেই কাম্য নয়।
শুধু ধনী ব্যক্তিদের জোরে কোনো বাজারই টিকে থাকতে পারে না।ধনীদের আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে বিলাস দ্রব্যের বিক্রয় অবশ্যই বৃদ্ধি পায়, কিন্তু খুচরা বাজার, যা সাধারণ ভোক্তার শক্তির উপর ভিত্তি করে চলে, তাকে ক্রমাগত আর্থিক মন্দার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশের মোট সৃষ্ট সম্পদের প্রায় চল্লিশ শতাংশ চলে গেছে মাত্র এক শতাংশ মানুষের হাতে। দেশের সত্তর কোটি জনসংখ্যার মোট সম্পদের সমান অংশ রয়েছে একুশ জন ধনী ব্যক্তির কাছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থনীতিতে একক ভাবে আর্থিক ক্ষমতা কেন্দ্রীকরণের ফলে বাজারে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। কিন্তু সরকার এই অসঙ্গতি দূর করতে আন্তরিক বলে মনে হচ্ছে না। এটা আশ্চর্যজনক যে একদিকে আমাদের অর্থনীতিকে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে ,সেইসাথে দাবী করা হচ্ছে আমরা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হব এবং একটি উন্নত দেশের ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত হব। কিন্তু এর বিপরীতে আরেকটি চিত্র হলো, দেশের সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমির (CMIE) রিপোর্ট বলছে যে যুব বেকারত্ব বাড়ছে, মূলত গ্রামীণ বেকারত্বের কারণে। উদাহরণস্বরূপ, অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০২৩ ত্রৈমাসিকে ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে বেকারত্ব বেড়েছে ৪৪.৪৯%।
আবার ভারত সরকারের দেওয়া একটি সরকারি তথ্য অনুযায়ী, উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বেকার হওয়ার সম্ভাবনা তাদের তুলনায় বেশি যারা স্কুলে পড়াশোনা করেননি। উদাহরণস্বরূপ, স্নাতকদের মধ্যে বেকারত্বের হার হল ২৯.১%, যারা পড়তে বা লিখতে পারে না তাদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৩.৪%।
আশি কোটি মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য সরবরাহ করাকে সরকার নিজেই তার সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে তুলে ধরছে। অন্যদিকে আমাদের রাজ্য সরকার জনগণকে ৫০০-১০০০ টাকা মাসে পাইয়ে দেওয়াকে নিজেদের সবচেয়ে বড় মাস্টার স্ট্রোক বলে প্রচার করছে।এই অবস্থায় সমাজে শ্রেণী বৈষম্য দূর করার ব্যাপারে শাসক ও জনগণ কেউই খুব আন্তরিক বলে মনে হয় না।জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি না হলে এবং আয় বৈষম্য দূর না হলে সুষম অর্থনৈতিক বৃদ্ধির আশা করা কঠিন। এ জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বেতন-ভাতার ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে, যার অনুপস্থিতি দীর্ঘদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন
বেতন, মাসে ৩০,০০০ আর সম্পত্তির মালিকানা ৭ কোটির বেশী
উত্তরাপথ: এ এক দুর্নীতির অনন্য নজির যা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি কে লজ্জায় ফেলবে । দুর্নীতির এই অভিযোগটি উঠেছে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ হাউজিং কর্পোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী ইনচার্জ হেমা মীনার বিরুদ্ধে।মধ্যপ্রদেশের সরকারি কর্মকর্তা দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পর হেমা মীনা প্রচার মাধ্যমের নজরে আসে । এখন প্রশ্ন কে এই হেমা মীনা ? মধ্যপ্রদেশ পুলিশ হাউজিং কর্পোরেশনের চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োজিত সহকারী প্রকৌশলী ইনচার্জ যিনি মাসে ৩০,০০০ টাকা আয় করেন । দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে তার বাড়ি থেকে সাতটি বিলাসবহুল গাড়ি, ২০,০০০ বর্গফুট .....বিস্তারিত পড়ুন
পশ্চিমবঙ্গে 'দ্য কেরালা স্টোরি'সিনেমাটির ভাগ্য সুপ্রিম কোর্টের হাতে
উত্তরাপথ: 'দ্য কেরালা স্টোরি' সিনেমাটি পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ হওয়ায় সিনেমাটির সিনেমার নির্মাতারা বাংলার নিষেধাজ্ঞাকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। তাদের দাবী ছিল নিষেধাজ্ঞার ফলে প্রতিদিন তাদের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে । নির্মাতাদের আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট আজ 'দ্য কেরালা স্টোরি' সিনেমাটি পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ হওয়ার পিছনে যুক্তি জানতে চেয়েছে । প্রধান বিচারপতির একটি বেঞ্চ পর্যবেক্ষণ করেছে, যখন এটি কোনও সমস্যা ছাড়াই সারা দেশে চলছে।পশ্চিমবঙ্গের সিনেমাটি কেন নিষিদ্ধ করা উচিত? এটি একই রকম জনসংখ্যার সংমিশ্রণ রয়েছে এম .....বিস্তারিত পড়ুন
সময়
অনসূয়া পাঠক: একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের জেনারেল ম্যানেজার সবুজ বোস। রাজারহাট নিউটাউনের একটি বহুতল আবাসনে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সুখী জীবন তার। কাজের বাইরে উনার নেশা বলতে নামীদামী পুরানো মডেলের হাত ঘড়ি কালেকশন। এই বিষয়ে তাঁর সংগ্রহশালাটি রীতিমতো চমকে দেবার মতো। তিনি যে বিদেশী মডেলের রিস্ট ওয়াচটি সবচেয়ে বেশী ব্যাবহার করেন সেটা হঠাৎই একদিন খারাপ হয়ে যাওয়াতে পার্শ্ববর্তী করিম চাচার ঘড়ির দোকানে তিনি যান। এবং আশ্চর্যজনক ভাবে দোকানের শো কেসে তাঁর নজর আটকে যায় জার্মানি মডেলের একটি পুরানো ঘড়ির দিকে। এই .....বিস্তারিত পড়ুন
শালডিহা কলেজের ছাত্রীদের জন্য বিশেষ সার্টিফিকেট কোর্স
উত্তরাপথঃ বাঁকুড়া জেলার শালডিহা কলেজের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডঃ সমীর কুমার মণ্ডল এর উদ্যোগে এবং Mahindra Group - এর Mahindra Pride Classroom ও Naandi Foundation -এর যৌথ উদ্দগ্যে শুধু মাত্র ছাত্রীদের জন্য ৭ দিনের (৪০ ঘন্টা) একটি সার্টিফিকেট course -এর আয়োজন করা হয়েছিল। বিভিন্ন রকম স্কিল নিয়ে বিশদে শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল। যার মধ্যে হল communication skill, soft skill, life skill, presentaion skill ও interview skill ইত্যাদি। Mohindra Educator -এর ভূমিকাই আসেন সরোজ রাই। তিনি মনে করেন, এই জাতীয় প্রশিক্ষণ শালডিহার মতো প্রান্তিক কলেজের মেয়েরা খুবই উপকৃত হবে। কলেজ কর্তৃপক্ষ আশা করে ভবিষ্যতে মাহিন্দ্রা গ্রুপ এই কলেজে ক্যাম্পাসিং এর .....বিস্তারিত পড়ুন