বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন গৃহস্থালীর পরিষ্কারের পণ্য বিপজ্জনক রাসায়নিক নির্গত করে

উত্তরাপথঃ একটি স্বাস্থ্যকর ঘর থেকে জামাকাপড় ,বাসনপ্ত্র সমস্ত কিছু পরিস্কারের জন্য আমরা অনেকেই সুপারমার্কেটের তাকগুলিতে পাওয়া পরিচ্ছন্নতার পণ্যগুলির উপর নির্ভর করি। সাম্প্রতিক গবেষণায় এই দৈনন্দিন গৃহস্থালী পরিষ্কারের সাথে যুক্ত উপকরণগুলি থেকে সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে এই পণ্যগুলি বাতাসে শত শত বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ নির্গত করে, যা আমাদের সুস্থতার জন্য একটি বড় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে ।তাদের মতে গৃহস্থালি পরিষ্কারের পণ্যগুলিতে বিপজ্জনক VOCs রয়েছে, যা স্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি করে সেই সাথে এটি বায়ু দূষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এক্ষেত্রে  তারা সবুজ এবং গন্ধ-মুক্ত পণ্য নিরাপদ বিকল্প বলে মনে করছেন।

 এনভায়রনমেন্টাল ওয়ার্কিং গ্রুপের বিজ্ঞানীদের দ্বারা একটি সমীক্ষায় সাধারণ গৃহস্থালী পরিষ্কারের পণ্যগুলির থেকে আমাদের সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে চিন্তা জনক তথ্য উঠে এসেছে।গবেষণায় মাল্টিপারপাস এবং গ্লাস ক্লিনার, এয়ার ফ্রেশনার এবং আরও অনেক কিছু সহ ৩০টি পরিষ্কারের পণ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।  সমীক্ষায় দেখা গেছে যে এই দৈনন্দিন পণ্যগুলি শত শত বিপজ্জনক উদ্বায়ী জৈব যৌগ নির্গত করে, যা VOC নামে পরিচিত। গবেষণার ফলাফলগুলি ১২ সেপ্টেম্বর কেমোস্ফিয়ার জার্নালে প্রকাশিত হয়। দেয়। কিছু সাধারণ ভিওসি পরিষ্কারের পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে ফর্মালডিহাইড, বেনজিন এবং টলুইন। এই যৌগগুলির দীর্ঘায়িত এক্সপোজার শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া এবং এমনকি নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সারের বর্ধিত ঝুঁকি সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করে।

 গবেষকরা প্রচলিত পণ্য এবং “সবুজ” পরিষ্কারের পণ্য উভয়ই পরীক্ষা করেছেন এবং ৩০টি পণ্যের মধ্যে মোট ৫৩০টি অনন্য VOC সনাক্ত করেছেন।  এর মধ্যে, ১৯৩টি ভিওসি বিপজ্জনক ছিল – যা শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি, ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি এবং বিকাশ ও প্রজনন  সংক্রান্ত স্বাস্থ্যের ক্ষতি সংক্রান্ত সম্ভাবনার সাথে জড়িত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এই ক্লিনিং প্রোডাক্টগুলির ভিওসি ঘরের ভিতরে এবং বাইরে বাতাসের গুণমানকে প্রভাবিত করে।  কিন্তু তারা বাইরের বাতাসের চেয়ে অভ্যন্তরীণ বাতাসকে দুই থেকে পাঁচ গুণ বেশি দূষিত করে,অনেক ক্ষেত্রে এটি ১০ ​​গুণ পর্যন্ত ঘরের বাতাসকে বেশি দূষিত করে। গবেষকদের মতে কিছু পণ্য আবার সপ্তাহ বা এমনকি এক মাস পর্যন্ত VOC নির্গত করে।সমীক্ষাটিতে সবুজ এবং সুগন্ধ মুক্ত,পরিষ্কারের পণ্যগুলি ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে যে দুর্বল বায়ুচলাচল স্থানে পরিষ্কারের পণ্যগুলির ব্যবহার, যেমন বন্ধ কক্ষ বা ছোট বাথরুম, এই বিষাক্ত রাসায়নিকগুলিকে আরও বেশি ঘনত্বের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এটি বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক এবং শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে ।

গবেষকরা এই অধ্যয়নের মাধ্যমে ভোক্তাদের তাদের ঘরের অভ্যন্তরীণ বাতাসে প্রবেশ করা অসংখ্য রাসায়নিকের সাথে যুক্ত সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে  সচেতন করার একটি প্রয়াস করেছেন।সেই সাথে ভোক্তাদের তাদের পরিষ্কারের দ্রব্যগুলি পুনর্বিবেচনা করার জন্য এবং তারা যে পণ্যগুলি ব্যবহার করে তার ক্ষেত্রে আরও সচেতন পণ্য পছন্দ করার জন্য রাস্তা দেখিয়েছেন৷এক্ষেত্রে গবেষকরা নিরাপদ পরিবেশ বান্ধব পরিষ্কারের পণ্য যেমন ভিনেগার এবং বেকিং সোডার মতো প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করার উপর জোর দিয়েছেন।  

তবে ভোক্তাদের ব্যক্তিগত সতর্কতার পাশাপাশি,প্রশাসনকে সতর্ক হতে হবে যাতে নির্মাতারা পণ্যগুলিতে ব্যবহৃত উপাদানগুলির বিষয়ে এবং এই দ্রব্য ব্যবহারের সাথে সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে স্পষ্ট ঘোষণা করেন পণ্যের গায়ে থাকা লেবেলে।সেই সাথে দরকার সচেতনতা মূলক প্রচার যাতে সমাজের সব অংশের লোক তাদের ব্যবহার্য বস্তুগুলি থেকে সম্ভাব্য বিপদের বিষয়ে সচেতন হতে পারে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে

উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর  প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

World’s most polluted cities: নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়

উত্তরাপথঃ দিওয়ালি উদযাপনের একদিন পর জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় উঠে এসেছে।সোমবার, অর্থাৎ দীপাবলির পরের দিন এই শহরগুলির বায়ুর গুণমান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় খারাপ হয়েছে।বায়ুর গুনমান খারাপ হওয়ার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত আতশবাজি জ্বালানোকে দায়ী করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় যথারীতি প্রথম স্থান দখল করেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দীপাবলির পরের দিন এটির AQI (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) পরিসংখ্যান ছিল ৪০৭। নভেম্বরের শুরু থেকে, দিল্লিতে AQI পরিসংখ্যান খারাপ হয়েছে।  সুইস গ্রুপ আইকিউএয়ার শহরের বাতাসকে "বিপজ্জনক" বিভাগে রেখেছে।ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়(World’s most polluted cities), ১৫৭ এর AQI সহ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। কলকাতা ১৫৪ এর AQI সহ সপ্তম স্থানে রয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ

উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top