

ছবি – এক্স হ্যান্ডেল থেকে নেওয়া
উত্তরাপথঃ প্রাচীন ইতিহাসে ডাইনোসরের Fossil-এ কি লুকিয়ে আছে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ? হ্যাঁ, ঠিক এমনটাই বলছে সাম্প্রতিক এক গবেষণা। বিজ্ঞানীরা আজ আর শুধু ডাইনোসরের কঙ্কাল খুঁড়ে তাদের দৈর্ঘ্য-মোটা বোঝার চেষ্টা করছেন না, বরং এই প্রাণীদের Fossil-এ জমে থাকা নরম কলার (soft tissue) ভেতর খুঁজে চলেছেন জটিল রোগের উৎস, যেমন ক্যান্সার।
● ডাইনোসরের Fossil-এ মিলল ক্যান্সারের সূত্র!
ব্রিটেনের আঙ্গলিয়া রাস্কিন বিশ্ববিদ্যালয় (Anglia Ruskin University) এবং ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের একদল গবেষক সম্প্রতি এমনই এক ব্যতিক্রমী কাজ করে ফেলেছেন। আধুনিক প্যালিওপ্রোটিওমিক (paleoproteomic) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা কোটি কোটি বছর আগের ডাইনোসরের হাড়ের মধ্যে আবিষ্কার করেছেন লাল রক্তকণিকার মতো দেখতে গঠন এবং প্রোটিনের উপস্থিতি।
যে ডাইনোসরের Fossil পরীক্ষা করা হয়েছে, তার নাম Telmatosaurus transylvanicus—একটি ৬৬-৭০ মিলিয়ন বছর আগের উদ্ভিদভোজী ডাইনোসর, যাকে অনেকে “marsh lizard” নামেও ডাকেন।
এই Fossil বিশ্লেষণে বিজ্ঞানীরা স্ক্যানিং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে এমন কিছু নরম টিস্যুর ছাপ পেয়েছেন, যা দেখে বোঝা যাচ্ছে—ডাইনোসরের শরীরে এক সময় রক্তপ্রবাহ, প্রোটিন, এমনকি রোগ-এর প্রমাণও থাকতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব Fossil যদি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা যায়, তবে ভবিষ্যতের গবেষকরা এগুলোর মধ্যে থেকে ক্যান্সারের প্রাচীন রূপ বুঝতে পারবেন। শুধু তাই নয়, ক্যান্সার কীভাবে বিভিন্ন প্রজাতির জীবজগতে বিস্তার লাভ করেছে এবং কিছু প্রাণী কীভাবে দীর্ঘদিন ধরে এই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, তারও গুরুত্বপূর্ণ সূত্র মিলতে পারে।
গবেষক প্রফেসর জাস্টিন স্টেববিং জানিয়েছেন—”ডাইনোসরের মতো বড়দেহী প্রাণীরা জীবাশ্ম বিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক মহা পরীক্ষাগার। শুধু হাড় নয়, Fossil-এ থাকা নরম টিস্যু সংরক্ষণ করা হলে ভবিষ্যতের গবেষণায় আরও বিস্ময়কর তথ্য উঠে আসবে।”
তিনি আরও বলেন, “হাড়ের মধ্যে থাকা প্রোটিন DNA-র তুলনায় অনেক বেশি টেকসই। তাই এই প্রোটিন বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায় কোনো প্রাণী জীবনে কী ধরনের রোগে আক্রান্ত হতো বা প্রতিরোধ গড়ে তুলত।”
একটি পূর্ববর্তী গবেষণায়ও Telmatosaurus-এর Fossil-এ ক্যান্সারের লক্ষণ পাওয়া গেছে, যা প্রমাণ করে—এই রোগ মানুষের মতো প্রাণীতে নতুন কিছু নয়, বরং তার শিকড় লুকিয়ে আছে কোটি বছর পেছনে, ডাইনোসরের দেহে।
এই গবেষণা প্রমাণ করে Fossil শুধু অতীত জানার মাধ্যম নয়, বরং ভবিষ্যতের চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক বিপ্লবের উৎসও হতে পারে। নরম কলা ও প্রোটিন সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিলে, একদিন হয়তো ডাইনোসরের Fossil-ই আমাদের ক্যান্সারের মতো রোগের নিরাময় পথ দেখাবে।
সূত্রঃ Preserving Fossilized Soft Tissues: Advancing Proteomics and Unveiling the Evolutionary History of Cancer in Dinosaurs” by Pramodh Chitral Chandrasinghe, Biancastella Cereser, Sergio Bertazzo, Zoltán Csiki-Sava and Justin Stebbing, 2 April 2025, Biology.
DOI: 10.3390/biology14040370
আরও পড়ুন
Fructose: নতুন গবেষণায় ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার কারণ বলা হয়েছে
উত্তরাপথঃ একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জোরালো প্রমাণ দেওয়া হয়েছে যে ফ্রুক্টোজ (Fructose), সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয়গুলিতে থাকা এক ধরনের চিনি, যা স্থূলতার প্রাথমিক চালক। বছরের পর বছর ধরে, পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা , পাশ্চাত্য খাদ্যে, স্থূলতার মূল কারণ নিয়ে বিতর্ক করেছেন, কেউ কেউ অত্যধিক ক্যালোরি গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, অন্যরা কার্বোহাইড্রেট বা চর্বি জাতীয় খাবারকে দায়ী করেছেন। Obesity জার্নালে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার প্রকৃত চালক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।The University of Colorado Anschutz Medical Campus এর Dr. Richard Johnson এবং তার দলের মতে, ফ্রুক্টোজ হল একটি সাধারণ চিনি যা ফল এবং মধুর প্রাথমিক পুষ্টি। .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন
প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে
উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি
উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন