ডুডল আর্টের হাল হকিকত

প্রিয়াঙ্কা দত্ত: যদি বলি আমাদের রবি ঠাকুর বিখ্যাত ডুডলার ছিলেন তাহলে চমকে যাবেন নিশ্চয় ৷ তাঁর হাতে আঁকা পান্ডুলিপির নক্সা গুলো মনে পড়ছে? সেই যে কবিতার কেটে দেওয়া অক্ষরগুলি দিয়ে বানানো বিচিত্র সব নক্সা ! যদি বলি , সেসব হলো ডুডল আর্টের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তাহলে মেনে নিতে একটু কষ্ট হবে বৈকি ৷ কিন্তু না, এ নিয়ে কোনো ধন্ধ নেই যে , আজকের দিনে যে ডুডল আর্ট নিয়ে আমরা মাতামাতি করছি তার জন্ম সেই গুহামানবের যুগে ৷ অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ৫০০০ বছর আগে ৷ সেই সময়ে মানুষ যেমন নিজের মনের ভাব প্রকাশের জন্য নানা ধরনের রেখাচিত্র আঁকতো, বর্তমানের ডুডল আর্ট তারই উত্তরসূরী ৷ কী এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না , তাই তো! আসলে এটি হলো মানুষের এক সাধারণ অভ্যাস যা কিনা তার অবচেতন মনের ভাবনা গুলোকে এলোমেলো ও বিমূর্ত নক্সার সাহায্যে ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করে ৷ এটা একটা অ্যাবস্ট্রাক্ট আর্টের পর্যায়ে পড়ে ৷ প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার ধ্বংসস্তূপের মধ্যে যেমন ডুডলের সন্ধান পাওয়া গেছে তেমনি  মধ্যযুগের বহু পুঁথির পান্ডুলিপির মার্জিনে খুঁজে পাওয়া গেছে ডুডল আর্টে লেখা বিশেষ বিশেষ টিকা বা ব্যাখা ৷ সুতরাং বোরিং ক্লাস রুমে যদি কোনও অমনযোগী ছাত্র বা ছাত্রী বিষয়টির কার্টুন এঁকে বা হিজিবিজি লিখে ক্লাসের মনোযোগ নষ্ট করে তবে ভবিষ্যতে তার একজন বড় ডুডলার বা ডুডল আর্টিস্ট হওয়ার সম্ভবনা প্রবল ৷

ডুডল কথাটির নানান অর্থের মধ্যে একটি হলো ‘বোকা মানুষ’ | এর আরেক অর্থ ‘কিছুই না করা ‘!জার্মানিতে প্রথম এই শব্দটি বিস্তার লাভ করে ৷ এই ধরনের বিমূর্ত শিল্পের কোনোও অর্থ হয়না বা হলেও ছবি দেখে চট করে তার অর্থ বের করা যায় না ৷ তবে ছবির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলে তার অর্থ ধীরে ধীরে পরিস্ফুট হয়। আজ এই ডুডলিং তরুণ প্রজন্মের কাছে  এক প্রিয় বিনোদনের হয়ে উঠেছে ৷ আসলে আমরা সবাই এক একজন ডুডল আর্টিস্ট ৷ কারণ কখনো না কখনো আমরা কাগজে কলমে আনমনে বিশেষ কিছু না কিছু নক্সা তো অবশ্যই ফুটিয়ে তুলেছি ৷ কারো কারো তো আবার এই অভ্যাস নেশার মতো কাজ করে ৷ বর্তমান যুগে একজন ভালো ডুডল আর্টিস্টের কদর সর্বত্র। এই শিল্প বোঝাতে পারে তার সৃষ্টিকর্তার মনের কথা ৷ তাই ডুডলকে স্ট্রেস রিলিভিং টুল বা টেকনিক হিসাবে ব্যবহার করা এখন মনোবিদদের অন্যতম হাতিয়ার ৷ প্রায়শই ডুডলিং করা হয় কোনোও চাপের মধ্যে বা হতাশাজনক পরিস্হিতিতে ৷ এটি অপরাধ বোধের একটি চিহ্নও হতে পারে ৷ ডুডলের নানা রংও শিল্পির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করে ৷ ডুডল আর্ট একাগ্রতা  বাড়াতে এবং মনকে সৃজনশীল করে তুলতে অনেকাংশে সক্ষম৷ কার্টুন ,কমিক ,জীবজন্তু, ল্যান্ডস্কেপ , জ্যামিতিক আকার আকৃতি সবকিছুই এই   অঙ্কনের অন্তর্ভুক্ত। বেশিরভাগ মানুষই একই আকার বা ধরনের ডুডলের পুনরাবৃত্তি করে ৷

এখন যদি আমরা বিখ্যাত ডুডুল আর্টিস্টদের নাম খুঁজতে যায় তাহলে দেখব তাতে কে নেই ? লিওনার্দো দা ভিঞ্চি বা দস্তয়েভস্কির বিভিন্ন ছবি ও পাণ্ডুলিপিতে এই শিল্পকলার বিশেষ প্রভাব দেখা গেছে। কবি থেকে রাজনীতিবিদ কিংবা সাহিত্যিক কেউই এর বাইরে নন । আলেকজান্ডার পুশকিন, স্যামুয়েল বাকেট, জন কিটস সহ রোনাল্ড রেগন, বিল ক্লিনটন ,জে এফ কেনেডি বা আইজেনআওয়ার , এঁরা সকলেই বিশিষ্ট ডুডলার৷ বিশ্বাস করা কঠিন হলেও এটাই সত্য ৷ আসলে শুধুমাত্র বর্তমান প্রজন্মের কাছেই নয় , এই শিল্প বহুদিন থেকেই বহু গুণী মানুষের সমাদর পেয়ে এসেছে ৷

বিশ্বের বৃহত্তম সার্চ ইঞ্জিন গুগল , তার পেজে  এই আর্ট ব্যবহার করার পর থেকে এর জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। google ডুডলের নাম এখন আমরা সবাই জেনে ফেলেছি ৷  কোন বিশেষ ঘটনা বা ব্যক্তির কার্যকলাপকে শ্রদ্ধা জানাতে google তার সার্চ ইঞ্জিনের হোম পেজের লোগোতে নানা ধরনের বিমুর্ত ছবি ফুটিয়ে তোলে, যা এক ঝলকে সেই বিষয়ে অনেক কিছু বুঝিয়ে দিতে পারে ৷গুগলের প্রথম ডুডল যুক্ত হয় ১৯৯৮ সালের ৩০ শে আগস্ট বার্নিং ম্যান ফেস্টিভ্যালের দিন ৷ এটি ডিজাইন করেছিলেন google এর প্রতিষ্ঠাতা লেরি পেজ ও সারগেই বিন৷  ২০১০ সালের জানুয়ারিতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সম্মানার্থে প্রথম অ্যানিমেটেড ডুডল ব্যবহার হয় ৷ তারপরের ঘটনা সব আমাদের জানা ৷ এখন গুগলে ডুডল ডিজাইন করেন প্রথিতযশা সব ডুডলার৷  অনেকে একে পেশা হিসেবেও বেছে নিয়েছেন ৷ এই শিল্প সম্পাদনের জন্য তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন অ্যাপ ৷ তৈরী হচ্ছে কর্মসংস্থান | সুতরাং আক্ষরিক অর্থে কোনও কাজের না হয়েও ডুডল কিন্তু নিরবিচ্ছিন্নভাবে তার কাজ করে যাচ্ছে ৷ 

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?

উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন  দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI  এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে।   বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।  নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা  ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী?  আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত?  পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না?  এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন

বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি

আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ

উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top