

অসীম পাঠক: সূর্যাস্তের রক্তিম বর্ণালীর রশ্মি এসে পড়ছে গেটের কাছেই সগর্বে মাথা তুলে দাঁড়ানো পাইন গাছটার উপরে, গেট থেকে প্রশাসনিক ভবনের কংক্রিট রোডের দুপাশে ঝাউ পাতাবাহারের সমাহার। লাল মোরামের রাস্তাটা আজও স্মৃতির গভীরে। তফাৎ তো অনেক। সেদিনের সস্তা চপ্পল রঙ চটা ইউনিফর্ম পরা সুকুমার আজ দামী লেদারের শু, টাই কোর্ট পরা এক ব্যাস্ত মানুষ ,ডক্টর এস সান্যাল। ব্যাস্ততার সীমারেখা সরিয়ে সে এসেছে তার গ্রামে পূজোর ছুটি কাটাতে , দুরন্ত কৈশোরের সাধনভূমি ,যে মাটি তাকে অভিনিষিক্ত করেছিলো নবতর চেতনায় , সেই স্কুলের টানে সে এখন দাঁড়িয়ে ঝাঁকড়া মাথাওয়ালা শিরীষ গাছের বেদীটার নীচে। লাল ইঁট সুরকির উপরে সিমেন্টের প্রলেপ , দামী ডিস্টেম্পারের দেওয়াল ভেদ করে সেই ফেলে আসা দিনগুলো র স্মৃতি উঁকি মারে মনের ক্যানভাসে। তিরিশ বছরে অনেক বদলেছে। সময়ের স্রোতে ইন্টারনেট কম্পিউটারের দৌড়ে বিশ্বায়নের যুগে হারিয়ে গেছে শৈশব। স্মার্ট ফোনের স্মার্ট আলাপচারিতায় প্রেম চিঠির পাতা থেকে ছোট্ট মেসেজে বদলেছে। লজ্জা সম্ভ্রম ঐতিহ্য পরম্পরা আর আদর্শ আজ আর অনুসরণযোগ্য নয় । অন্ধ অনুকরণে শুধুই যান্ত্রিকতার আবহ । চাষীর ছেলে সুকুমার একটা টিউশনি ও পায়নি অথচ বোর্ডে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছিলো সে। প্রত্যন্ত গ্রামের এক স্কুল সংবাদের শিরোণামে এসেছিলো। হামলে পড়েছিলো সবাই মন্ত্রী আমলা বুদ্ধিজীবী । ব্যাস আর ফিরে তাকাতে হয় নি সুকুমার কে , স্বপ্নের উড়ানে উড়ে চলা। প্রেম তার জীবনে আসেনি। তবে ভালোলাগা কাজ করতো , কিন্তু ভাবনার মধ্যেও যেনো সে বিলাসিতা টুকু আনার স্পর্ধা সুকুমারের ছিলো না। স্কুল ক্যাম্পাসে র পাশে তাল দীঘির পাড়ে হাট বসতো প্রতি শুক্রবার। আজ তো সে সব অতীত। তবে তালদীঘিতে বাঁধানো স্নানের ঘাট হয়েছে । সোলার লাইট । মাছ চাষ হচ্ছে ,বড়ো প্রোজেক্ট শুধু পাড়ের উদ্ধত তাল গাছ গুলোই নেই। তাল পড়ার শব্দ আজকাল কার ছেলে মেয়েরা শোনে না। বাঃ স্কুল কম্পাউন্ডের ভেতরে ছোট্ট এক চিলতে পার্ক । মার্বেল পাথরের হেলানো বেঞ্চ। প্রচুর জবা আর টগর ফুলের গাছ ছিলো সেগুলোর পরিবর্তে গোলাপ চন্দ্র মল্লিকা। কৃষ্ণচূড়া গাছটটাকে কোথাও খুঁজে পেলো না সুকুমার । অথচ টিফিনের সময় এখানে বসে যখন সবাই টিফিন বাক্স থেকে দেশী ঘিয়ের লুচি আলুভাজা বের করতো , সুকুমার টিনের কৌটো থেকে তেল মুড়ি বের করতে লজ্জা পেতো । তখন তো ফাস্ট ফুড ছিলোই না । চকোলেট বিস্কুট টাই মাঝে মাঝে। যদিও সুকুমার চকোলেট এর স্বাদ এ স্কুলে পড়তে পড়তে কখনও পায়নি। তবুও আনন্দ ছিলো। মিলে মিশে ভাগ করে খাওয়া। সরস্বতী পূজোর দিন সবাই মিলে খিচুড়ি প্রসাদ। শালপাতার উপরে গরম হলদে খিচুড়ি আহা অমৃতের মতো সেই স্বাদ এখনো সুকুমারের জিভে লেগে আছে। এ স্মৃতি রোমন্থনের মধ্যেই যেনো বাঁচার অক্সিজেন। নাঃ এবার ফিরতে হবে, অন্ধকার হয়ে আসছে । ক্লাশ রুম গুলো তো সব বদলে গেছে। দেয়ালের উপরে নেট সিমেন্টের কালো রঙের ব্ল্যাকবোর্ড এখন নেই , চক ডাস্টার ও আউট। পরিবর্তে সাদা বোর্ডে মার্কার পেন এ লেখা , হরেক রঙ। সুকুমার ভাবে আসলেই কি জীবন এখন বড্ড রঙিন। ধুতি পরা সৌম্য সুদর্শন মাষ্টার মশাই দের শাসন এখন রূপকথার গল্প। তার বদলে ফাটা জিন্স টি শার্টে আ্যাট্রাক্টিভ ছোট চুলের হেড ফোন কানে স্মার্ট টীচার, যে টীচার কম বন্ধু বেশী। রোমান্টিক ছেলেবেলা র স্কুল জীবনের রোমান্স এখন কার সপ্রতিভ ইংরেজি জানা বাচ্চাদের কাছে ধূসর স্বপ্ন। এরা ক্যারিয়ার বোঝে। কুরিয়ার বোঝে। ঘাসের বোঝা আর ফসলের জমি বোঝে না, হলুদ সর্ষে জমিতে সেলফি নেয়। চাষের কথা জেনে কি লাভ। আমরা বাড়ছি , আমরা ছুটছি। দামী হেল্থড্রিংক চাই গরম দুধ নয় । নারকেল মুড়ি নয় চিকেন পকোড়ার যুগ। মায়াবী সন্ধায় নির্জনতায় প্রাণভরে শ্বাস নেয় সুকুমার। তারপর এগিয়ে আসে গেটের কাছে পার্ক করা তার দামী গাড়ি টার দিকে। হঠাৎ ই যেনো মনের ভেতরে বেজে ওঠে সেই প্রার্থনা র সুর ,
” তুমি নির্মল করো মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে “।
আরও পড়ুন
Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন
উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন
ওজন হ্রাস (weight loss) মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে
উত্তরাপথঃ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, শাকসবজি, সামুদ্রিক খাবার এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ একটি ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য খাওয়া - এমনকি শুধুমাত্র খাদ্যের নির্দেশিকা অনুসরণ করে ওজন হ্রাস (weight loss)মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে বলে মনে করা হয়।সাম্প্রতি ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত, একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ওজন হ্রাস মস্তিষ্কে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ৯ মাস পর্যন্ত ধীর করে (aging process) দিতে পারে। গবেষণায় ৬০ থেকে ৭৮ বছর বয়সের মধ্যে ৪৭ জন অংশগ্রহণকারীকে জড়িত করা হয়েছিল, যাদের প্রত্যেকেরই ওজন বেশি বা স্থূল ছিল এবং তাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ ছিল। তাদের এলোমেলোভাবে একটি ক্যালোরি-সীমাবদ্ধ গ্রুপ বা একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে বরাদ্দ করা হয়েছিল।ক্যালোরি-সীমাবদ্ধতা গোষ্ঠীর সদস্যদের একটি খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করে, যার লক্ষ্য ছিল তাদের আনুমানিক প্রয়োজনের চেয়ে ১০ – ১৫% কম ক্যালোরি গ্রহণ করা। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ তাদের খাদ্য পরিবর্তন করেনি .....বিস্তারিত পড়ুন
Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে
উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি। ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে। আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি। এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে। এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন