গার্গী আগরওয়ালা মাহাতঃ ভারত তার ধর্মীয় বিশ্বাসের পৌরাণিক পটভূমির জন্য পরিচিত। শকুন্তলায়, কালিদাস পৌরাণিক কাহিনীকে ভারতীয় ঐতিহ্যের বুননে বুনেছিলেন ।তিনি ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্যকে তার কালজয়ী নাটক অভিজ্ঞান শকুন্তলমের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এখানে কালিদাস পৌরাণিক চরিত্র শকুন্থলা সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন, যিনি দুষ্যন্ত নামক পৌরাণিক রাজার প্রেমে পড়েছিলেন, যিনি পুরু রাজবংশের শাসক হিসাবে বিবেচিত হন। এমনকি কালিদাস তার নাটকে তাদের জন্ম, প্রেম, বিবাহ, বিচ্ছেদ এবং পুনর্মিলনের মধ্যেও পৌরাণিক উপাদান অন্তর্ভুক্ত করেছেন। ফলস্বরূপ, কালিদাস একটি মহান পৌরাণিক প্রেমের নাটক ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম ‘রচনা করেছেন যা ভারতের ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধকে চিত্রিত করে।
শকুন্তলা ভারতীয় সাহিত্যের অন্যতম প্রশংসিত নারী চরিত্র। প্রথমবার শকুন্তলার চরিত্রটি মহাভারতে উদ্ধৃত হয়েছিল। তারপর থেকে তিনি ভারতের বিভিন্ন ভাষার বিভিন্ন গ্রন্থে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। কালিদাসের অভিজ্ঞান শকুন্তলমে, শকুন্তলা হলেন ঋষি বিশ্বামিত্র এবং অপ্সরা মেনকার প্রকৃত কন্যা। যাকে ঋষি কণ্ব এবং তাঁর স্ত্রী গৌতমী দত্তক নিয়েছিলেন এবং লালনপালন করেছিলেন।কালিদাসের নাটকে শকুন্তলা একটি দেহাতি মেয়ে, যিনি কম্ব মুনীর আশ্রমে বেড়ে উঠেছেন। নাটকের অগ্রগতির সাথে, তিনি রাজা দুষ্যন্তের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন যিনি একটি অভিশাপের কারণে শকুন্তলাকে ভুলে যান। পরে, তাকে ঋষি কশ্যপ এবং তার স্ত্রী অদিতি শকুন্তলাকে তাদের আশ্রমে আশ্রয় দেন। সেখানে শকুন্তলা একটি সাহসী শিশু ভরতের জন্ম দেন এবং অবশেষে তার স্বামীর সাথে পুনরায় মিলন হয়।
শকুন্তলা নাটকে কালিদাসের চিত্রায়ন নিছক রোমান্সের বাইরে একটি জগতের ছবি আমাদের সামনে তুলে ধরে। শকুন্তলা চরিত্রের মাধ্যমে, তিনি প্রাচীন ভারতীয় সমাজে নিয়ন্ত্রিত পুরুষতান্ত্রিক রীতিনীতির সমালোচনা করেন। শকুন্তলার জীবনকে পিতৃতন্ত্রের সীমাবদ্ধতার বিরুদ্ধে একজন মহিলার একক সংগ্রামের দ্বারা চিহ্নিত করেছেন।নাটকে রাজা দুষ্যন্তের সাথে বিচ্ছেদের পর, কালিদাস শকুন্তলা চরিত্রের স্থিতিস্থাপকতা এবং দৃঢ়তার দিকটি সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন।
অধিকন্তু, অভিজ্ঞান শকুন্তলমে কালিদাসের পৌরাণিক উপাদানের ব্যবহার সংশোধনবাদী মিথমেকিংয়ের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। ঐতিহ্যগত পৌরাণিক কাহিনী এবং কিংবদন্তিগুলির পুনর্ব্যাখ্যা করে, কালিদাস প্রভাবশালী সাংস্কৃতিক আখ্যানকে চ্যালেঞ্জ করেছেন এবং ভারতীয় পুরাণকে আরও ভালো ভাবে বোঝার প্রস্তাব দিয়েছেন। শকুন্তলাকে একজন শক্তিশালী এবং স্বাধীন মহিলা হিসেবে তার নাটকে চিত্রিত করা হয়েছে, যিনি সামাজিক নিয়ম ও প্রত্যাশাকে অস্বীকার করে প্রথাগত পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধকে দূরে সরিয়ে রেখে একজন সতন্ত্র নারী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছিলেন। কালিদাসের অভিজ্ঞান শকুন্তলম একটি মাস্টারপিস যা শুধুমাত্র সংস্কৃত নাটকে তার রচনার দক্ষতা প্রদর্শন করে না বরং প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি ও সমাজের একটি দিকও তুলে ধরে। শকুন্তলার চরিত্রের মাধ্যমে কালিদাস সেইসময়কার আমাদের সমাজের পুরুষতন্ত্র এবং সাংস্কৃতিক আধিপত্যের একটি শক্তিশালী সমালোচনা করেন, পাশাপাশি ঐতিহ্যগত ভারতীয় সমাজে নারীদের স্থিতিস্থাপকতা এবং তাদের শক্তির উদযাপন করেছেন। এইভাবে, অভিজ্ঞান শকুন্তলম ভারতীয় সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা যা আজও পাঠকদের অনুপ্রাণিত ও বিমোহিত করে চলেছে।
আরও পড়ুন
Delhi Flood: লাল কেল্লা, আইটিও-রাজঘাট পর্যটকদের জন্য বন্ধ
উত্তরাপথ: যমুনা জল বাড়াতে Delhi Flood বন্যা পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। যদিও বৃহস্পতিবার রাত থেকে যমুনার জলস্তর ১৭ সেন্টিমিটার কমেছে। যদিও রাজধানী দিল্লির সব এলাকা এখনও জলাবদ্ধ। বন্যার আশঙ্কায় ১৬ জুলাই পর্যন্ত দিল্লির সমস্ত স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফ্রান্স থেকে ফোনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং এলজি বিনয় সাক্সেনার সাথে কথা বলেছেন এবং দিল্লিতে বন্যার পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
নতুন DA র হার ঘোষণা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের জন্য
উত্তরাপথ: ডিএ হল ডিয়ারনেস অ্যালাওয়েন্স বা মহার্ঘ্য ভাতা। মূল্যস্ফীতির কারণে কর্মচারীদের অর্থনৈতিক অবস্থার ভারসাম্য বজায় রাখতে বা সামঞ্জস্য করতে অতিরিক্ত আর্থিক সাহায্যের আকারে ডিএ দেয় সরকার। এটি কর্মচারীর মূল বেতনের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ বেতনের সঙ্গে যোগ করে দেওয়া হয়। সাধারণত, সরকার প্রতি ছয় মাসে (জানুয়ারি ও জুলাই মাসে) কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধির ঘোষণা করে। কোন বছরে মহার্ঘ ভাতা কত শতাংশ বাড়বে তা নির্ধারণ করতে সর্বভারতীয় উপভোক্তা মূল্য সূচকের সাহায্য নেওয়া হয়। .....বিস্তারিত পড়ুন
Life in Saturn: শনিতে কি প্রাণের "ছোঁয়া"?
ড. সায়ন বসু: গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী গায়া (Gaia) এবং উরেনাস (Urenus)-এর সন্তান এঙ্কেলাডাস (Enceladus) ছিলেন একজন দৈত্য | দেবতা এবং দৈত্যদের যুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন যুদ্ধ এবং জ্ঞানের দেবী এথেনার (Athena) বিপক্ষে | এমনও মনে করা হয় যে এঙ্কেলাডাসকে ইতালির সিসিলিতে অবস্থিত এতেনা (Etena) পর্বতের নীচে সমাধি দেওয়া হয় | বলা হয়ে থাকে ভূমিকম্প এবং অগ্ন্যুৎপাতের জন্যে নাকি তার নিঃশ্বাস দায়ী | ঠিক তেমনই শনির একটি ছোট উপগ্রহ যার নামও এঙ্কেলাডাস তা থেকেও প্রচুর পরিমানে ফসফরাসের হদিশ পাওয়া গেছে যা কিনা বৈজ্ঞানিকদের .....বিস্তারিত পড়ুন
Gond Tribe: মধ্য প্রদেশে গোন্ড উপজাতির সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ
গার্গী আগরওয়ালা মাহাতো: গোন্ড উপজাতি(Gond tribe) বিশ্বের বৃহত্তম উপজাতি গোষ্ঠীগুলির মধ্যে একটি। এটি ভারতের বৃহত্তম উপজাতি । এদের গায়ের রং কালো, চুল কালো, ঠোঁট মোটা, নাক বড় ও ছড়ানো। তারা অলিখিত ভাষা গোন্ডি ভাষাতে কথা বলে, যা দ্রাবিড় ভাষার সাথে সম্পর্কিত। গোন্ড উপজাতির একটি দীর্ঘ এবং সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে, বিশ্বাস করা হয় যে তাদের শিকড় প্রাক-আর্য যুগে্র । গোন্ডদের সবচেয়ে গৌরবময় রাজা ছিলেন সংগ্রাম শাহ এবং দলগত শাহ, যারা ম্ধ্যপ্রদেশের গন্ডয়ানা রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকায় অনেকগুলি দুর্গ তৈরি করেছিলেন। মাত্র ৩০ বছর বয়সে দলগত .....বিস্তারিত পড়ুন