একটি সাধারণ প্রাতঃরাশের খাবার আপনার অন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে

উত্তরাপথঃ আপনি যদি ডিম দিয়ে দিন শুরু করতে ভালোবাসেন, তাহলে আপনার এই বিষয়ে সতর্ক  হওয়া উচিত। নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটির একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে ডিম, ভাত, সয়া এবং ইস্টের মতো খাবারে পাওয়া প্রোটিনের ধরণ আমাদের অন্ত্রে বসবাসকারী ক্ষুদ্র অণুজীবগুলিকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এই জীবাণুগুলি সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য, হজম থেকে শুরু করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গবেষকরা বলেছেন, “আমাদের আধুনিক খাদ্যতালিকায় কিছু সমস্যা আছে, কিন্তু আমরা  সঠিক ভাবে জানিনা এটি কি।” তারা গবেষণায়  জানতে চেয়েছিলেন যে বিভিন্ন খাবার কীভাবে আমাদের অন্ত্রের জীবাণুগুলিকে প্রভাবিত করে এবং এই জীবাণুগুলি প্রতিক্রিয়ায় কী করে।

বিজ্ঞানীরা এক সপ্তাহ ধরে প্রোটিনের একক উৎস – যেমন ডিমের সাদা অংশ, বাদামী চাল, সয়া এবং ইস্টের – এর উপর ভিত্তি করে ইঁদুরকে খাবার খাওয়ান। তারপর তারা অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ায় এই খাবারগুলি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় তা অধ্যয়ন করেন। ফলাফলগুলি চোখ খুলে দেয় বিজ্ঞানীরা এক সপ্তাহ ধরে প্রোটিনের একক উৎস – যেমন ডিমের সাদা অংশ, বাদামী চাল, সয়া এবং খামির – এর উপর ভিত্তি করে ইঁদুরকে খাবার খাওয়ান। তারপর তারা অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় তা অধ্যয়ন করেন। ফলাফলগুলি চোখ খুলে দেয় প্রোটিনের ধরণ অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ’প্রকার’ এবং সেই ব্যাকটেরিয়া ‘কী করে’ উভয়ই পরিবর্তন করে।

উন্নত জেনেটিক এবং প্রোটিন বিশ্লেষণ সরঞ্জাম ব্যবহার করে, গবেষকরা দেখেছেন যে প্রোটিন উৎস পরিবর্তন করার ফলে অন্ত্রের জীবাণুতে বড় পরিবর্তন ঘটে। বাদামী চাল, ইস্ট এবং ডিমের সাদা অংশের সাথে ডায়েটের ফলে সবচেয়ে লক্ষণীয় প্রভাব দেখা গেছে।

গবেষণায় দুটি প্রধান প্রভাবের উপর দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে:

১. অ্যামিনো অ্যাসিড ভাঙ্গন: প্রোটিন অ্যামিনো অ্যাসিড দিয়ে তৈরি। অন্ত্রের জীবাণুগুলি এই প্রোটিনগুলিকে ভেঙে ফেলে এবং তাদের নিজস্ব প্রয়োজনে অ্যামিনো অ্যাসিড ব্যবহার করে। যদিও এটি প্রত্যাশিত, এটি কখনও কখনও এমন পদার্থ তৈরি করতে পারে যা বিষাক্ত বা মস্তিষ্ক এবং অন্ত্রের যোগাযোগের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

২. চিনির ভাঙ্গন (গ্লাইক্যান): এগুলি প্রোটিনের সাথে সংযুক্ত শর্করার দীর্ঘ শৃঙ্খল। গবেষকরা দেখেছেন যে সয়া, ভাত, ইস্ট এবং ডিমের সাদা অংশের মতো খাবারগুলি অন্ত্রের জীবাণুগুলি এই চিনির শৃঙ্খলগুলি ভেঙে ফেলার এনজাইম তৈরির পদ্ধতি পরিবর্তন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ডিমের সাদা অংশে, কিছু ব্যাকটেরিয়া গ্লাইক্যানগুলিকে লক্ষ্য করে এমন এনজাইমের উৎপাদন বাড়িয়েছে, যা অন্ত্রের আস্তরণকে প্রভাবিত করতে পারে।

এটা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

আপনার অন্ত্রের ভিতরের আস্তরণটি মিউসিন নামক একটি পাতলা পদার্থ দ্বারা সুরক্ষিত। যদি ব্যাকটেরিয়া মিউসিন ভেঙে ফেলার এনজাইম তৈরি করে, তবে এটি অন্ত্রের আস্তরণের ক্ষতি করতে পারে এবং স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।

গবেষকরা জানতে চান যে ডিমের সাদা অংশ খাওয়ার ফলে জীবাণুগুলি এই মিউসিন-ভাঙ্গা এনজাইমগুলির আরও বেশি উৎপাদন করতে পারে কিনা, যা সম্ভবত অন্ত্রের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে।

যদিও গবেষণায় খুব নির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে যা বেশিরভাগ মানুষ প্রতিদিন খায় তা ঠিক নয়, এটি দেখায় যে আমরা যে ধরণের প্রোটিন গ্রহণ করি তা আমাদের অন্ত্রের জীবাণুর উপর প্রকৃত কি প্রভাব ফেলে। ভবিষ্যতের গবেষণায় আরও বাস্তবসম্মত খাদ্যাভ্যাসগুলি দেখা হবে এবং ঠিক কীভাবে বিভিন্ন প্রোটিন আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে তা বোঝা যাবে।

সহজ ভাষায়, আমরা সকালের জলখাবারে যা খাই, যেমন ডিম বা ভাত, কেবল আমাদের পেট ভরায় না – এটি আমাদের ভিতরে বসবাসকারী ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়াগুলিকেও পরিবর্তন করে, যা আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

সূত্রঃ “Dietary protein source alters gut microbiota composition and function” by J Alfredo Blakeley-Ruiz, Alexandria Bartlett, Arthur S McMillan, Ayesha Awan, Molly Vanhoy Walsh, Alissa K Meyerhoffer, Simina Vintila, Jessie L Maier, Tanner G Richie, Casey M Theriot and Manuel Kleiner, 21 March 2025, The ISME Journal.
DOI: 10.1093/ismejo/wraf048

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে

উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি।  ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে।  আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি।  এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন।  সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে।  এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে

উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর  প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন

উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি  তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top