

উত্তরাপথঃ নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়, বর্তমান ভারতের বিহারে অবস্থিত, খ্রিস্টীয় ৫ ম থেকে ১২ শতক পর্যন্ত বৌদ্ধ শিক্ষা ও বৃত্তির একটি বিখ্যাত কেন্দ্র ছিল। ৪৫০ খ্রিস্টাব্দে গুপ্ত সম্রাট কুমার গুপ্ত প্রথম দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে এটি হর্ষবর্ধন ও পাল শাসকদেরও পৃষ্ঠপোষকতা পায়।নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এশিয়ার উচ্চশিক্ষার প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে একটি।গত ১৯ জুন রাজগীরে অবস্থিত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।আজও নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়কে, ভারত এবং বিশ্বের জন্য একটি ঐতিহ্য বলে মনে করা হয়।
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল খ্রিস্টীয় ৫ম শতাব্দীতে, একজন ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ রাজা কুমারগুপ্ত প্রথমের রাজত্বকালে। বিশ্ববিদ্যালয়টি বৌদ্ধধর্মের অধ্যয়ন ও প্রসারের পাশাপাশি যুক্তিবিদ্যা, ব্যাকরণ এবং ওষুধের মতো অন্যান্য বিষয়ের চর্চার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় চীন, তিব্বত, শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সহ সমগ্র এশিয়া থেকে ছাত্র এবং পণ্ডিতদের আকর্ষণ করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ বিশিষ্ট পণ্ডিতদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল যারা বৌদ্ধ দর্শন, ধ্যান এবং যোগ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ছিলেন।
পূর্বের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বৌদ্ধিক কার্যকলাপের একটি কেন্দ্র, যেখানে পণ্ডিতরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে বৌদ্ধধর্ম, জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত, চিকিৎসা এবং দর্শন সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর ৯ মিলিয়নেরও বেশি পাণ্ডুলিপি ছিল বলে ঐতিহাসিক বিবরণ থেকে জানা যায়।সেইসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পণ্ডিতরা বৌদ্ধ দর্শনের বিকাশে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন ,বিশেষ করে মধ্যমাকা (মধ্যম পথ) এবং জ্ঞানবাদ (শুধুমাত্র-চেতনা) তত্ত্ব প্রচারের ক্ষেত্রে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় তুর্কি আক্রমণকারী বখতিয়ার খলজি দ্বারা ধ্বংস হয়ে যায়। এর আগে প্রায় ৮০০ বছর ধরে এই প্রাচীন বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষা চলছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংস ভারতে বৌদ্ধ শিক্ষা ও বৃত্তির একটি যুগের অবসান ঘটিয়েছে। ধ্বংস হওয়া সত্ত্বেও নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরাধিকার আজও টিকে আছে।সেইসময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পণ্ডিতদের এশিয়ায়, বিশেষ করে চীন ও জাপানে বৌদ্ধধর্মের বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল।
এই বিশ্ব বিখ্যাত প্রাচীন বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসাবশেষ এখনও দক্ষিণে, পাটনা থেকে ৯০ কিলোমিটার এবং বিহার শরীফ থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে তক্ষশীলার পর বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।এটি একটি আবাসিক ক্যাম্পাস আকারে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়, এই বিশ্ববিদ্যালয় বছর ধরে বিদ্যমান ছিল।
সেইসময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আগে একটি কঠিন প্রবেশিকা পরীক্ষা হত। শুধুমাত্র এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারত।এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সেইসময় ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার শিক্ষার্থী শিক্ষিত হয়েছে বলে অনুমান বিশেষজ্ঞদের। এইসব শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে শিক্ষা দেওয়া হত। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি সেইসময়ে শুধুমাত্র হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্ম অধ্যয়নের জন্য পরিচিত ছিল তা নয়, প্রাচীনকালে সাহিত্য, জ্যোতিষ, মনোবিজ্ঞান, আইন, জ্যোতির্বিদ্যা, বিজ্ঞান, যুদ্ধবিদ্যা, ইতিহাস, গণিত, স্থাপত্য, ভাষাতত্ত্ব, অর্থনীতি, চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়ও পড়ানো হত।
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বিশ্বের প্রথম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীরা এখানে শিক্ষা গ্রহণ করতে আসত।এই বিশ্ববিদ্যাল্যে৩০০ টিরও বেশি কক্ষ, সাতটি বড় হল এবং এর লাইব্রেরিটি ছিল নয় তলাবিশিষ্ট, যার নাম ছিল ধর্মগঞ্জ। তুর্কি শাসক বখতিয়ার খিলজি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগুন দিয়ে ধ্বংস করে দেন।কথিত আছে এখানকার লাইব্রেরিতে এত বই ছিল যে আগুন নিভতে তিন মাস লেগেছিল।শুধুমাত্র ধর্মগঞ্জ লাইব্রেরিতে ৯০ লাখের বেশি বই ছিল।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার কেন্দ্র হিসাবে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা করা হয়েছে। ২০১৪ সালে, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি এবং সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলির আন্তর্জাতিক সমর্থনে বিহারের রাজগীরে এই নতুন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়েছিল। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য প্রাচীন প্রতিষ্ঠানের উত্তরাধিকার সংরক্ষণ করার পাশাপাশি আন্তঃবিভাগীয় গবেষণা এবং শিক্ষার প্রচার করা । নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসে দুটি একাডেমিক ব্লক রয়েছে, যেখানে ৪০টি শ্রেণীকক্ষ রয়েছে।এখানে মোট ১৯০০ ছাত্রর বসার ব্যবস্থা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি অডিটোরিয়ামও রয়েছে। এ ছাড়া একটি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র ও অ্যাম্ফিথিয়েটারও নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে দুই হাজার মানুষের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীদের জন্যও রয়েছে ফ্যাকাল্টি ক্লাব ও স্পোর্ট কমপ্লেক্স।
আরও পড়ুন
সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?
উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন
Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে বিতর্কে এ আর রহমান
উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন
উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন