এক বাটি পাস্তা আপনাকে হাসি-খুশি করে তুলতে পারে – বিজ্ঞানও তাই বলছে!

উত্তরাপথঃ ইতালির পিৎজার পরেই যদি কোনো খাবার বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে, তবে সেটা নিশ্চয়ই পাস্তা! এমন কোনো রান্নাঘর পাওয়া মুশকিল, যেখানে পাস্তার ঝাঁঝালো, চিজে ঢাকা সসের গন্ধ ভেসে বেড়ায় না। কিন্তু কেন এত জনপ্রিয় এই পাস্তা? স্বাস্থ্যকর বলে? না, রান্না করা সহজ বলে? আমাদের মতে, এর সুস্বাদু স্বাদ আর সেই আঠালো, চিজি সসের কম্বোই আমাদের বারবার পাস্তার প্রেমে ফেলে। বলতে গেলে, এক বাটি পাস্তা যেন মুখে হাসি আর মনে খুশির ঝড় তোলে! আর এখন তো বিজ্ঞানও এই কথায় সিলমোহর দিয়েছে। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন! ইতালির ফ্রি ইউনিভার্সিটি অফ ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কমিউনিকেশনস IULM-এর “বিহেভিয়রাল অ্যান্ড ব্রেন ল্যাব”-এর একদল গবেষক বলছেন, “পাস্তা খেলে মানুষের মেজাজ ফুরফুরে হয় আর হাসিখুশি ভাব বাড়ে।” চলুন, ব্যাপারটা একটু খোলসা করে বলি।

পাস্তা আর খুশি: এই দুয়ের মাঝে লুকানো রহস্যটা কী?

গবেষকরা পাস্তা খাওয়ার সময় মানুষের মন আর মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়া নিয়ে কিছু মজার তথ্য বের করেছেন। ইন্টারন্যাশনাল পাস্তা অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ২৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সী ৪০ জন (২০ জন পুরুষ, ২০ জন মহিলা) খাদ্য এলার্জি-মুক্ত মানুষের উপর এই গবেষণা চালানো হয়। তারা পাস্তা খাওয়ার সময় মানুষের মানসিক প্রতিক্রিয়াকে তুলনা করেছেন তাদের প্রিয় কাজের সঙ্গে – যেমন গান শোনা, খেলা দেখা ইত্যাদি। আর ফলাফল? একেবারে চমকপ্রদ!

গবেষণায় দেখা গেছে, পাস্তা খাওয়া একটা ইতিবাচক মানসিক অবস্থা তৈরি করে, যা গান শোনা বা খেলা দেখার মতো কাজের সমান, বা কখনো কখনো তার চেয়েও বেশী! এমনকি, আপনার প্রিয় পাস্তার স্বাদ নেওয়ার অভিজ্ঞতা আপনার সুখের স্মৃতি ফিরিয়ে আনার মতোই।

কিভাবে পরীক্ষা হলো? চারটে মজার প্যারামিটার:

১. মেমরি ইনডেক্স : পাস্তা খাওয়ার সময় মানুষের স্মৃতিশক্তি গান বা খেলার তুলনায় বেশি সক্রিয় হয়। মানে, পাস্তা যেন একটা স্মৃতির টাইম মেশিন!

২. এনগেজমেন্ট ইনডেক্স : পাস্তাই সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয়। গান বা খেলার চেয়েও পাস্তার আকর্ষণ মানুষের কাছে বেশী।

৩. ইমোশনাল ইনডেক্স: পাস্তা গানের মতোই ইতিবাচক আবেগ জাগায় এবং খেলার চেয়েও এগিয়ে। এক কামড় পাস্তা, আর মুখে হাসি!

৪. হ্যাপিনেস ইনডেক্স : এখানেও পাস্তা আপনার প্রিয় গানের সমকক্ষ, আর খেলার চেয়ে অনেক এগিয়ে।

নিউরোমার্কেটিং ব্রেন ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা ভিনচেনজো রুসো বলেন, “পাস্তা খাওয়ার সময় আমরা সবচেয়ে বেশি আবেগপ্রবণ হই। ধীরে-সুস্থে উপভোগ করে খেলে, সুখের স্মৃতি আর ইতিবাচক ভাবনা জেগে ওঠে।” তাই পাস্তার প্রতিটি কামড়ে যেন একটু করে খুশি মেশানো!

এখন যখন জানলেন পাস্তা খুশির চাবিকাঠি, তাহলে আর দেরি কেন? আপনার খাদ্যতালিকায় পাস্তাকে জায়গা করে দিন। তবে হ্যাঁ, মনে রাখবেন, বেশি খেলে কিন্তু ফিগার আর হেলথ দুটোই বিগড়ে যেতে পারে। তাই পরিমিতভাবে, মন দিয়ে উপভোগ করুন।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে

উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর  প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন

সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top